রেকর্ডের বরপুত্র বলা হয় তাকে। বল পায়ে মাঠে নামলেই কাঁড়ি কাঁড়ি রেকর্ড গড়াগড়ি খায় তার পায়ে। সেমিফাইনালেও বেশ কয়েকটি রেকর্ড গড়েছেন তিনি। ছুঁয়েছেন আরও কয়েকটি রেকর্ড।
এবার ফাইনালেও একগুচ্ছ রেকর্ড হাতছানি দিচ্ছে মেসিকে। মাঠে নামলেই হয়ে যাবে বিরল সব রেকর্ড। আর শিরোপাটা জিততে পারলে তো কথা নেই, প্রায় সব রেকর্ড একা মেসির নামে লেখা হয়ে যাবে।
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে গোল করে গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাকে পেছনে ফেলে আর্জেন্টিনার হয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করার রেকর্ড গড়েছিলেন। ফাইনালে মাঠে নেমেই একটি রেকর্ড গড়েন এবং আরেকটি ছুঁয়ে ফেলেন। অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (১৯টি) খেলার রেকর্ড হয় তার।
একই সঙ্গে বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার রেকর্ড ছিল জার্মানির লোথার ম্যাথাউসের। ২৫টি। সেমিফাইনালেই ম্যাথাউসকে ছুঁয়ে ফেলেন মেসি। আজ মাঠে নামলে বিশ্বকাপের শতবর্ষের (প্রায়) ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা ফুটবলার হয়ে যাবেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক।
২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে প্রথম ফাইনাল খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। সেবার শিরোপা জয় সম্ভব হয়নি। এবার ফ্রান্সকে হারিয়ে অধরা বিশ্বকাপটা জয়ের সেরা সুযোগ মেসির সামনে।
বিশ্বের সর্বকালের সেরা ফুটবলারের আলোচনায় আগেই চলে এসেছেন মেসি। পেলে এবং দিয়েগো ম্যারডোনার সঙ্গে তুলনা হচ্ছে তার। প্রথম দু’জন বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পেলেও মেসি পাননি। তবু ফুটবলার হিসাবে দক্ষতা এবং সাফল্য তাকে নিয়ে এসেছে সর্বকালের সেরার লড়াইয়ে।
বিশ্বকাপ ফাইনালে যে ৭টি ব্যক্তিগত রেকর্ডের অপেক্ষা করছেন দেখে নিন, কী সেই রেকর্ডগুলো!
এক
২০০৬ সাল থেকে ফুটবল বিশ্বকাপ খেলছেন মেসি। এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপের ২৫টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। বিশ্বকাপের সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলার ক্ষেত্রে তিনি রয়েছেন যুগ্মভাবে প্রথম স্থানে। জার্মানির বিশ্বজয়ী সাবেক অধিনায়ক লোথার ম্যাথাউসও বিশ্বকাপের ২৫টি ম্যাচ খেলেছেন। ফ্রান্সের বিরুদ্ধে ফাইনাল হবে মেসির বিশ্বকাপের ২৬তম ম্যাচ। মাঠে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এককভাবে বিশ্বকাপের ইতিহাসে ম্যাচ খেলার ক্ষেত্রে শীর্ষে চলে আসবেন তিনি।
দুই
২৫টি ম্যাচ মিলিয়ে বিশ্বকাপে মেসি এখনও পর্যন্ত খেলেছেন মোট ২১৯৪ মিনিট। সময়ের হিসাবে তিনি রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে। শীর্ষে রয়েছেন ইতালির সাবেক ফুটবল পাওলো মালদিনি। তিনি বিশ্বকাপে মোট ২২১৭ মিনিট খেলেছেন। রোববারের ফাইনালে ২৪ মিনিট খেললে এ ক্ষেত্রেও মালদিনিকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে আসবেন মেসি।
তিন
বিশ্বকাপে ২৫টি ম্যাচ খেলে মেসি জয়ের স্বাদ পেয়েছেন ১৬টি ম্যাচে। এ ক্ষেত্রেও তিনি রয়েছেন দ্বিতীয় স্থানে। কাতারে দেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে পারলে আরও একটি ব্যক্তিগত রেকর্ড স্পর্শ করার সুযোগ পাবেন তিনি। বিশ্বকাপের ১৭তম ম্যাচ জেতার সুবাদে জার্মানির সাবেক ফুটবলার মিরোস্লাভ ক্লোসার সবচেয়ে বেশি ম্যাচ জেতার নজির স্পর্শ করবেন মেসি।
চার
এখনও পর্যন্ত মেসি বিশ্বকাপে ৯টি গোল করিয়েছেন সতীর্থদের দিয়ে। ফাইনালে সতীর্থদের দিয়ে আরও ২টি গোল করাতে পারলে ভেঙে দেবেন পেলের রেকর্ড। একটি গোলে সাহায্য করলেও পেলেকে ছুঁয়ে ফেলবেন তিনি। বিশ্বকাপের ইতিহাসে পেলে সতীর্থদের দিয়ে ১০টি গোল করিয়েছেন। যে রেকর্ড এখনও পর্যন্ত অক্ষত রয়েছে।
পাঁচ
২০১৪ সালে দেশকে বিশ্বকাপ জেতাতে না পারলেও প্রতিযোগিতার সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছিলেন মেসি। জিতেছিলেন সোনার বল। এবার কাতারেও সোনার বল জেতার অন্যতম দাবিদার আর্জেন্টিনা অধিনায়ক।
বিশ্বকাপের গত ৯২ বছরের ইতিহাসে কোনও ফুটবলারের দু’বার সোনার বল জেতার নজির নেই। অর্থাৎ, কেউ ২টি বিশ্বকাপে সেরা ফুটবলার হতে পারেননি। মেসি কাতারে সোনার বল জিতলে এ ক্ষেত্রে তিনিই হবেন বিশ্বের প্রথম এবং এক নম্বর ফুটবলার।
ছয়
কাতার বিশ্বকাপে মেসি এখনও পর্যন্ত করেছেন ৫টি গোল। সোনার বুট জেতার দৌড়ে ফ্রান্সের কিলিয়ান এমবাপের সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে রয়েছেন তিনি। প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারলে জিতবেন সোনার বুট। এমবাপে এবং মেসি- দু’জনের কেউ গোল না পেলে অ্যাসিস্ট বেশি হওয়ার কারণে মেসিই জিতবেন এই পুরস্কার।
তাহলে বিশ্বের সপ্তম ফুটবলার হিসাবে বিশ্বকাপে সোনার বুট এবং সোনার বল জেতার নজির গড়বেন মেসি। এখনও পর্যন্ত এই কৃতিত্ব রয়েছে ব্রাজিলের লিয়োনিডাস দ্য সিলভা, গ্যারিঞ্চা, রোনালদো, ইতালির পাওলো রোসি, সালভাতোর এসচিলাচি এবং আর্জেন্টিনার সাবেক ফুটবলার মারিও কেম্পেস। রোনালদো বাদে সবাই একই বিশ্বকাপেই ২টি পুরস্কার জিতেছিলেন।
সাত
এখনও পর্যন্ত বিশ্বকাপে মেসি ১১টি গোল করেছেন এবং ৯টি গোল করিয়েছেন সতীর্থদের দিয়ে। অর্থাৎ, দলের ২০টি গোলে তার অবদান রয়েছে। এ ক্ষেত্রে তার আগে রয়েছেন শুধু পেলে। ব্রাজিলের সাবেক এই ফুটবলার বিশ্বকাপে ১২টি গোল করেছিলেন এবং সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছিলেন ১০টি গোল। দলের মোট ২২টি গোলে তার অবদান ছিল। ফাইনালে দলের ২টি গোলে অবদান রাখতে পারলে এ ক্ষেত্রেও পেলেকে ছুঁয়ে ফেলবেন মেসি।