বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) এক সমীক্ষায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে এখন ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কর্মরত রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১৭ লাখ ৫০ হাজার শিশু রয়েছে, যাদের কাজ শিশুশ্রমের আওতায় পড়েছে। বাকি শিশুদের কাজ অনুমোদনযোগ্য। কর্মরত শিশুদের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত আছে ১২ লাখ ৮০ হাজার জন। আর ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। তাদের কাজের বৈশিষ্ট্য জীবন ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ হুমকিস্বরূপ।
২০১৩-তে জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষায় এ তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে এ সমীক্ষাটি চূড়ান্ত করেছে বিবিএস। ২০২৫ সালের মধ্যে শিশু শ্রম কমিয়ে আনার জন্য নতুন জরিপ শুরু করেছে বিবিএস।
৮ সেপ্টেম্বর বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ন্যাশনাল চাইল্ড লেবার সার্ভে ২০২১ এর উদ্বোধন করা হয়। শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশ সরকার ৩৮টি ঝুকিপূর্ণ শ্রম নির্ধারণ করে ২০২৫ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধের অঙ্গীকার করেছে। এসব অঙ্গীকার বাস্তবায়নে জরিপ শুরু করেছে বিবিএস।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দেশে শিশু শ্রম বন্ধ হওয়া দরকার। আমরা প্রত্যেকে শিশু ছিলাম। আমাদের একটা দায়িত্ব শিশু শ্রম কমিয়ে আনা। শিশু শ্রম অত্যন্ত বেদনাদায়ক একটা বিষয়। তবে পশ্চিমা দেশ যতো ধনী হোক না কেন শিশুরা কাজ করে পয়সা কামায়। জরিপে মোট ব্যয় হবে ২৫ কোটি ৯১ হাজার টাকা। জরিপের কাজ শেষ করা হবে ২০২২ সালের জুন মাসে। জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা ২০০২-২০০৩ মেয়াদে প্রথম শুরু হয়। এর পরে ২০১৩ সালের দ্বিতীয় সমীক্ষা শুরু হয়। এখন তৃতীয় বারের মতো দেশে শুরু হলো জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষা।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও বিবিএস যৌথভাবে সমীক্ষার কাজ শুরু করেছে। দেশের মধ্যে সব থেকে ঢাকা বিভাগে শিশুশ্রম বেশি সাড়ে ৮ শতাংশ, এরপরই চট্টগ্রামে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ শিশু শ্রম রয়েছে। দেশের মধ্যে শিশু শ্রম সব থেকে কম বরিশালে ১ দশমিক ৭ শতাংশ এবং সিলেটে ২ শতাংশ। খুলনায় ৩ দশমিক ২, রাজশাহীতে ৩ দশমিক ৯, রংপুরে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ শিশু শ্রম রয়েছে।
দেশে কর্মরত শিশু বলতে ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে যারা সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টা পর্যন্ত হালকা পরিশ্রম বা ঝুঁকিহীন কাজ করে তাদের বোঝায়। এ শ্রম অনুমোদনযোগ্য। তবে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী কোনো শিশু যদি কোনো ধরনের ঝুঁকিহীন কাজও করে, তবে সেটা শিশুশ্রম হবে। তারাও কর্মরত শিশুদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। আর ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সী কেউ যদি সপ্তাহে ৪২ ঘণ্টার বেশি কাজ করে, সেটা ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম হিসেবে স্বীকৃত।
প্রায় এক দশকের ব্যবধানে কর্মরত শিশুর সংখ্যার পাশাপাশি শিশুশ্রম অর্ধেকে নেমে এসেছে। বিবিএসের ২০০৩ সালের জাতীয় শিশুশ্রম সমীক্ষায় দেখা গেছে, তখন প্রায় ৭৪ লাখ কর্মরত শিশু ছিল। তাদের মধ্যে ৩১ লাখ ৭৯ হাজার শিশুর কাজ শিশুশ্রমের আওতায় ছিল। তবে এক দশকের ব্যবধানে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত শিশুদের সংখ্যা তেমন কমেনি, কমেছে মাত্র ১১ হাজার। ২০০৩ সালে দেশে ১২ লাখ ৯১ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ছিল। ২০১০ সালে প্রণীত জাতীয় শিশুশ্রম নির্মূল নীতিমালায় ২০১৬ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নির্মূল করার কথা বলা হয়েছে। এখন ২০২৫ সালে মধ্যে শিশু শ্রম নিরসনের নতুন টার্গেট দেওয়া হলো।