করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের মধ্যেই অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের আগাম লক্ষণ দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে। রপ্তানি বৃদ্ধি, শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং দেশে চলমান টিকাদান কর্মসূচির হাত ধরে এই উন্নতির সম্ভাবনা দেখছে বিশ্বব্যাংক। গত মঙ্গলবার প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট- মুভিং ফরোয়ার্ড: কানেক্টিভিটি অ্যান্ড লজিস্টিকস টু স্ট্রেংথেন কম্পেটিটিভনেস’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে দাতা সংস্থাটি।
বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনাভাইরাস মহামারিতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাংলাদেশ। এর প্রভাবে প্রবৃদ্ধির হার কমেছে এবং প্রায় দুই দশকের মধ্যে প্রথমবার দেশে দারিদ্রের হার বেড়েছে। তবে সেই ধাক্কা কাটিয়ে ধারাবাহিকভাবে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতি। ২০২১ অর্থবছরের প্রথমার্ধেই বাংলাদেশের কলকারখানাগুলো ফের চালু হয়েছে, রফতানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। তবে মহামারির কারণে দেশের অর্থনীতি ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির হুমকিতে পড়েছে।
বাংলাদেশের বৃহত্তম দুটি শহর ঢাকা এবং চট্টগ্রামে পরিচালিত সাম্প্রতিক জরিপগুলো চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে শ্রমবাজার পুনরুদ্ধারের দিকে ইঙ্গিত করছে। সেখানে জীবিকা পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং দরিদ্র ও বস্তি এলাকাগুলোতে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে এ অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছে। চট্টগ্রামে গত ফেব্রুয়ারিতেই প্রাপ্তবয়স্কদের কর্মক্ষেত্রে ফেরার হার প্রায় করোনাপূর্ব পর্যায়ে চলে এসেছে।
বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি মিয়াং টেম্বন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অর্থনীতির চেহারা ইতিবাচক। একটি স্থিতিশীল পুনরুদ্ধারের জন্য বাংলাদেশকে সবুজ, স্মার্ট এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে বিশ্বব্যাংক।
‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট’ প্রতিবেদনটি মূলত সাউথ এশিয়া ইকোনমিক ফোকাসের একটি অংশ, যা বছরে দুইবার প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। ওই প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সম্ভাবনাগুলো পরীক্ষা করে এবং বিভিন্ন দেশের নীতিগত চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণ করে সংস্থাটি।
বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আপডেট প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, ২০২১ অর্থবছরে এ দেশে মূল্যস্ফীতি থাকতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৫ দশমিক ৫ লক্ষ্যমাত্রার আশপাশে। আর আর্থিক ঘাটতি থাকতে পারে জিডিপির ছয় শতাংশ।
সংস্থাটির মতে, বাংলাদেশের অর্থনেতিক ঝুঁকি আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ভঙ্গুর দশায় এ দেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং অভিবাসী কর্মীদের কাজের সুযোগ কমে যেতে পারে।
প্রতিবেদনের সহ-লেখক এবং বিশ্বব্যাংকের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ বার্নার্ড হ্যাভেন বলেন, করোনাভাইরাস মহামারি এক অভূতপূর্ব বৈশ্বিক মন্দা সৃষ্টি করেছে। এ অবস্থায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে রক্ষা করতে হবে। তবে কাঠামোগত সংস্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে পারে।