প্রতিনিয়ত রূপ বদলাচ্ছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। মহামারির শুরুটা হয়েছিল এর যে ধরন (ভ্যারিয়েন্ট) দিয়ে, আজ তারচেয়েও বেশি ভয়ংকর ধরন তাণ্ডব চালাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। তার নাম ডেল্টা। করোনার এই ধরনের হানায় নতুন করে সংক্রমণ বাড়ছে বিভিন্ন দেশে। ফলে ফিরিয়ে আনতে হচ্ছে কড়া বিধিনিষেধ। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের খবর অনুসারে, এবারের অলিম্পিক আয়োজক টোকিওর পাশাপাশি থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াতে শনিবার রেকর্ড সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে, যার বেশিরভাগই ডেল্টায় আক্রান্ত।
করোনা রোগী বাড়ছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতেও। স্থানীয় সরকার শহরটিতে ২১০ জন নতুন করোনা রোগী শনাক্তের কথা জানিয়েছে। সেখানে সংক্রমণের গতি কমাতে লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে আগস্টের শেষ পর্যন্ত। তবে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন অনেকেই। শহরটিতে লকডাউনবিরোধী বিক্ষোভ ঠেকাতে রাস্তায় বাড়তি পুলিশ নামানো হয়েছে। মোড়ে মোড়ে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট, বন্ধ করে দেয়া হয়েছে ট্রেন ও ট্যাক্সি চলাচল।
বিশ্বে এখন করোনা মহামারির অন্যতম হটস্পট মালয়েশিয়া। দেশটিতে শনিবার রেকর্ড ১৭ হাজার ৭৮৬ জন নতুন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। এদিন শতাধিক লোক রাজধানী কুয়ালালামপুরের কেন্দ্রে জড়ো হয়ে মহামারি নিয়ন্ত্রণে সরকারি উদ্যোগে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং মালয়েশীয় প্রধানমন্ত্রী মুহিউদ্দিন ইয়াসিনের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
রেকর্ড রোগী শনাক্ত হয়েছে থাইল্যান্ডেও। এদিন দেশটিতে নতুন করে ১৮ হাজার ৯১২ জন করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে সেখানে মোট করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৯৭ হাজার ২৮৭ জন। এছাড়া মারা গেছেন আরও ১৭৮ জন, ফলে থাইল্যান্ডে করোনায় মৃতের মোট সংখ্যা ৪ হাজার ৮৫৭ জনে পৌঁছেছে।
ডেল্টার বিরুদ্ধে লড়তে হচ্ছে চীনকেও। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় নানজিং শহরে এক বিমানবন্দরকর্মীর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে অতিসংক্রামক ধরনটি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস শুক্রবার জানিয়েছেন, গত চার সপ্তাহে বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে করোনা সংক্রমণের হার ৮০ শতাংশ বেড়েছে। তার কথায়, আমাদের কষ্টার্জিত অজর্নগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বা হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে বসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি) বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, করোনার ডেল্টা ধরন জলবসন্তের (চিকেন পক্স) মতো সংক্রামক হলেও তুলনামূলক বেশি প্রাণঘাতী। এছাড়া ডেল্টায় আক্রান্ত ব্যক্তিরা করোনার অন্য ধরনে আক্রান্তদের তুলনায় বেশি দিন সংক্রামক থাকেন, অর্থাৎ তাদের মাধ্যমে অন্যরা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি দিন থাকে।