করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি চাঙ্গা রাখতে এবার অর্থের প্রবাহ বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন খাতে চাকরি হারানো শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে যারা বেকার রয়েছেন তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের জন্য ‘প্রো পুওর বন্ড বা দরিদ্রবান্ধব বন্ড’ নামে একটি নতুন বন্ড চালু করাসহ চার দফা প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই বন্ডের মাধ্যমে সংগ্রহ করা অর্থ চাকরি হারানো বেকারদের কর্মসংস্থানে ব্যয় করার পরিকল্পনা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো যে সুপারিশ করেছে সেগুলো হচ্ছে—বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষী বন্ড’ নামে আরো একটি নতুন বন্ড বাজারে ছেড়ে টাকা সংগ্রহ করা। যার মাধ্যমে আদায় করা অর্থ করোনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নে ব্যয় হবে। সাময়িকভাবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি বা এসএমই খাতে আরোপিত করহার কমানো এবং বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ দেওয়ার হার পুনর্বিবেচনা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এ ধরনের পরিকল্পনার একটি প্রস্তাবনা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পাঠানো হয়েছে। সম্মতি মিললে নতুন এসব বন্ড বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে সম্ভাব্য নেতিবাচক প্রভাব মোকাবিলায় এমন উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনার প্রভাব মোকাবিলায় ঋণনির্ভর যেসব প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে সেগুলোর অনেক অর্থ অলস পড়ে রয়েছে। তাছাড়া নতুন উদ্যোগ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলোতে অলস পড়ে থাকা তারল্য ব্যবহার করার পরিকল্পনা রয়েছে। একই সঙ্গে প্রয়োজন হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকেও বাড়ানো হবে টাকার জোগান। নতুন প্রণোদনাও দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের অনুমোদন পাওয়া গেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এসব বন্ড বাজারে ছাড়ার বিষয়ে কাজ করবে বলে জানা যায়।
তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীকে স্মরণীয় করে রাখতে ‘বঙ্গবন্ধু শতবর্ষী বন্ড’ চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। এটিও বিভিন্ন ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বহুজাতিক সংস্থার কাছে বিক্রি করে টাকা তোলার পরিকল্পনা রয়েছে। এসব টাকায় করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন খাতে অর্থায়নের জন্য ব্যবহার করা হবে। করোনার কারণে বিশ্বব্যাপী ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা থাকায় আন্তর্জাতিক বাজারে এখন সুদের হার অনেক কম। এজন্য আন্তর্জাতিক বাজার থেকেও এসব বন্ড ছেড়ে অর্থ সংগ্রহ করার পরিকল্পনা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকগুলোর হাতে এখন প্রচুর তারল্য রয়েছে। নতুন এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এই তারল্য একদিকে যেমন কাজে লাগবে, অন্যদিকে করোনায় সম্ভাব্য ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলো উপকৃত হবে।