গত দু’দিন ধরে বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যায় উর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বুধবার বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪ লাখ ৫০ হাজার ৫২৬ জন এবং এ রোগে মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ২২৬ জনের। আগের দিন মঙ্গলবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ২৪ হাজার ৫৫৬ জন এবং ওই দিন মারা গিয়েছিলেন ৭ হাজার ৯৩০ জন।
অর্থাৎ, মঙ্গলবারের তুলনায় বুধবার বিশ্বজুড়ে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ২৫ হাজার ৯৭০ জন এবং মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ২৯৬ জন। অবশ্য আগের দিন সোমবারের তুলনায় মঙ্গলবার করোনায় নতুন আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। সোমবারের চেয়ে মঙ্গলবার বিশ্বজুড়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েছিল প্রায় ৮৯ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা বেড়েছিল প্রায় ২ হাজার।
করোনা মহামারি শুরু পর থেকে বিশ্বজুড়ে প্রতিদিন এ রোগে আক্রান্ত, মৃত্যু ও সুস্থ হয়ে ওঠাদের হালনাগাদ তথ্য প্রদানকারী ওয়েবসাইট করোনাভাইরাস ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার বিশ্বের দেশসমূহের মধ্যে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগী ও এ রোগে মৃত্যু সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে ব্রাজিলে।
বুধবার দক্ষিণ আমেরিকার বৃহত্তম এই দেশটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৪ হাজার ২২ জন এবং মারা গেছেন ১ হাজার ৫৯৫ জন।
এই তালিকায় দ্বিতীয়স্থানে যৌথভাবে আছে ভারত ও ইন্দোনেশিয়া। ওয়ার্ল্ডোমিটারের চার্ট বলছে, বুধবার নতুন আক্রান্ত রোগীর হিসেবে এগিয়ে আছে ভারত, অন্যদিকে এইদিন মৃত্যুর বেশি হয়েছে ইন্দোনেশিয়া।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারতে বুধবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪৫ হাজার ১৯৬ জন এবং মারা গেছেন ৮১৪ জন। একই দিন ইন্দোনেশিয়ায় করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৪ হাজার ৩৮৯ জন এবং মৃতের সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪০ জন।
ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার পর যে দুই দেশে বুধবার করোনায় আক্রান্ত-মৃত্যু সবচেয়ে বেশি হয়েছে- সেই দেশ দু’টির নাম রাশিয়া ও কলম্বিয়া। দক্ষিণ আমেরিকার দেশ কলম্বিয়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার ২২৯ ,মৃতের সংখ্যা ছিল ৫৫৯।
অন্যদিকে, ২৩ হাজার ৯৬২ নতুন আক্রান্ত রোগী ও ৭২৫ মৃত্যু নিয়ে বুধবার করোনায় দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর হিসেবে কলম্বিয়ার সঙ্গে যৌথভাবে তৃতীয় অবস্থানে ছিল রাশিয়া।
এছাড়া, গত ২৪ ঘণ্টায় বিশ্বের অন্যান্য যেসব দেশে করোনায় নতুন আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বেশি ছিল সেই দেশসমূহ হলো- যুক্তরাজ্য (আক্রান্ত ৩২ হাজার ৫৪৮, মৃত্যু ৩৩), দক্ষিণ আফ্রিকা (আক্রান্ত ২১ হাজার ৪২৭, মৃত্যু ৪১১), আর্জেন্টিনা (আক্রান্ত ১৯ হাজার ৪২৩, মৃত্যু ৪৫৬), ইরান (আক্রান্ত ১৭ হাজার ২১২, মৃত ১৬৬), স্পেন (আক্রান্ত ১৭ হাজার ৩৮৩, মৃত ১৭) এবং যুক্তরাষ্ট্র (আক্রান্ত ১৫ হাজার ১৩২, মৃত ২৩২)।
মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ১৮ কোটি ৫৮ লাখ ১৭ হাজার ৩৮৬ জন। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে সক্রিয় করোনা রোগীর সংখ্যা ১ কোটি ১৭ লাখ ২৬ হাজার ৪ জন। তাদের মধ্যে মৃদু উপসর্গ বহন করছেন ১ কোটি ১৬ লাখ ৪৮ হাজার ২৮৩ জন এবং গুরুতর অবস্থায় আছেন ৭৭ হাজার ৭২১ জন।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বুধবার করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন মোট ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৭৪৪ জন। এছাড়া, মহামারি শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর সুস্থ হয়ে উঠেছেন মোট ১৭ কোটি ৭৪ হাজার ২২৪ জন।
প্রাণঘাতী জীবাণু করোনাভাইরাস এবং এতে আক্রান্ত রোগী প্রথম শনাক্ত হয়ে চীনে। দেশটির সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুনান প্রদেশের উহান শহরে প্রথম করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছিল।
তবে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানা গেছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের আগেই বিক্ষিপ্তভাবে দেশটিতে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর উপস্থিতি ছিল।
২০২০ সালের শুরুর দিকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ায় ওই বছর ২০ জানুয়ারি বিশ্বজুড়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে জাতিসংঘভিত্তিক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়ায় অবশেষে ২০২০ এর ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে ঘোষণা করে ডব্লিউএইচও।