জোর করে কিডনি ট্রান্সফারের জন্য বেনাপোল দিয়ে ভারতে পাঠানো হচ্ছিল সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার ঢুকুরিয়াবেড়া গ্রামের মোহাম্মাদ ইউনুছ আলীকে (৩৬)। তিনি ঢাকার একটি পোশাক কারখানায় কাজ করেন। চাকরির কথা বলে প্রথমে তাকে ভারতে যাওয়ার জন্য রাজি করা হলেও পরে ইউনুছ বিষয়টি বুঝতে পারেন। এতে রাজি না হলে তাকে অস্ত্র দিয়ে ভয় দেখিয়ে ঢাকা থেকে বেনাপোলে নিয়ে যাওয়া হয়।
এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সকাল ১১টার দিকে বেনাপোল ইমিগ্রেশন থেকে পাচার চক্রের সদস্য আনিছুর রহমানকে আটক করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। এ ঘটনায় বিজিবিকে সহায়তা করে আর্মড পুলিশ। আটক আনিছুরের বাড়ি গাজীপুরে।
এ সময় ভুক্তভোগী ইউনুছের লাগেজ থেকে কুমিল্লার এক নারীর পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে বিজিবি জানায়, কাজের প্রলোভন দেখিয়ে ইউনুছকে ভারতে পাচার করা হচ্ছিল কিডনি ট্রান্সফারের জন্য। ইউনুছকে বলা হয়েছিল দেশটিতে এক বছর কাজ করলে তাকে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা দেয়া হবে।
ভুক্তভোগী ইউনুছ আলী বলেন, ‘আমাকে এক বছরে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকার কাজের চুক্তিতে ভারতে পাঠাবে বলে আনিছুরের সঙ্গে চুক্তি হয়। এরপর আমি জানতে পারি আমার শরীর থেকে কিডনি পাচার করা হবে। বিষয়টি জানার পর বুধবার রাতে ভারত যেতে অসম্মতি জানালে ঢাকার একটি আবাসিক ভবনে নিয়ে গিয়ে আমার মাথায় পিস্তল ঠেকানো হয়। তারপর বৃহস্পতিবার ঢাকা থেকে বিমানে করে যশোর নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে বেনাপোলে আসার পর আমি বিজিবির কাছে বিষয়টি খুলে বলি।’
তিনি আরও বলেন, ‘সীমান্তের ওপার থেকে আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট ভারতীয়রা পেট্রোপোল চেকপোস্টে অপেক্ষা করছিল।’ এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ইউনুছের বাবা ইদ্রিস আলীকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার ছেলে ঢাকায় একটি গার্মেন্টসে চাকরি করে। তাকে ভারতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
পাচারে অভিযুক্ত আনিছুর রহমান বলেন, ‘ইউনুছের সঙ্গে কিডনি দেয়ার বিষয়ে ওই টাকায় কোম্পানির চুক্তি হয়। সে মোতাবেক তাকে আমি বেনাপোল এগিয়ে দেয়ার জন্য নিয়ে এসেছি। কোম্পানির অফিস রাজধানীর মিরপুর-২ নম্বরে।’ তবে তিনি কোম্পানির নাম বলেননি।
এ বিষয়ে বেনাপোল চেকপোস্ট বিজিবি ক্যাম্পের সুবেদার আশরাফ আলী বলেন, ‘তাদের দুজনকে ক্যাম্পে আনা হয়েছে। ব্যাটালিয়ন কমান্ডিং অফিসারের নির্দেশে তদন্ত চলছে। অভিযুক্ত কিডনি পাচারে সম্পৃক্ত থাকলে মামলা করে তাকে থানায় সোপর্দ করা হবে।’