বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। হায়দরাবাদে বিশ্বকাপের অষ্টম ম্যাচে টস জিতে আগে ব্যাট করতে নেমে কুশাল মেন্ডি-সাদিরা সামারাবিক্রমার জোড়া শতকে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৪৪ রানের সংগ্রহ পায় লঙ্কানরা। বিশ্বকাপের ইতিহাসে এমন বড় লক্ষ্যের জয় নেই। তাই ম্যান ইন গ্রিনদের সামনে থাকে ইতিহাস গড়ে জয় তোলার। সেই লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে আবদুল্লাহ শফিক ও মোহাম্মদ রিজওয়ানের শতকে বিশ্বরেকর্ড গড়ে ৬ উইকেটের জয় পায় বাবর আজমের দল।
বিশ্বকাপ ইতিহাসে এত বড় লক্ষ্য তাড়া করে জয়ের রেকর্ড নেই কারও। বিশ্ব আসরে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩২৮ রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ড আছে আয়ারল্যান্ডের। ২০১১ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এ ইতিহাস গড়েছিল আইরিশরা। এবার সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন ইতিহাস গড়ল পাকিস্তান।
শ্রীলঙ্কার দেওয়া ৩৪৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই আউট হয় ইমাম উল হক। ১২ বলে ১২ রান করেন তিনি। দলীয় ৩.৩ ওভারে দিলশান মধুশানাকার বলে কুশল পেরেরা হাতে ক্যাচ তুলে প্যাভিলিয়নের পথে হেঁটেছেন পাকিস্তানি এই ব্যাটার। দ্বিতীয় উইকেটে মাঠে নেমে অধিনায়ক বাবর আজমও নিজের ব্যক্তিগত ইনিংস বড় করতে পারেননি। দলীয় ৭.২ ওভারে মধুশানাকার বলে আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
তৃতীয় উইকেটে ব্যাট করতে নামা রিজওয়ানকে নিয়ে শুরুর ধাক্কা সামল দেন আরেক ওপেনার শফিক। এই দুই জুটি উইকেটে থিতু হয়ে রানের চাকা সচল রাখতে থাকে। শফিক ও রিজওয়ানের ১৫৬ বলে ১৭৬ রানে জুটিতে বিপদ কাটিয়ে এগিয়ে চলে পাকিস্তান। তবে দলীয় ২১৩ রানে শফিক আউট হলে ভাঙে এই জুটি। যাওয়ার আগে তিনি খেলেছেন ১০৩ বলে ১১৩ রানের ইনিংস।
শফিক আউট হলেও এক প্রান্ত আগলে রেখে শাকিলের সঙ্গে ৯৬ রানের জুটি গড়ে জয়ের ভিত তৈরি করে রিজওয়ান। দলীয় ৩০৮ রানে শাকিল আউট হলে ভাঙে এ জুটি। ৩১ বলে ৩০ করেন তিনি। এদিকে দেখেশুনে খেলা রিজওয়ানের ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতকে শেষ পর্যন্ত ইতিহাস গড়ে লঙ্কানদের ৬উইকেটে হারায় পাকিস্তান। ১২১ বলে ১৩১ করে রিজওয়ান ও ইফতেখার আহমেদ ১০ বলে ২২ রান করে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে টসে হেরে ব্যাট করতে নামা শ্রীলঙ্কার হয়ে ইনিংস উদ্বোধনে আসেন পাথুম নিশাঙ্কা ও কুশাল পেরেরা। তবে শুরুটা ভালো হয়নি লঙ্কানদের। শুরুতে ব্যাট করতে নেমে দলীয় ১.৪ ওভারে রানের খাতা খোলার আগে ফিরেন কুশল পেরেরা। হাসান আলীর বলে মোহাম্মদ রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ তুলে বিদায় নিয়েছেন তিনি।
দ্বিতীয় উইকেটে মাঠে নামেন কুশল মেন্ডিস। পাথুম নিশাঙ্কা নিয়ে পাকিস্তান বোলারদের ওপর তান্ডব চালাতে থাকেন কুশাল। একই সঙ্গে রানের চাকা সচল রেখে অর্ধশতকের দেখা পান নিশাঙ্কা। ফিফটির পরে অবশ্য আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। ৬১ বলে ৫১ করেন তিনি। নিশাঙ্কা আউট হলে উইকেটে আসা সাদিরা সামারাবিক্রমাকে নিয়ে ব্যাট হাতে ঝড় তুলতে থাকেন মেন্ডিস।
দেখেশুনে খেলে চাপ কাটিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতরান পূর্ণ করেন তিনি। সেঞ্চুরি করার কিছুক্ষণ পরই আউট হয়েছেন তিনি। যাওয়া আগে ৭৭ বলে ১২২ রানের ইনিংস খেলেছেন এই ডানহাতি ব্যাটার। এরপর মাঠে নামেন চারিথ আসালঙ্কা। তিনিও অবশ্য উইকেটে এসে থিতু পারেননি। দলীয় ২২৯ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। পরে পাঁচে ব্যাট করতে নামা ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে সঙ্গে নিয়ে লঙ্কানদের রানের চাকা সচল রাখেন সাদিরা।
তবে ৬৫ রানের জুটি গড়ে দলীয় ২৯৪ রানে ধনাঞ্জয়া আউট হলে ভাঙে এই জুটি। এরপর ২২ গজে ব্যাট করতে আসেন লঙ্কান অধিনায়ক দাসুন শানাকা। তবে বেশিক্ষণ উইকেটে থাকতে পারেননি তিনিও। দলীয় ৩২৪ রানে ১২ করে আউট হন তিনি। তবে একপাশ আগলে রেখে রানের চাক সচল রেখে নিজের শতক তুলে নেন সাদিরা।
তবে সেঞ্চুরি করে উইকেটে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি তিনি। দলীয় ৩৩৫ রানে আউট হন তিন, যাওয়া আগে ৮৯ বলে ১০৮ রানের~ ইনিংস খেলেন। শেষ পর্যন্ত সাদিরার শতকে নির্ধারিত ৫০ ওভারের ৯ উইকেট হারিয়ে ৩৪৪ রানের সংগ্রহ পায় দাসুন শানকার দল। পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন হাসান আলী।