কিছুটা বাড়ার পর বিশ্ববাজারে আবার সোনার দামে বড় পতন হয়েছে। এক সপ্তাহেই প্রতি আউন্স সোনার দাম ৫০ ডলারের ওপরে কমে গেছে। এতে দুই সপ্তাহের মধ্যে এখন বিশ্ববাজারে সোনা সর্বনিম্ন দামে অবস্থান করছে।
এর আগে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দরপতনের মধ্যে পড়ে সোনা। টানা পতনের কারণে সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে এক পর্যায়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম ১ হাজার ৬১৬ ডলারে নেমে যায়। তবে অক্টোবরের শুরুতে সোনার দাম কিছুটা বাড়ে। এতে আবার প্রায় ১৭০০ ডলার হয়ে যায় প্রতি আউন্স সোনার দাম।
তবে সোনার এই দাম বাড়ার প্রবণতা বেশি সময় স্থায়ী হয়নি। গত সপ্তাহজুড়ে আবার সোনার বড় দরপতন হলো। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে প্রতি আউন্স সোনার দাম দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৪৩ দশমিক ৪৬ ডলার। যা সপ্তাহের শুরুতে ছিল ১ হাজার ৬৯৪ দশমিক ৪০ ডলার। অর্থাৎ গত সপ্তাহে প্রতি আউন্স সোনার দাম কমেছে ৫০ দশমিক ৯৪ ডলার বা ৩ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
বিশ্ববাজারে সোনার দাম টানা কমতে থাকায় সম্প্রতি দেশের বাজারে টানা তিন দফা কমানো হয়েছে এই ধাতুর দাম। অবশ্য তার আগে কয়েক দফা সোনার দাম বাড়ানো হয়। ফলে গত মাসেই দেশের বাজারে ইতিহাসের সব রেকর্ড ভেঙে প্রতি ভরি সোনার দাম সাড়ে ৮৪ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়।
গত ১১ সেপ্টেম্বর অতিতের সব রেকর্ড ভেঙে দেশের বাজারে নতুন উচ্চতায় ওঠে সোনার দাম। সে সময় সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি (১১.৬৬৪ গ্রাম) সোনার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা বাড়িয়ে ৮৪ হাজার ৫৬৪ টাকা করা হয়। এর আগে দেশের বাজারে সোনার এত দাম আর কখনো দেখা যায়নি।
অবশ্য এই রেকর্ড দাম স্পর্শ করার পর সম্প্রতি তিন দফা দেশের বাজার সোনার দাম কমিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস)। এর মধ্যে সর্বশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর সবচেয়ে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৮৬ টাকা কমিয়ে ৮১ হাজার ২৯৮ টাকা করা হয়েছে।
এছাড়া ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৯৯১ টাকা কমিয়ে ৭৭ হাজার ৬২৪ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৯৩৩ টাকা কমিয়ে ৬৬ হাজার ৪৮৫ টাকা করা হয়েছে। আর সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে ৭০০ টাকা কমিয়ে ৫৫ হাজার ১৭১ টাকা করা হয়েছে। বর্তমানে এ দামেই দেশের বাজারে সোনা বিক্রি হচ্ছে।
এর আগে ১৯ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৯৩৩ টাকা কমিয়ে ৮২ হাজার ৩৪৮ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৮৭৫ টাকা কমিয়ে ৭৮ হাজার ৬১৫ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ৭০০ টাকা কমিয়ে ৬৭ হাজার ৪১৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি সোনার দাম ৫৮৩ টাকা কমিয়ে ৫৫ হাজার ৮৭১ টাকা করা হয়।
তার আগে ১৫ সেপ্টেম্বর ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি সোনার দাম ১ হাজার ২৮৩ টাকা কমিয়ে ৮৩ হাজার ২৮১ টাকা, ২১ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ১ হাজার ২২৫ টাকা কমিয়ে ৭৯ হাজার ৪৯০ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি সোনার দাম ১ হাজার ৫০ টাকা কমিয়ে ৬৮ হাজার ১১৮ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির সোনার দাম ভরিতে ৯৩৩ টাকা কমিয়ে ৫৬ হাজার ৪৫৪ টাকা করা হয়।
এদিকে সোনার পাশাপাশি গত সপ্তাহে বিশ্ববাজারে রুপা ও প্লাটিনামের দামেও পতন হয়েছে। গত এক সপ্তাহে রুপার দাম ৯ দশমিক ২৭ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ১৮ দশমিক ২৪ ডলারে নেমে এসেছে। আর প্লাটিনামের দাম ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ কমে ৮৯৮ দশমিক ৭৩ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বাধলে বিশ্ববাজারে হু হু করে বাড়ে সোনার দাম। মার্চের প্রথমার্ধেই প্রতি আউন্স সোনার দাম দুই হাজার ডলার ছাড়িয়ে যায়। এরপর গত কয়েক মাসে কয়েক দফা সোনার দাম ওঠা-নামা করে। তবে আগস্টের মাঝামাঝি থেকে পতনের মধ্যে পড়ে সোনা। আর সেপ্টেম্বর মাসের বেশিরভাগ সময়জুড়ে সোনার দরপতন হলেও, শেষদিকে এসে দাম কিছুটা বাড়ে।
গত ১২ আগস্ট প্রতি আউন্স সোনার দাম ছিলো ১ হাজার ৮০১ দশমিক ৮২ ডলার। সেখান থেকে কমতে কমতে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে প্রতি আউন্স সোনার দাম দুই বছর পর সাড়ে ১৬শ ডলারের নিচে নেমে যায়। এরপর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তহে এবং অক্টোবরের শুরুর দিকে সোনার দাম কিছুটা বেড়ে প্রায় ১৭শ ডলার হয়ে যায়। এখন তা আবার কমে সাড়ে ১৬শ ডলারের নিচে নেমে এসেছে।