মাত্র ১৭ বছর বয়সেই বিশ্বের সেরা দাবাড়ু হওয়ার পথে ভারতীয় দাবাড়ু গ্র্যান্ডমাস্টার গুকেশ ডোম্মারাজু। কানাডার টরেন্টোতে ক্যান্ডিডেটস দাবায় চ্যাম্পিয়ন হওয়া গুকেশ চলতি বছরের শেষ দিকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে চীনের ডি লিয়ানের সঙ্গে খেলবেন। ডি লিয়ানকে হারালে কিশোর গুকেশ পরবর্তী দুই বছরের জন্য বিশ্বের চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু।
বিশ্বমানের এমন দাবাড়ু বাংলাদেশ প্রিমিয়ার বিভাগ দাবা খেলেছেন টানা দুই বছর। ২০২১ সালে বাংলাদেশ বিমান এবং ২০২২ সালে বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে খেলেছেন। টানা দুই বার বাংলাদেশে খেলে যাওয়ায় বাংলাদেশি দাবাড়–দের সঙ্গে ভালোই সখ্যতা গুকেশের। ২০২৩ সালে চীনের হাংজু এশিয়ান গেমসেও বাংলাদেশি দাবাড়ুদের সঙ্গে সময় কেটেছে তার।
গুকেশের বাংলাদেশে আসার অন্যতম মাধ্যম ছিলেন গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব। তাদের এক সময়ের সতীর্থ এখন বিশ্বের সেরা দাবাড়ুর লড়াইয়ে তাই বেশ রোমাঞ্চিত তিনি, ‘গুকেশ অত্যন্ত সম্ভাবনাময়ী সেটা আমি আচ করেছিলাম। খেলার ফলাফলের পাশাপাশি দাবাড়–র পরিপক্বতা ও গভীরতা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। গুকেশের প্রতিটি চাল অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত এবং উচ্চ পরিকল্পিত। খুবই ভালো লাগছে আমাদের সঙ্গে খেলা গুকেশ এখন বিশ্ব দাবার বড় নাম।’
বাংলাদেশ বিমানে দুর্দান্ত খেলেছিলেন ভারতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার। তাই পরের বছর আরেকটু বেশি বাজেটে তাকে বাংলাদেশ পুলিশ দলে নিয়েছিল। পুলিশে খেলা বাংলাদেশি গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান গুকেশ সম্পর্কে বলেন, ‘২০২২ সালে বাংলাদেশের দাবাড়ু ও সাংবাদিকদের বলেছিলাম, ‘গুকেশ একদিন পৃথিবীর বড় খেলোয়াড় হবে’ সেটাই হয়েছে।’
অন্যরা ভবিষ্যতবাণী করলেও গুকেশের মধ্যেও আত্মবিশ্বাস ছিল, ‘সে মাত্র ১২ বছরে গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েছে। পুলিশে যখন খেলতে এসেছিল ২০২২ সালে তখনই তার মধ্যে স্বপ্ন ছিল ২৭০০ রেটিং করার এবং বিশ্ব সেরা হওয়ার। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন প্রায় করেই ফেলেছে’ বলেন জিয়া। স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেক অধ্যবসায় ও ত্যাগ প্রয়োজন। গুকেশের ত্যাগ সম্পর্কে জিয়া বলেন, ‘এখন উঠতি বয়সে অনেক ক্রীড়াবিদই সামাজিক মাধ্যম ও ইন্টারনেটে প্রচুর সময় কাটায়। গুকেশের সাথে যখন আমার পরিচয় তখন তার কোনো সামাজিক মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট ছিল না। পড়াশোনা আর দাবাই তার ধ্যানজ্ঞান ছিল।’
বুদ্ধিনির্ভর খেলা দাবায় দুই সেরা দাবাড়ুর লড়াই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ ম্যাচই দাবার সর্বোচ্চ স্তর। বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ দুই জন দাবাড়ু খেলেন। যিনি চ্যাম্পিয়ন হন তিনি পরের বছর পুনরায় এই ম্যাচ খেলার সুযোগ পান। আর যিনি হেরে যান তাকে ক্যান্ডিডেটস টুর্নামেন্ট খেলতে হয়। ক্যান্ডিডেট টুর্নামেন্টে বিশ্বকাপ দাবার শীর্ষ তিন খেলোয়াড়, সর্বোচ্চ রেটিংধারী, গ্র্যান্ড সুইস, গ্র্যান্ড পিক্স ও আরো এক টুর্নামেন্টের বিজয়ীর মাধ্যমে আট জন ক্যান্ডিডেটস দাবায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই আট জনের মধ্যে যিনি চ্যাম্পিয়ন হন তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপ খেলার সুযোগ পান।
বাংলাদেশের দাবার সর্বকনিষ্ঠ গ্র্যান্ডমাস্টার এনামুল হোসেন রাজীব বিশ্ব দাবা সংস্থার টুর্নামেন্টের নামকরণের পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে মনে করেন, ‘দাবায় বিশ্বকাপ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই সেটাকেই সর্বোচ্চ পর্যায় মনে করে অনেকে। কিন্তু এটি মূলত তৃতীয় স্তর। বিশ্বকাপ দাবা খেলে ক্যান্ডিডেটস দাবায় জায়গা করে নিতে হয়। ক্যান্ডিডেট দাবার চ্যাম্পিয়ন খেলার সুযোগ পায় বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপে। বিশ্বকাপ ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশীপের তফাৎ অনেকের পক্ষে বোঝা কঠিন। তাই ফিদের উচিত নাম পরিবর্তন করার।’
বাংলাদেশের দাবাড়ুরা বিশ্বকাপ দাবায় অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশের জাতীয় দাবা চ্যাম্পিয়ন বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পান। বাংলাদেশের দাবাড়ুদের বিশ্বকাপ দাবায় সর্বোচ্চ ফলাফল রাজীবের। তিনিই একমাত্র এক ধাপ পেরিয়ে পরের ধাপে গিয়েছিলেন। অন্যরা প্রথম পর্বেই বিদায় নেন। বিশ্বকাপ দাবা দুই বছর পর পর অনুষ্ঠিত হয়।