৪৬ দিন কিংবা ৪৮ ম্যাচের ভারত বিশ্বকাপকে যে মানদণ্ডেই বিচার করা হউক, যৌবন পেরিয়ে মাঝ বয়সে আছে এই আসর তা বলাই যায়! চলমান বিশ্বকাপের বয়স এখন সময়ের হিসেবে ২৩ দিন, আর ম্যাচের হিসেবে ২৫। ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে গ্রুপ পর্বের পঞ্চম রাউন্ডের খেলা। সব দলের পাঁচটি করে ম্যাচ শেষে জমে ওঠেছে পয়েন্ট টেবিলের লড়াই।
আসর শুরুর আগে থেকেই হট ফেভারিট ছিল ভারত। ঘরের মাঠে এখনো পর্যন্ত অপ্রতিরোধ্য রোহিত শর্মার দল। ৫ ম্যাচের সবকটি জিতে ১০ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলে একক আধিপত্য স্বাগতিকদের। প্রায় এক যুগ ধরে আইসিসি ট্রফি খরায় ভোগা ভারতের আক্ষেপ ঘুচবে কি শীঘ্রই? সেই প্রশ্নের উত্তর মেলাতে অপেক্ষা করতে হবে ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত!
শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দুর্দান্ত শুরু করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে তৃতীয় ম্যাচে এসে হোঁচট খায় প্রোটিয়ারা। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে তাদের হারটা অপ্রত্যাশিতই ছিল! তবে সেই হার আপাতত খুব একটা চিন্তার কারণ হচ্ছে না। কারণ পরের দুই ম্যাচে আবারো টানা জয় পেয়েছে তারা। সবমিলিয়ে ৫ ম্যাচ খেলে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের দ্বিতীয় স্থানে টেম্বা বাভুমার দল। সেমির পথে পা বাড়িয়ে রাখা প্রোটিয়াদের সামনে এবারো বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে চোকার তকমা ঘুচানো।
সর্বশেষ বিশ্বকাপে স্রেফ নিজেদের ভাগ্যের কাছে ট্রফি হাতছাড়া করেছিল নিউজিল্যান্ড! সুপার ওভার ড্রয়ের পর বাউন্ডারির সমীকরণে হৃদয় ভঙ্গের সেই গল্প কার না জানা? সেই ক্ষতে প্রলেপ দেওয়ার জন্য এটাই উপযুক্ত সময় কিউইদের। অন্তত প্রথম ৫ ম্যাচে তাদের পারফরম্যান্স এমন কথাই বলছে। এক ভারত ছাড়া আর কেউই তাদের সামনে চোখ তুলে তাকানোর সাহস পায়নি। ৫ ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের তৃতীয় স্থানে আছে কেন উইলিয়ামসনের দল। সেমির পথে কিউইরা এক পা দিয়ে রেখেছে এখন তা বলাই যায়! কারণ বাকি ৪ ম্যাচের ২টা জিতলেই সেমি নিশ্চিত হবে তাদের, তবে একটা জিতলেও সুযোগ থাকবে।
মানসিক শক্তি আর সামর্থ্য থাকলে যে কোনো পরিস্থিতি থেকেই যে ঘুরে দাঁড়ানো যায়, তারই একটা উদাহরণ লিখছে অস্ট্রেলিয়া। জোড়া হার দিয়ে আসর শুরু করা অজিরা এখন রীতিমতো উড়ছে। গত ম্যাচে ডাচদের বিপক্ষে তিনশোর্ধ্ব রানের জয়ে উন্নতি হয়েছে তাদের পয়েন্ট টেবিলেও। ৫ ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের শীর্ষ চারে জায়গা পেয়েছে প্যাট কামিন্সের দল। মাঝপথে দাঁড়িয়ে তাদের সেমির সমীকরণ এখন সহজই।
# | দল | ম্যাচ | জয় | হার | ড্র | পরিত্যক্ত | নেট রানরেট | পয়েন্ট |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|
১ |
ভারত
|
৫ | ৫ | ০ | ০ | ০ | ১.৩৫৩ | ১০ |
২ |
দক্ষিণ আফ্রিকা
|
৫ | ৪ | ১ | ০ | ০ | ২.৩৭০ | ৮ |
৩ |
নিউজিল্যান্ড
|
৫ | ৪ | ১ | ০ | ০ | ১.৪৮১ | ৮ |
৪ |
অস্ট্রেলিয়া
|
৫ | ৩ | ২ | ০ | ০ | ১.১৪২ | ৬ |
৫ |
শ্রীলঙ্কা
|
৫ | ২ | ৩ | ০ | ০ | -০.২০৫ | ৪ |
৬ |
পাকিস্তান
|
৫ | ২ | ৩ | ০ | ০ | -০.৪০০ | ৪ |
৭ |
আফগানিস্তান
|
৫ | ২ | ৩ | ০ | ০ | -০.৯৬৯ | ৪ |
৮ |
বাংলাদেশ
|
৫ | ১ | ৪ | ০ | ০ | -১.২৫৩ | ২ |
৯ |
ইংল্যান্ড
|
৫ | ১ | ৪ | ০ | ০ | -১.৬৩৪ | ২ |
১০ |
নেদারল্যান্ডস
|
৫ | ১ | ৪ | ০ | ০ | -১.৯০২ | ২ |
অস্ট্রেলিয়ার মতোই শ্রীলঙ্কার শুরুটাও হয়েছিল হার দিয়ে। বরং লঙ্কানদের ব্যর্থতার গল্পটা আরো করুণ! হ্যাটট্রিক হার দিয়ে আসর শুরু করেছিল দাসুন শানাকার দল। দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারের পর ভাগ্যের চাকা ঘুরে নেদারল্যান্ডস ম্যাচ দিয়ে। পরের ম্যাচে ইংলিশদেরও ঝালে পুড়ায় লঙ্কানরা! বাছাই পর্ব পেরিয়ে আসা দলটাই কি না পাত্তা দিলো না ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের! সবমিলিয়ে টানা দুই জয়ে এখন সেমির স্বপ্ন দেখতে পারে শ্রীলঙ্কা। ৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান টেবিলের পাঁচ নম্বরে।
আসর শুরুর আগে সেমি ফাইনালিস্টদের সম্ভাব্য তালিকায় যে কয়টা নাম বেশি উচ্ছারিত হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ছিল পাকিস্তান। পাশের দেশ, মোটামুটি ঘরের কন্ডিশনের মতো উইকেট, সাম্প্রতিক ফর্ম সবদিক বিবেচনায় যারা পাকিস্তানকে সেমিতে দেখতে চেয়েছিলেন বা এখনো চান তাদেরকে দোষ দেওয়ার কিছু নেই। তবে বাস্তব চিত্রটা একেবারেই ভিন্ন। দুই জয়ে আসর শুরু করা বাবর আজমরা হ্যাটট্রিক হারে সেমির স্বপ্ন এখন ভুলতে বসেছে! ৫ ম্যাচে ২ জয়ে ৪ পয়েন্ট নিয়ে তাদের অবস্থান টেবিলের ৬ নম্বরে।
এবারের আসরে এখনো পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চমকের নাম আফগানিস্তান। সম্প্রতি দেশটির রাজনৈতিক অস্থিরতা সরাসরি প্রভাব ফেলে তাদের ক্রিকেটে। বোর্ডে বেশ কিছু নেতিবাচক পরিবর্তন, আর কাঠামোগত অব্যবস্থাপনা তাদের ক্রিকেটকে হুমকির মুখে ফেলেছে। অথচ সেসবের ছিটে ফোটাও নেই তাদের মাঠের পারফরম্যান্সে। কতটা ইচ্ছা আর মানসিক শক্তি থাকলে এসব জয় করা যায়, বাইশ গজে পারফর্ম করা যায়, যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা জাতির মলিন মুখে হাসি ফোটানো যায়-তার আদর্শ হয়ে থাকবেন রশিদ খানরা। এখনো পর্যন্ত ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানকে হারিয়ে ৪ পয়নেট নিয়ে টেবিলের সাতে অবস্থান করছে আফগানিস্তান।
ভারত বিশ্বকাপে অনেকেই বড় সম্ভাবনা দেখেছিলেন বাংলাদেশের। তবে মাঠের পারফরম্যান্সে সেটা এখনো দেখা যায়নি। রবং সমর্থকদের হতাশই করেছেন সাকিব আল হাসানরা। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রত্যাশিত এক জয় ছাড়া পাওয়ার মতো আর কিছুই করতে পারেনি তারা। উল্টো বড় ব্যবধানে হেরে সমালোচনার মুখে টাইগাররা। ৫ ম্যাচে এক জয়ে ২ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের আট নম্বরে অবস্থান বাংলাদেশের।
ট্রফি ধরে রাখার মিশনে আট-ঘাট বেঁধেই ভারতে এসেছিল ইংল্যান্ড। অবসর ভেঙে ফিরেছিলেন বেন স্টোকসও। কিন্তু এতকিছুর পরও উপমহাদেশের মাটিতে রাজত্ব টিকিয়ে রাখা দায় হয়ে গেছে ইংলিশদের। ৫ ম্যাচে মাত্র এক জয়ে টেবিলের ৯ নম্বরে অবস্থান তাদের। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের এমন বাজে পারফরম্যান্সের পর গতকাল সংবাদ সম্মেলনে কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল অধিনায়ক জস বাটলারের কাছে। তিনি উত্তরে বলেছেন-‘আমারও জানা নেই।’
বাছাই পর্বে ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ের মতো দলকে ছিটকে মূল পর্বে জায়গা করেছিল নেদারল্যান্ডস। ভারতের মাটিতে যোগ্য দল হিসেবেই ডাচরা খেলতে এসেছে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সেটার একটা প্রদর্শনী তারা দেখিয়েছে। উড়তে থাকা প্রোটিয়াদের একমাত্র নেদারল্যান্ডস ছাড়া আর কেউই হারাতে পারেনি। ৫ ম্যাচে ডাচদের জয় ওই একটাই। ২ পয়েন্ট নিয়ে তারা আছে টেবিলের তলানিতে। ডাচদের অবশ্য হারানোর কিছু নেই, যা পাবে সেটাই অর্জন। তাই এই ২ পয়েন্টই তাদের মানসিকভাবে অনেক শক্তি জোগাবে।