আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিদের নির্বাচনী উপহার দিয়েছে সরকার। তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিশেষ বিবেচনায় ৯১টি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এমপিও নীতিমালা ২০২১ এর বিশেষ ২২ ধারা ব্যবহার করে এমপিওভুক্ত হয়েছে এসব প্রতিষ্ঠান। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র।
সূত্র জানায়, এসব প্রতিষ্ঠান এমপিও নীতিমালার শর্ত পূরণ না করলেও সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রস্তাবে সোমবার (১৬ অক্টোবর) অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বিষয়ে আজই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে এ সরকারি অর্ডার (জিও) জারি করা হবে।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত-সচিব (মাধ্যমিক-২) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, এ সংক্রান্ত নথিতে প্রধানমন্ত্রী সই করেছেন। আমরা দ্রুত সময়ের মধ্যে জিও জারি করার চেষ্টা করছি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের নির্বাচনী উপহার হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা-২০২১ এর কোনো শর্তই মানা হয়নি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় যাচাই-বাছাই ছাড়াই তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে এ তালিকায় কোনো কারিগরি ও মাদ্রাসা নেই বলে জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সম্প্রতি বিশেষ বিবেচনায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির নির্বাচনী এলাকার দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি করা হয়। ঢাকা পোস্টে এ সংবাদ প্রচারের পর সরকারের মন্ত্রী ও এমপিদের চাপে ৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিশেষভাবে এমপিওভুক্তির উদ্যোগ নেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর সম্মতির জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়।
এর আগে, গত মার্চে মন্ত্রী ও এমপিদের ডিও লেটারের (বেসরকারি পত্র) পরিপ্রেক্ষিতে বিশেষ বিবেচনায় ৮৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির জন্য সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে তা নাকচ করে দেওয়া হয়। তবে শিক্ষামন্ত্রীর নির্বাচনী আসনে দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হওয়ার পর সরকারের উচ্চ মহলে চাপ তৈরি করেন অনেক মন্ত্রী। এরপর গত সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে বিশেষ বিবেচনায় ৯১টি প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করার জন্য প্রস্তাব পাঠানো হয়। সেই প্রস্তাবে সায় দেন সরকারপ্রধান।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ২০২১ সালে ৬ জুলাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের অধীনে দুই হাজার ৭১৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হয়। শর্তপূরণ না হওয়ায় এমপিওভুক্তি হতে পারেনি সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী ও এমপিদের নির্বাচনী এলাকার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্তি করা হবে বলে গত নির্বাচনের আগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তারা। তাই আগামী নির্বাচনের আগে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা না হলে ভোটে এর প্রভাব পড়তে পারে বলে দাবি করেছেন অনেক মন্ত্রী। সেই ভাবনা থেকেই বিশেষ বিবেচনায় এমপিওভুক্ত হলো ৯১টি প্রতিষ্ঠান।
এমপিও নীতিমালার ২২ ধারায় যা আছে
এমপিও নীতিমালা-২০২১ অনুযায়ী, ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের ভিত্তিতে এমপিওভুক্ত করা হয়। ১০০ নম্বরের মূল্যায়নের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীর সংখ্যা (৩০ নম্বর), পরীক্ষার্থীর সংখ্যা (৩০ নম্বর) এবং পাবলিক পরীক্ষায় পাসের হার (৪০ নম্বর)। তবে, এ নীতিমালার ২২ ধারায় বিশেষ ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে এমপিওভুক্তির বিধান রাখা হয়েছে।
২২ ধারায় বলা হয়েছে, শিক্ষায় অনগ্রসর, ভৌগোলিকভাবে অসুবিধাজনক, পাহাড়ি এলাকা, হাওর-বাওর, চরাঞ্চল, ছিটমহল, বস্তি এলাকা, নারী শিক্ষা, সামাজিকভাবে অনগ্রসর গোষ্ঠী (প্রতিবন্ধী, হরিজন, সেবক, চা-বাগান শ্রমিক, তৃতীয় লিঙ্গ ইত্যাদি) এবং বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান, চারুকলা, বিকেএসপিসহ সংস্থা পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির ক্ষেত্রে শর্ত শিথিলযোগ্য। এই ২২ ধারায় ৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হলো।