বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে রপ্তানিকৃত পণ্য নিয়ে বিপাকে পড়েছেন রপ্তানিকারকরা। প্রতিদিন যে পরিমাণ ট্রাক আসছে তার অর্ধেকেরও বেশির ভারতে যাওয়ার অনুমতি মিলছে না। ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় প্রায় দেড় হাজার রপ্তানি পণ্যবোঝাই ট্রাক ১৮ দিন ধরে বেনাপোল বন্দরসহ আশপাশের প্রধান সড়কে অবস্থান করছে। বেনাপোল চেকপোস্ট রপ্তানি গেট থেকে শার্শা উপজেলা সদর পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার কিলোমিটার সড়ক যানজটের কবলে। ফলে এলাকাবাসীসহ পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছেই।
জানা গেছে, প্রতিদিন ৪০০ পণ্যবোঝাই ট্রাক বেনাপোল আসলেও ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে জায়গা সংকটের কারণ দেখিয়ে মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক বন্দরে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে। এতে রপ্তানি বাণিজ্যে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিদিন ট্রাকে অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে রপ্তানিকারকদের। স্থানীয় সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এ সংকট কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হচ্ছে। ভারত প্রতিদিন এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে ৩৫০ থেকে ৪০০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি করলেও বাংলাদেশি পণ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা বরাবরই নানা সমস্যা সৃষ্টি করে। ভারত আগে রপ্তানিবোঝই ১৫০ থেকে ২৫০ ট্রাক গ্রহণ করলেও এখন ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক গ্রহণ করছে। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা বিরাজ করলেও সমস্যা নিরসনে প্রশাসনের কোনো মাথাব্যথা নেই।
আটকে থাকা রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকের কারণে সড়কে রিকশা-ভ্যানও যাতায়াত করতে পারছে না। অনেকে শার্শা সদর থেকে হেঁটে চেকপোস্টে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। বিশেষ করে রোগী, নারী ও শিশুদের কষ্টের শেষ নেই। এ অবস্থায় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দরে রপ্তানি বাণিজ্য রাত ১১টা পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হলেও সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। সরেজমিনে গত রবিবার ঘুরে দেখা গেছে, যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ওপর যত্রতত্র পণ্যবোঝাই দেড় হাজারের বেশি ট্রাক ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। জায়গা না থাকায় ভারতের পেট্রাপোল স্থলবন্দর থেকে আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাকও বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারছে না।
ব্যবসায়ীরা জানান, বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন পণ্য নিয়ে যত ট্রাক ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে যায়, সেগুলোর স্থান সংকুলান করতে পারছে না সেখানকার বন্দর কর্তৃপক্ষ। কারণ, সেখানেও পণ্য নিয়ে বাংলাদেশমুখী প্রায় ১ হাজার ২০০ ট্রাক দাঁড়িয়ে আছে। বেনাপোল ট্রাক-লরি শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শাহীন জানান, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে সয়াবিনের ভুসি, পাট ও পাটজাত দ্রব্য এবং গার্মেন্টস পণ্য, সাবান, ব্যাটারি, গার্মেন্টস ঝুট ভারতে রপ্তানি হচ্ছে। প্রতিদিন এসব পণ্য নিয়ে প্রায় ৪০০ ট্রাক ভারতে প্রবেশের জন্য বেনাপোল বন্দরে আসছে। কিন্তু পেট্রাপোল বন্দরে যেতে না পারায় বেনাপোল বন্দর এলাকায় তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া বেনাপোল বন্দরে রপ্তানি পণ্যের ট্রাক রাখার কোনো টার্মিনাল নেই।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ অ্যাজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে প্রতিদিন প্রচুর পরিমাণে পণ্য রপ্তানি হচ্ছে ভারতে। প্রায় ৪০০ ট্রাক ভারতে প্রবেশের জন্য বেনাপোল বন্দরে আসছে। কিন্তু ভারতীয় কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন নিচ্ছে মাত্র ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক। বেনাপোল বাজার, বন্দর কাস্টমস এলাকাসহ সব এলাকা রপ্তানি গাড়িতে ভরে গেছে। দুই দেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আমাদের বৈঠক আছে। বিষয়গুলো নিয়ে সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি।
বেনাপোল বন্দরের উপপরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার জানান, বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরের সঙ্গে আমদানি পণ্যের পাশাপাশি পণ্য রপ্তানি বেড়েছে দ্বিগুণ। এখন প্রায় ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০টি পণ্যবোঝাই ট্রাক ভারতে প্রবেশের অপেক্ষায় বেনাপোল বন্দরে অবস্থান করছে। এতে বন্দর এলাকায় আমদানি-রপ্তানি পণ্য খালাসে ব্যাহত হচ্ছে। তিনি আরো জানান, রপ্তানি বাণিজ্য আরো গতিশীল করতে সম্প্রতি ভারতের পেট্রাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। ওরা প্রতিদিন সকল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত দুই শতাধিক রপ্তানি পণ্যের ট্রাক নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।