এছাড়াও রাজধানীর গুলিস্তান কমপ্লেক্সের নিচে চকচকে নোটের পসরা বসিয়ে প্রকাশ্যেই চলছে নতুন নোটের রমরমা ব্যবসা। যেখানে কোনো ব্যাংকেই নতুন নোটের দেখা মিলছে না সেখানে ফুটপাতে এত নোট এলো কীভাবে- তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।
প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের অন্য অফিসগুলো থেকে এই নোটগুলো ইস্যু করা হয়। রোববার মোট ১১ ব্যাংকের মাধ্যমে বাজারে ছাড়া হয় প্রায় ২০০ কোটি টাকা।
তবে গ্রাহকরা তা হাতে পাওয়ার কথা ছিল সোমবার থেকে। এসব ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে- সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, উত্তরা ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, ডাচ বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক এবং ইস্টার্ন ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, এসব ব্যাংকের লোকাল অফিসকে নতুন টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে কোন ব্যাংক কোন শাখার মাধ্যমে নতুন টাকা বিতরণ করবে, তা নিজেরাই ঠিক করবে ব্যাংকগুলো। কিন্তু সোমবার থেকে কোনো এসব ব্যাংকের প্রধান শাখাগুলোতে গিয়ে মিলেনি নতুন টাকা। অথচ সেদিন থেকেই ফুটপাতে অবাধে বিক্রি হচ্ছে এসব নোট।
মঙ্গল ও বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের উত্তর গেটে দেখা যায়, ফড়িয়ারা নতুন এক হাজার, ৫০ ও ২০ টাকার নোটের পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। গ্রাহকদেরও ভিড় লেগে আছে এসব কথিত টাকার দোকানে।
অবাক করার বিষয় হলো, প্রতি বিশ টাকার নোট বিক্রি হচ্ছে প্রায় দ্বিগুণ দামে। এক বান্ডিল নোট অর্থাৎ ১০০টি নোট বিক্রি হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায়। আর ১০-২০টি নোট নিলে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা করে। আর নতুন নকশার ৫০ টাকার নোটের বান্ডিল বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ছয় থেকে সাত হাজার টাকায়। অর্থাৎ পাঁচ হাজার টাকা কিনতে হচ্ছে সাত হাজার টাকায়। আর ১০-২০টি নোট কিনতে গেলে দাম নিচ্ছে প্রতি নোট ৭০-৮০ টাকা করে।
জয়নাল নামে এক ক্রেতা বলেন, দুই দিন ধরে ব্যাংকে গিয়ে নতুন নোট পাচ্ছি না। অথচ ব্যাংকে পাওয়া না গেলেও ফুটপাতে মিলছে নতুন টাকা। দামও অনেক বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংকের নাকের ডগায় এসব অবৈধ ব্যবসা চললেও দেখার কেউ নেই।
আরাফাত নামে আরেকজন বলেন, ফুটপাতে এত নতুন নোট কীভাবে এলো। প্রকাশ্যে এভাবে টাকার ব্যবসা এটা কীভাবে সম্ভব? দেশে আইন কানুন কি কিছুই নাই? এসব টাকা তারা কীভাবে পায় এসব জানতে তো আর রকেট-সাইন্স জানা লাগে না। ব্যাংকের কর্মচারী-কর্মকর্তারাই এই টাকা ফুটপাতে ছেড়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিক্রেতা বলেন, আমরা কমিশন দিয়ে টাকা কিনি। এজন্য কিছু বেশি রেটে বিক্রি করতে হয়। এক হাজার টাকার একটা বান্ডিলে অতিরিক্ত দশ হাজার টাকা নেওয়া হয়। তবে ৫০ ও ২০ টাকার নোটের চাহিদা বেশি। আমাদের কিনতেও বেশি পড়ে যায়।
বুধবার (৪ জুন) সোনালী ব্যাংকের প্রিন্সিপাল ব্রঞ্চে গিয়ে দেখা যায়, অনেক গ্রাহক নতুন টাকার জন্য ভিড় করছেন। টাকা না পেয়ে ফেরত যাচ্ছেন। নতুন টাকার নোটের চাহিদায় বেশ চাপের কথা জানাচ্ছেন এখানকার কর্মকর্তারা। একই অবস্থা দেখা যায় অন্যান্য ব্যাংকের শাখাগুলোতেও।
এবিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান ঢাকা মেইলকে বলেন, আমাদের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের ভেতরেই এর বাইরে আমরা কিছু করতে পারি না। বাংলাদেশ ব্যাংকের বাইরে টাকা বিক্রি হলে এর দায়িত্ব প্রশাসনের। যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা এসব কাজে জড়িত থাকে আমাদের একটু জানালেই আমরা ব্যবস্থা নেব। আমরাও চাই এসব বন্ধ হোক।
একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেন, ‘আমাদের অল্প কিছু নতুন নোট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এক হাজার টাকার নোটই বেশি। আমি এমডি হয়েও এখন পর্যন্ত নতুন টাকার নোট চোখে দেখলাম না। আর সেখানে ফুটপাতে বিক্রি হচ্ছে এটা কেমন কথা।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘কিছু অসাধু কর্মচারী আছে যারা এসব কাজ করে আসছে। এটি একটি চক্র গড়ে উঠেছে। সব সময় তারা এই কাজ করে থাকে।’
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রথমে ২০, ৫০, ১০০০ টাকার নতুন নোটের নকশা প্রকাশ করলেও পরে সব নোটের নকশা প্রকাশ করে। ‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য’- শীর্ষক এই নকশার মধ্যে রয়েছে ৫০০, ২০০, ১০০ ও ১০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোট এবং ৫ ও ২ টাকা মূল্যমান কারেন্সি নোট।
গত রোববার বাংলাদেশ ব্যাংকের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে হয়েছে- বাংলাদেশ ব্যাংক ‘বাংলাদেশের ঐতিহাসিক এবং প্রত্নতাত্ত্বিক স্থাপত্য’- শীর্ষক নতুন ডিজাইন ও সিরিজের সকল মূল্যমানের (১০০০, ৫০০, ২০০, ১০০, ৫০, ২০, ১০, ৫ ও ২ টাকা) নতুন নোট মুদ্রণের কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান হাবিব মনসুর স্বাক্ষরিত নতুন ডিজাইন ও সিরিজের ১০০০, ৫০ ও ২০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোট ১ জুন ২০২৫ তারিখ থেকে প্রথমবারের মতো বাজারে প্রচলনে দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও ৫০০, ২০০, ১০০ ও ১০ টাকা মূল্যমান ব্যাংক নোট এবং ৫ ও ২ টাকা মূল্যমান কারেন্সি নোট পর্যায়ক্রমে বাজারে প্রচলনে দেওয়া হবে।