বরিশালের বানারীপাড়ায় রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আজিজুল হক হাওলাদারের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় নিজ প্রতিষ্ঠিত আজিজুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই পারিবারিক করব স্থানে দাফন করা হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আজিজুল হক হাওলাদার (৭৩) উপজেলার বিশারকান্দি শেরে বাংলা ডিগ্রি কলেজ, আজিজুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দারুসুন্নাত জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা এবং বৈঠাকাটা কলেজ ও তালুকদার পাড়া জামে মসজিদের দাতা সদস্য। তিনি সাবেক বিভাগীয় কর কমিশনার।
এ ব্যাপারে বানারীপাড়া থানার ওসি শো.হেলাল উদ্দিন যুগান্তরকে জানান, পারিবারিকভাবে তাদেরকে মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আজিজুল হকের জানাজা সকাল ১০টার পরে হওয়ার কথা জানানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী তিনি এসআই শফিকুল ইসলামকে প্রয়োজনীয় ফোর্স নিয়ে সেখানে পৌঁছে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আজিজুল হককে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সালামি দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এসআই শফিকুল ইসলাম সেখানে পৌঁছার পূর্বেই পারিবারিকভাবে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আজিজুল হকের জানাজা সকাল ১০টার পরিবর্তে তারা ১ ঘণ্টা এগিয়ে নিয়ে সকাল ৯টায় জানাজা শেষে দাফন করা হয়। এ কারণে তাকে দাফনের পূর্বে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সালামি দেয়া যায়নি বলে তিনি জানান।
এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করে মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আজিজুল হকের ভাতিজা ও বিশারকান্দি ইউনিয়ন ছাত্র লীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক মো.সাইদুল হক জানান, তার চাচা বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল হক দীর্ঘ দিন ধরে ডায়াবেটিস ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন ছিলেন। রোববার বিকাল সাড়ে ৫টায় তিনি ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহে… রাজিউন)।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী (আজিজুল হক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি) মোসাম্মৎ জাকিয়া হক, ১ ছেলে জাবিউল হক সাকিল ও ১ মেয়ে আফরোজা হক রিধি (বর্তমানে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী) এবং নাতি-নাতনীসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে আয়সা মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল লাইফ সাপোর্টে থাকার সময় শরীরে ডাইলোসিস্ট ও ফিস্টুলা করায় পানি জমে যায়।
তিনি জানান, তার মৃত্যুর পর লাশ দীর্ঘ সময় কফিনে থাকার কারণে ওই পানি বেড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় এবং অযথা সময় ক্ষেপণ না করে তারা তার চাচা মরহুম আজিজুল হকের লাশ পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার সকাল ৯টার পরিবর্তে সকাল সাড়ে ৯টায় জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করেন।
তিনি আরও জানান, মরহুম আজিজুল হকের জানাজার পূর্বে তার একমাত্র ছেলে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী জাবিউল হক সাকিল মোবাইল ফোনে ও বিশারকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম সান্ত প্রমুখ বক্তৃতা করেন। এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আজিজুল হক হাওলাদারের সালামি দিতে যাওয়া এসআই শফিকুল ইসলাম যুগান্তরকে জানান, তিনি বিশারকান্দি এলাকায় পৌঁছার পূর্বেই মোবাইল ফোনে জানতে পারেন, জানাজা শেষ হয়ে গেছে। এ সময় তিনি ওই এলাকার কাছে পৌঁছে যাওয়ার কারণে সেখানে যান এবং মরহুমের পরিবারের ও এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে দীর্ঘ সময় পর সেখান থেকে থানায় ফিরে আসেন।
অপরদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন কুমার সাহা যুগান্তরকে জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আজিজুল হক হাওলাদারকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সালামি দেয়ার ব্যাপারে ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে কোন ধরনের ইনফরমেশন দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে বিশারকান্দি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শহিদুল ইসলামকে মোবাইল ফোনে না পাওয়ায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মীর শাহ জাহান যুগান্তরকে জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা মো.আজিজুল হক হাওলাদারকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সালামি না দেওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
তিনি বলেন, এর পূর্বে বানারীপাড়া উপজেলার কোনো একজন মুক্তিযোদ্ধা ইন্তেকাল করলে প্রথমে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা আমাকে জানাতেন এবং পরে আমি ওই মুক্তিযোদ্ধাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে খবর দিতাম। সে অনুযায়ী পরবর্তীতে সময় আমরা সেখানে গিয়ে ওই মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে সমবেদনা জানাতাম এবং তার জানাজার উপস্থিত থাকতাম। এ ক্ষেত্রে বিশারকান্দি ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শহিদুল ইসলাম আমাদেরকে খবর দেননি বলেও তিনি জানান।