চলতি বছর বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহরের তালিকার শীর্ষ স্থানে যৌথভাবে উঠে এসেছে সিঙ্গাপুর এবং সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহর। এরপরই এই তালিকায় দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যয়বহুল শহর নির্বাচিত হয়েছে যথাক্রমে জেনেভা, নিউইয়র্ক এবং হংকং। যুক্তরাজ্যের ইকোনোমিস্ট গ্রুপের প্রতিষ্ঠান ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (ইআইইউ) বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক জরিপের ফলে এই তথ্য জানা গেছে।
ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির কারণে বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যান্য শহরকে পেছনে ফেলে সিঙ্গাপুর এবং জুরিখ এ বছর সবার ওপরে উঠে এসেছে। ইআইইউ সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, বিশ্বজুড়ে জীবনযাত্রার ব্যয় সংক্রান্ত সংকট এখনও শেষ হয়নি।
যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে বিশ্বের ১৭৩টি শহরের পণ্য এবং সেবার মূল্যমানের ভিত্তিতে ব্যয়বহুল শহরের এই তালিকা তৈরি করেছে ইআইইউ। এসব শহরের গত আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বরের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে ইআইইউয়ের এই তালিকা তৈরি করা হয়েছে।।
এতে দেখা গেছে, ওই সময়ে বিশ্বজুড়ে জাহাজে পরিবহনকৃত পণ্য ও অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য-সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের স্থানীয় মুদ্রায় গড়ে সাড়ে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ দাম বেড়েছে পণ্যসামগ্রীর। যদিও পণ্যসামগ্রীর দাম বৃদ্ধির এই হার গত বছরের রেকর্ড ৮ দশমিক এক শতাংশের তুলনায় কমেছে।
ইআইইউয়ের বিশ্বের ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় গত ১১ বছরে নবমবারের মতো র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষে উঠে এসেছে সিঙ্গাপুর। বেশ কিছু পণ্যসামগ্রীর আকাশচুম্বী দামের কারণে শহরটি এই তালিকায় সবার ওপরে জায়গা পেয়েছে।
গত বছরের তুলনায় ছয় ধাপ এগিয়ে সিঙ্গাপুরের সাথে যৌথভাবে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর নির্বাচিত হয়েছে জুরিখ। মুদি, গৃহস্থলীর জিনিসপত্র এবং বিনোদনের পেছনে মানুষের ব্যয় ব্যাপক বৃদ্ধি পাওয়ায় সুইস এই শহর তিন বছর পর শীর্ষে ফিরেছে।
ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যার ওপর কঠোর সরকারি নিয়ন্ত্রণের কারণে নগর রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরে বিশ্বের সর্বোচ্চ পরিবহন ব্যয় করতে হয় জনসাধারণকে। এমনকি তৈরি পোশাক, মুদি এবং কোমল পানীয়র জন্যও সবচেয়ে ব্যয়বহুল শহর সিঙ্গাপুর। তালিকায় দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যয়বহুল শহর নির্বাচিত হয়েছে যথাক্রমে জেনেভা, নিউইয়র্ক এবং হংকং। এরপরই আছে যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেস।
ইকোনোমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের গত বছরের জরিপে বিশ্বের শীর্ষ ব্যয়বহুল শহরের তালিকায় প্রথম স্থানে ছিল ইসরায়েলের তেলআবিব। এ বছর এই তালিকায় কোপেনহেগেনের সাথে যৌথভাবে অষ্টম স্থানে রয়েছে তেল আবিব। সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্সের প্যারিস।
এই তালিকায় রাশিয়ার একাধিক শহরের অবস্থান নিচে নেমে গেছে। র্যাঙ্কিংয়ে সবচেয়ে বেশি পতন হয়েছে রাশিয়ার মস্কো (১৪২তম) এবং সেন্ট পিটার্সবার্গ (১৪৭তম)। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশটির মুদ্রা রুবলের মান কমে যাওয়ায় শহর দুটির অবস্থানের পতন ঘটেছে, বলেছে ইআইইউ। বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা শহর নির্বাচিত হয়েছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। এরপরই আছে ইরানের রাজধানী তেহরান।
ইআইইউ বলছে, অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় পণ্যসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি কিছুটা কম দেখা গেছে এশিয়ায়। ইআইইউয়ের বিশ্বব্যাপী জীবনযাত্রার ব্যয়ের প্রধান উপাসনা দত্ত বলেছেন,‘‘জীবনযাত্রার ব্যয় সংক্রান্ত সংকট এখনও কাটিয়ে ওঠা যায়নি। পণ্যসামগ্রীর মূল্যের মাত্রা ঐতিহাসিক প্রবণতার বেশ ওপরে রয়েছে।’’
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি, ২০২৪ সালে মুদ্রাস্ফীতি আরও কমবে। মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদের হার বৃদ্ধির প্রভাবের কারণে এটা হতে পারে।