আগামী ২০ এপ্রিল থেকে শুরু হবে ঈদ উল ফিতরের ছুটি। কিন্তু এখনো দেশের ৬৬টি কল-কারখানা শ্রমিক মার্চ মাসের বেতন পায়নি। এছাড়া ৮ হাজার ৩৩২ কারখানায় ঈদ উল ফিতরের বোনাস দেওয়া হয়নি। কারখানার মালিকরা বলছেন, ঈদের আগেই সব বেতন-বোনাস পরিশোধ করা হবে। অন্যদিকে শ্রমিকদের দাবি, ছুটি পর্যন্ত অপেক্ষা না করে দ্রুত বেতন-বোনাস দেওয়া হোক।
সূত্র মতে, তৈরি পোশাকসহ দেশে মোট সাড়ে ৯ হাজার কল-কারখানা রয়েছে। এসব কারখানার মধ্যে ৯৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কারখানায় শ্রমিকেদের বেতন দেওয়া হয়েছে। ঈদের বোনাসও দেওয়া শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার (১৩ এপ্রিল) পর্যন্ত ১৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ কারখানায় বোনাস দেওয়া হয়েছে।
অর্থাৎ ৮৬ দশমিক ৬৫ শতাংশ কারখানায় শ্রমিকদের বোনাস দেওয়া বাকি রয়েছে। এই কারখানার শ্রমিকদের ঈদের ছুটির আগেই বেতন ও বোনাস পরিশোধ করা হবে।
বাংলাদেশ শিল্পাঞ্চল পুলিশ, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ, বিটিএমইএ, বেপজা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, দেশের ৯ হাজার ৫৪৪টি কল-কারখানার মধ্যে সর্বশেষ মার্চ মাসের শ্রমিকদের বেতন দিয়েছে ৯ হজার ৪৭৮টি কল-কারখানা। অর্থাৎ ৬৬টি কল-কারখানায় মার্চ মাসের বেতন হয়নি। আর বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৯৯ দশমিক ৩১ শতাংশ কারখানায়।
বিজিএমই’র সদস্যভুক্ত ১৬২৭টি কারখানার মধ্যে ১৬০৮টি বেতন দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ১৯টি কারখানায় এখনো বেতন হয়নি। একইভাবে বিকেএমইএর ৯টি, বিটিএমএর ৩টি, বেপজার ২টি এবং অনান্য ৩৩টি কল-কারখানায় বেতন দেওয়া হয়নি।
আর ৯ হাজার ৬১৬টি কল-কারখানার মধ্যে শ্রমিকদের ঈদের বোনাস দিয়েছে মাত্র ১২৮৪টি কারখানায়। অর্থাৎ ৮ হাজার ৩৩২টি কারখানায় বোনাস হয়নি।
এখনো বোনাস না দেয়নি এমন কারখানার মধ্যে বিজিএমই’র সদস্যভুক্ত প্রতিষ্ঠান বেশি। এখাতের ১৬৩১টির মধ্যে বোনাস পেয়েছে মাত্র ৭৬টি কারখানার শ্রমিক। বাকি ১৫৫৫টি কারখানার শ্রমিকরা বোনাস পায়নি।
একইভাবে বিকেএমইর ৭০০টির মধ্যে বোনাস পায়নি ৬৪৬টির। বিটিএমএ ৩৫৮টির মধ্যে বোনাস হয়নি ৩৪৩টির। বেপজার ৩৪৫টি কারখানার মধ্যে বোনাস হয়নি ২৯৮টির।
অপরদিকে পাটকল খাতের ৮৩টি কল-কারখানার মধ্যে ৭০টির বোনাস পায়নি শ্রমিকরা। এছাড়াও অন্যান্য খাতের ৬ হাজার ৪৯৯টি কারখানার মধ্যে বোনাস হয়নি ৫ হাজার ৪১৮টির। সব মিলে ৮ হাজার ৩৩২টি কারখানায় বোনাস হয়নি।
এ বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিকদের প্রধান সংগঠন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, এপ্রিল প্রথম সপ্তাহ থেকে মার্চ মাসের বেতন দেওয়া শুরু হয়েছে বিজিএমইএ সদস্যভুক্ত কারখানায়। আমাদের অধিকাংশ কারখানায় বেতন দেওয়া হয়েছে। বাকি বেতনও ঈদের ছুটির আগেই দিয়ে দিবে কারখানা মালিকরা। ছুটির আগের বেশকিছু কারখানায় এপ্রিল মাসের বেতনও দেওয়া হবে প্রত্যাশা করেন তিনি।
বোনাসের বিষয়ে তিনি বলেন, মালিকরা বোনাস এখনো সেভাবে দেওয়া শুরু করেনি। তবে ঈদের ছুটির আগেই বেতনের পাশাপাশি বোনাসও দেয়া হবে। আশা করছি কোনো কারখানার মালিকই বেতন ও বোনাস না দিয়ে ঈদের ছুটিতে যাবে না।
বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদউল্লাহ আজিম বলেন, বেতন দেওয়া হয়েছে প্রায় সব কারখানায়। সে হিসেবে এখনো বোনাস দেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, বোনাস দিয়ে কারখানাগুলো শ্রমিকদের ঈদের ছুটি দিয়ে দিবে।
নিটওয়্যার কারখানা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বিকেএমইর সদস্যভুক্ত সক্রিয় কারখানা সংখ্যা ৯০০ প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানগুলোর ৯০ শতাংশ শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন পরিশোধ করেছে। আর বোনাস পরিশোধ করেছে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।
তিনি বলেন, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে কিছু শ্রমিক নেতাদের ইন্ধনে গাজীপুরসহ দুয়েকটি কারখানায় শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। আমরা তাদের বলেছি, ঈদের আগেই বেতন ও বোনাস দেওয়া হবে কিন্তু তারপরও বেতনের জন্য অন্দোলন করছে।
পোশাক কারখানা শ্রমিকদের সংগঠন বাংলাদেশ-জাতীয় গামেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি বলেন, বেতন ও বোনাস চলমান রয়েছে। শ্রমিকদের বেতন-বোনাস দিচ্ছে কারখানাগুলো।
তিনি বলেন, আজকে পর্যন্ত ৬৫ শতাংশ কারখানার শ্রমিক বেতন পেয়েছে। আর বোনাস দেওয়া এখনো সেভাবে শুরু করেনি। কিছু প্রতিষ্ঠান বোনাস দেওয়া শুরু করেছে। আশা করছি, ছুটির আগের বোনাস দিয়ে দেবে কারখানাগুলো।
এবার বেতন-বোনাস নিয়ে বড় ধরনের কোনো ঝামেলা হবে না। এখন পর্যন্ত গাজীপুরের ক্রসলাইন নামে একটি কারখানায় বেতন নিয়ে শ্রকিদের সঙ্গে সমস্যা হয়েছে বলে শুনেছি। আশা করছি এটিও সুরাহা হয়ে যাবে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মাহবুবুর রহমান ইসমাইল বলেন, বেশির ভাগ কারখানায় বোনাস হয়নি। বেতনের পাশাপাশি দ্রুত বোনাস দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
গামেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকরার বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে সরকারি ছুটি হচ্ছে ১৯ এপ্রিল থেকে তাই কারখানা মালিকদের কাছে আমাদের দাবি ছিল ১৮ এপ্রিলের মধ্যে বেতন ও বোনাস দিয়ে দেওয়ার জন্য। তিনি বলেন, এরপর ব্যাংক বন্ধ থাকবে ফলে শ্রমিকদের জন্য সমস্যার সৃষ্টি হবে।