সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট গণনা নিয়ে এক মাসের বেশি সময় ধরে চলা অচলাবস্থার মধ্যে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের বিরোধিতার মুখে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। বুধবার (২৭ এপ্রিল) রাতে এ ফলাফল ঘোষণা করে দ্বিতীয় বার গঠন করা নির্বাচন উপ-কমিটি। যে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলছেন বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা।
নির্বাচন উপ-কমিটির আহ্বায়ক আইনজীবী অজি উল্লাহর ঘোষিত ফলাফলে সভাপতি মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির-সম্পাদক আবদুন নূর দুলালসহ সাত পদে বিজয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেল। অন্যদিকে কোষাধ্যক্ষ ও দুই সহ-সম্পাদকসহ বাকি সাত পদে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেল। গত ১৫ ও ১৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচন পরিচালনা করে সিনিয়র অ্যাডভোকেট এ ওয়াই মসিউজ্জামানের নেতৃত্বে সাত সদস্যের নির্বাচন উপ-কমিটি।
পরদিন ১৭ মার্চ বিকেলে ভোট গণনা শুরু হয়, চলে রাত পর্যন্ত। সভাপতি পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাদা প্যানেলের প্রার্থী সিনিয়র আইনজীবী মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির এগিয়ে ছিলেন। সম্পাদক পদে বিএনপি সমর্থিত নীল প্যানেলের প্রার্থী মো. রুহুল কুদ্দুস এগিয়ে ছিলেন। কিন্তু অনিয়মের অভিযোগ তুলে সাদা প্যানেল থেকে সম্পাদক প্রার্থী আবদুন নূর দুলাল পুনরায় ভোট গণনা চেয়ে নির্বাচন পরিচালনা–সংক্রান্ত আহ্বায়ক কমিটির কাছে আবেদন করেন। এ নিয়ে ওইদিন রাতে দুই পক্ষে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
এ অচলাবস্থার মধ্যে একপর্যায়ে এ ওয়াই মসিউজ্জামান পদত্যাগপত্র দেন। এরপর ভোটের ফলাফল ঘোষণা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। এর মধ্যে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি (সাদা প্যানেল সমর্থিত) আইনজীবী মো. অজি উল্লাহ স্বাক্ষরিত এক লিখিত বক্তব্যে সাংবাদিকদের বলা হয়, ১২ এপ্রিল সমিতির কার্যকরী কমিটির মেয়াদের শেষ এক সভায় তাকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি নির্বাচন উপ-কমিটি করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১৫ এপ্রিল আইনজীবী এ ওয়াই মসিউজ্জামানের কাছে চাবি হস্তান্তরের জন্য চিঠি দিই। তবে তিনি চাবি হস্তান্তর না করায় ১৭ এপ্রিল তার সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলি। সার্বিক বিবেচনায় ২৭ এপ্রিল বিকেল ৩টায় নির্বাচন–পরবর্তী বাকি কাজ শেষ করা হবে। এ ঘোষণা অনুযায়ী বুধবার বিকেলে মো. অজি উল্লাহর নেতৃত্বে নির্বাচন পরিচালনা–সংক্রান্ত নতুন উপ-কমিটি সমিতির তিনতলায় অবস্থিত সম্মেলন কক্ষে ঢুকতে গেলে হইচই ও হট্টগোল শুরু হয়। আগে থেকে সমিতির সম্মেলন কক্ষের অন্য পাশে অবস্থান নিয়ে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা এ উপ-কমিটি বিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলেন। পরে সেখানে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা। একপর্যায়ে জানালার কাঁচ ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে নতুন উপ-কমিটি ভোট গণনা শুরু করে। এরপর সমিতি ভবনে পুলিশ মোতায়ন করা হয়।
তবে এর আগে বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি সমর্থিত দুইবার নির্বাচিত সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস ১২ এপ্রিল অনুষ্ঠিত সভার কোনো আইনি ভিত্তি নেই বলে ওই সভায় গৃহীত যে কোনো সিদ্ধান্ত অবৈধ বলে উল্লেখ করেন। এর মধ্যে রাতে ফলাফল ঘোষণা করে অজি উল্লাহর নেতৃত্বে উপ-কমিটি। সভাপতি-সম্পাদক পদ বাদে সাদা প্যানেল থেকে এবারের নির্বাচনে সহ-সভাপতি পদে মো. শহীদুল ইসলাম ও মোহাম্মদ হোসেন নির্বাচিত হয়েছেন। আর সদস্য পদে নির্বাচিত হয়েছেন ফাতেমা বেগম, শাহাদাত হোসাইন (রাজিব) ও সুব্রত কুমার কুণ্ডু।
অন্যদিকে নীল প্যানেল থেকে কোষাধ্যক্ষ পদে মোহাম্মদ কামাল হোসেন ও দুটি সহ-সম্পাদক পদে যথাক্রমে মাহফুজ বিন ইউসুফ ও মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান খান নির্বাচিত হয়েছেন। সদস্য পদে নির্বাচিতরা হলেন- কামরুল ইসলাম, মাহদীন চৌধুরী, মো. গোলাম আক্তার জাকির ও মো. মঞ্জুরুল আলম (সুজন)।