প্রতিটি বইয়ের লেখক, সম্পাদক, বিষয় বিশেষজ্ঞ ও পরিমার্জনকারী থাকলেও বাংলাদেশে পাঠ্যবই নিয়ে বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না। ভুল তথ্য, তথ্যের বিকৃতি, চৌর্যবৃত্তির পাশাপাশি পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু নির্ধারণের প্রক্রিয়া নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। বিগত কয়েক বছরের মতো এ বছরেও পাঠ্যবইয়ে থাকা তথ্য নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি) বিবৃতি পর্যন্ত দিতে হয়েছে।
এ বছরে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বই নিয়ে। এ বইয়ের জীববৈচিত্র্য অধ্যায়ের বেশ কিছু অংশ পুরোপুরি ন্যাশন্যাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের ওয়েবসাইট থেকে হুবহু অনুবাদ করে তুলে ধরা হয়েছে।
এছাড়াও তথ্য বিকৃতি, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গদ্যে চৌর্যবৃত্তি, মুক্তিযুদ্ধের ভুল ইতিহাস নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এসবের জন্য সমন্বয়হীনতাকেই দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ বছরের পাঠ্যবইয়ে এনসিটিবি ৯টি ভুল ও অসঙ্গতির তথ্য দিলেও এ ভুলের সংখ্যা আরও বেশি বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
কী ভুল ছিল
এ বছরের পাঠ্যবইয়ে এনসিটিবি ৯টি ভুল ও অসঙ্গতির তথ্য দিয়ে সেগুলোর সংশোধনী দিয়েছে। এতে দেখা গেছে, নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশের ইতিহাস ও বিশ্ব সভ্যতা বইয়ে তিনটি ভুল শনাক্ত করেছে এনসিটিবি। এর মধ্যে বইয়ের ১৮১ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে- ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে। প্রকৃত তথ্য হবে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জুড়ে পাকিস্তান সামরিক বাহিনী নির্যাতন, গণহত্যা আর ধ্বংসলীলায় মেতে ওঠে।
একই বইয়ে ২০০তম পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে- ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েমের কাছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। কিন্তু প্রকৃত তথ্য হবে – ১২ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, রাষ্ট্রপতি আবু সাঈদ চৌধুরীর কাছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
ওই বইয়েরই ২০২ নম্বর পৃষ্ঠায় সংবিধান প্রণয়ন ১৯৭২ এর পটভূমি অংশের প্রথম অনুচ্ছেদের পরে যুক্ত করা হয়েছে- সংবিধান প্রণয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক অবস্থান প্রতিফলিত হয়েছিল। সংবিধান প্রণয়নের ক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর সার্বক্ষণিক দিক-নির্দেশনা ছিল। তিনি সংবিধান কমিটিকে বিভিন্ন মৌলিক বিষয়ে প্রত্যক্ষ নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
এছাড়া বইটির ২০৩ নং পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে পঞ্চমভাগে জাতীয় সংসদ কিন্তু প্রকৃত তথ্য হবে ষষ্ঠ লাইনে ‘পঞ্চমভাগে আইনসভা’।
এদিকে নবম-দশম শ্রেণির বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় বইয়ের ৬ নং পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ৫৪ সালের নির্বাচনে ৪টি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। দল চারটি হলো- আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম ও গণতন্ত্রী দল। কিন্তু প্রকৃত তথ্য হচ্ছে ৫৪ সালের নির্বাচনে ৫টি দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। দল পাঁচটি বলো- আওয়ামী লীগ, কৃষক শ্রমিক পার্টি, নেজামে ইসলাম, গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফতে রব্বানী পার্টি।
বইটির ১৬ নং পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প ও পিলখানা ইপিআর ক্যাম্প। কিন্তু সংশোধিত তথ্য হবে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স ও পিলখানা ইপিআর সদর দপ্তর।
এদিকে বইটির ২৮ নং পৃষ্ঠায় দেখা গেছে, সাধারণ মানুষের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য। কিন্তু প্রকৃত তথ্য হবে সাধারণ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার সংরক্ষণ এ সংবিধানের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
নবম-দশম শ্রেণির পৌরনীতি ও নাগরিকতা বইয়ের ৫৭ নং পৃষ্ঠায় ‘রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা ও কাজের ১ ক্রমিকের অনুচ্ছেদে প্রতিস্থাপিত হবে- ‘রাষ্ট্রপতি রাষ্ট্রের প্রধান। সরকারের সকল শাসনসংক্রান্ত কাজ তাঁর নামে পরিচালিত হয়। তিনি প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিচারপতি নিয়োগের ক্ষেত্র ব্যতীত তাঁর সকল দায়িত্ব পালনে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ পরিচালনা করেন। তিনি মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপ-মন্ত্রীদের নিয়োগ করেন। রাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের (মহা-হিসাবরক্ষক, রাষ্ট্রদূত ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা) নিয়োগের দায়িত্বও রাষ্ট্রপতির। প্রতিরক্ষা কর্ম বিভাগসমূহের সর্বাধিনায়কতা রাষ্ট্রপতির ওপর ন্যস্ত। তিন বাহিনীর (সেনা, বিমান ও নৌবাহিনী) প্রধানদের তিনিই নিয়োগ দেন।
এছাড়া বইটির ৫৯ নং পৃষ্ঠায় ‘প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা ও কাজ-১ ক্রমিকের অনুচ্ছেদটি প্রতিস্থাপিত হবে… ‘প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিপরিষদের প্রধান। প্রধানমন্ত্রীর কর্তৃত্বে সংবিধান অনুযায়ী প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করা হয়। তিনি মন্ত্রিসভার সদস্য সংখ্যা নির্ধারণ করেন ও মন্ত্রীদের মধ্যে দপ্তর বণ্টন করেন। তিনি যেকোনো মন্ত্রীকে তার পদ থেকে অপসারণের পরামর্শ দিতে পারেন।
কেন এত ভুল? এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষাবিদরা বলছেন, পাঠ্যবই প্রণয়নে যথেষ্ট সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে। যারা দায়িত্ব পেয়েছেন তাদের অনেকেই যোগ্য নয়। আবার যোগ্যদের অনেকেই দায়িত্ব নিয়ে তা যত্নের সাথে পালন করেননি। এতে শিক্ষার্থীরা যেমন ভুল শিখে বেড়ে উঠছে অপরদিকে বইগুলো সরিয়ে নেওয়াতেও কিছুটা শিখন ঘাটতি দেখা দেবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেন, বই পরিমার্জনের জন্য আমাদের এনসিটিবিতে পাঁচজন সম্পাদক রয়েছেন। অপরদিকে বিশেষজ্ঞ রয়েছেন ৬০ থেকে ৭০ জন। বিশেষজ্ঞরা তাদের দায়িত্ব ঠিক মতো পালন করছেন না। তাদের দায়িত্ব ভুলভ্রান্তি সংশোধন করা। যেহেতু বইয়ে ভুলভ্রান্তি রয়ে গেছে সেহেতু হয় তারা বিষয়টি বোঝেননি অথবা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেননি। যোগ্য ব্যক্তিদের দায়িত্ব না দিয়ে স্বজনপ্রীতি করে দায়িত্ব দিলে এসব কাজ হয় না।
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, একটি বই পরিমার্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট শ্রেণির ক্লাস নেন এমন একজন শিক্ষক, একই বিষয়ের একজন কলেজ শিক্ষক থাকেন, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক থাকেন। এছাড়া শিক্ষা ও গবেষণার একজন অধ্যাপক দায়িত্বে থাকেন। এখানে আবার বিশেষজ্ঞরাও যুক্ত থাকেন। তারা মিলেই দেখেন কোথায় ভুলভ্রান্তি আছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা এতই ব্যস্ত থাকেন যে তারা আসতে চেয়েও আর আসতে পারেন না। পরবর্তীতে অবহেলাতেই বইটি প্রিন্টে চলে যায়। এদের মাঝে যারা বইগুলো দেখেন তারাও আবার বিষয়টি তলিয়ে না দেখে নামমাত্র দেখে ছেড়ে দেন। তাদের অদক্ষতা ছাড়াও বইয়ে নানা কারণে ভুলোগুলো থেকে যেতে পারে।
প্রেসে গিয়েও জটিলতা
পাঠ্যবইয়ে ভুল থেকে যাওয়া নিয়ে আলাপকালে এর কারণ হিসেবে এনসিটিবির এই কর্মকর্তা প্রেসে গিয়েও জটিলতা তৈরির বিষয়টি সামনে আনেন। তিনি বলছেন, বইগুলো সঠিকভাবে সংশোধন করা হলেও প্রেসে গিয়ে ঝামেলা তৈরি হয়। সংশোধিত কপি এনসিটিবি সরবরাহ করলেও প্রেস মালিকদের অনেকে নতুন প্লেট করা ব্যয়বহুল মনে করে পুরোনো প্লেটে ভুল জিনিসগুলোই আবার ছেপে দেন। এমন জালিয়াতির অনেক ঘটনাই ঘটেছে। কিন্তু প্রেক্ষাপটের পরিবর্তন আসেনি।
টেন্ডারে কাজ যারা পান এমনও হয় যে তারা আগে থেকেই পুরোনো প্লেটে বই ছেপে রাখেন। শেষ সময়ে এসে বই ছাপানোর তাড়া কমলেও সংশোধন না করায় ভুল থেকেই যায়।
এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, প্রতিবছর আমরা বইগুলো পরিমার্জন করি। পরিমার্জনের ক্ষেত্রে দেশের প্রথিতযশা লেখকরা যুক্ত থাকেন আমাদের সাথে। বইগুলোর যৌক্তিক মূল্যায়ন করানো হয়। এর পরেও দুইবার বইগুলো পরিমার্জন করানো হয়। তারপরেও কিছু ভুল রয়ে গেছে। তবে যে ভুলগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে তার সবগুলো ভুল নয়। অপরদিকে কিছু ক্ষেত্রে একটি প্রবন্ধের কিছু অংশে ভুল দেখানো হচ্ছে, কিন্তু পুরো বিষয়টি পড়লে বোঝা যাবে সেটি আসলে ভুল নয়। বইগুলো যারা পরিমার্জন করেছিলেন তাদের কাছে আমরা ভুলোগুলো তুলে ধরেছি। তারা আমাদের সাহায্য করবেন। এছাড়া বইগুলোতে অন্য কোনো ভুল আছে কি না সেগুলো দেখার চেষ্টা করছি। বইয়ে সংবিধান নিয়ে যে পাঠ রয়েছে তা যথার্থভাবে পাঠ্যবইতে অন্তর্ভুক্ত করতে আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে দুজন আইনজ্ঞ চেয়েছি। তিনি দুজন আইনজ্ঞ দিলে আমরা তাদের দিয়েও বইটি পরিমার্জন করেছি। এখানে সংবিধান বিশেষজ্ঞরা কাজ করেছেন।
বইগুলো পরিমার্জনে সমন্বয়হীনতা এবং সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতার বিস্তর অভিযোগ রয়েছে- এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনসিটিবি চেয়ারম্যান বলেন, এ অভিযোগ অনেকটা সত্য, তবে পুরোপুরি নয়। বইগুলো যারা পরিমার্জনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের অনেকেই আসতে পারেননি। তারা অনেক নামি-দামি লোক। তারা বই পাঠাতে বলেছে। আমরা পাঠিয়ে দিয়েছি। বইটি প্রণয়নের পর নিয়ম হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পাঁচজন লেখক একত্রিত হবেন। তারা একত্রিত হয়ে আলোচনা করবেন।
তিনি আরও বলেন, এনসিটিবির চেয়ারম্যান হিসেবে আমার নিজের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। আমার কাজ হচ্ছে ত্রুটিমুক্ত বই দেওয়া। কিন্তু তারপরও বইয়ে ভুল থাকাটা দুঃখজনক।
প্রতিবছর পরিমার্জনে কঠোর নির্দেশনা থাকার পরেও পাঠ্যবইয়ে এমন ভুল থাকার কারণ কী? এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, পাঠ্যবইয়ে ভুল কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমি মনে করি বইগুলো প্রণয়ন, সম্পাদনা, প্রুফ রিড বা ডিজাইনের তাদেরই দায়িত্ব দিতে হবে যারা বেশি সময় দিতে পারেন। অনেকেই হয়তো অনেক নামি-দামি পদে আছে। তাদের নির্বাচন করার পর যদি এসব নামি দামি মানুষ সময় দিতে না পারেন তবে কিন্তু মুশকিল হয়ে যায়। সুতরাং শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে যারা নিবিড়ভাবে যুক্ত এবং অন্য প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকেন না তাদেরকেই এসব দায়িত্ব দিলে ভুলোগুলো কমে যাবে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক এবং গণসাক্ষরতা অভিযানের সহ-সভাপতি ড. মনজুর আহমেদ বলেন, বইগুলো প্রণয়নে অনেকরকম অদক্ষতা আছে, দায়বদ্ধতা এবং তত্ত্বাবধানের অভাব আছে। তাড়াহুড়ো করে বই ছাপাতে গিয়ে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে। শিক্ষকদেরও সেভাবে প্রস্তুত করা হয়নি। তাদের যে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা তাও দেওয়া হয়নি। প্রতিবছরই কিছু ভুল থাকে, কিন্তু এ বছর ভুলের সংখ্যা অনেক বেশি। এদিকে আমাদের দেশের দুই মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করতে পারে না। সেটাও একটা বিষয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, বইগুলো প্রণয়নে সমন্বয়হীনতার অভাব রয়েছে, যত্নের অভাব রয়েছে। তা না হলে এমন ভুল হওয়ার কথা নয়। বইয়ে বেসিক জিনিসগুলোতে প্রতিবছর কেন পরিবর্তন আনতে হবে? বইগুলো পরিমার্জনের ক্ষেত্রে এডিটোরিয়াল বোর্ডের দায়িত্ব ছিল গুরুত্ব দিয়ে দেখা, কিন্তু সেটা করা হয়নি। বই হাতে পাওয়ার পর শিক্ষার্থীদের প্রায় দুই মাস সময় অতিবাহিত হয়েছে। এ সময়েও ভুলে ভরা বইগুলো নতুন করে পরিমার্জন করে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। কবে নাগাদ তা সম্ভব হবে জানা নেই। এমন পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের একটি শিখন ঘাটতি তৈরি হবে। সে ঘাটতি পরবর্তীতে পূরণ করতেও বেগ পেতে হবে।
বই প্রণয়নে সমন্বয়হীনতার পাশাপাশি আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমলারা সবজান্তা হয়ে গেলে মুশকিল। আমলাদেরও প্রয়োজন আছে তবে এসব জিনিস যারা পারে , অভিজ্ঞ এবং সংশ্লিষ্ট তাদের এ দায়িত্ব দেওয়া উচিত। সবকিছু আমলাদের ওপর ছেড়ে দিলে বিপদ হতে পারে। শিক্ষা খুব ডেডিকেটেড একটা জিনিস; এটা শিক্ষাবিদদের হাতে ছেড়ে দেওয়া উচিত। সবকিছুতে আমলাতান্ত্রিক ছাপ লাগানোর চেষ্টা ঠিক না। বঙ্গবন্ধুর সময়ে শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ, শিক্ষা সচিবও ছিলেন একজন শিক্ষাবিদ। কিন্তু এখন আমলারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়ে যাচ্ছেন। পিএসসির সদস্য হচ্ছেন, এক্রিডিটেশন কাউন্সিলের মেম্বার হচ্ছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বইগুলো প্রণয়নের ক্ষেত্রে যাদের যা দায়িত্ব ছিল তারা সময় দিয়ে দায়িত্ব পালন করেননি। তাদের অবহেলা ও উদাসীনতায় এবং কর্তব্য পালনের অনীহা রয়েছে। তাদের আরও যত্নশীল হওয়া উচিত ছিল। বইয়ে কিছু ভুল থাকা স্বাভাবিক হলেও এত বেশি ভুল নিশ্চয় উদ্বেগের। বইয়ে একটি পুরো গল্প ভুল, উদ্ভট তথ্য এটা সমর্থনযোগ্য নয়।
বই প্রণয়নের সঙ্গে জড়িতদের দায়িত্বে অবহেলা ছিল বলে মনে করেন আরেফিন সিদ্দিকও। তিনি বলেন, অবহেলা কোনো না কোনো পর্যায়ে নিশ্চয় হয়েছে। বইয়ে এমন ভুলের কারণে শিক্ষার্থীদের নানামুখী সমস্যা তৈরি হতে পারে। ভুলোগুলো আরও নিখুঁতভাবে বের করা দরকার। ইংরেজি ভার্সনের বইগুলোতেও প্রচুর ভুল রয়েছে। এটা নিয়ে তেমন আলোচনা নেই। এমনকি গণমাধ্যমেও খুব একটা উঠে আসেনি । ভুলোগুলো বের করে সংশ্লিষ্টদের এগুলো দ্রুত সমাধান করা জরুরি।