মাধ্যমিকের ষষ্ঠ শ্রেণির নতুন পাঠ্যবই থেকে মানব বিবর্তন বাতিল, বিভিন্ন অধ্যায়ে বানান ভুল, ছবি নির্বাচন ও উপস্থাপনে ত্রুটি, ইংরেজি বইতে বাংলা অনুবাদ, সর্বনাম ব্যবহারে ভুল, পাঠ্যবই প্রণয়নে প্রস্তুতির ঘাটতি ও তড়িঘড়িকরণ, পৃষ্ঠা সংখ্যা অতিরিক্ত করে বইয়ের ভার বাড়ানোসহ বেশ কিছু ভুল চিহ্নিত করেছে পাঠ্যপুস্তক বিশেষজ্ঞ কমিটি। এসব সংশোধনে ৩০টির মতো সুপারিশ করা হয়েছে। গত ২৭ মার্চ এ কমিটির প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির নতুন পাঠ্যপুস্তক তড়িঘড়ি করে প্রণয়ন করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। লেখক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ও প্রেসের সমন্বয়হীতার কারণে নানা ধরনের ভুল চিহ্নিত হয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এ তিন স্তরে সঠিকভাবে সমন্বয় করা হয় সে জন্য সুপারিশ করেছে মূল্যায়ন কমিটি। ষষ্ঠ শ্রেণির বই থেকে মানব বিবর্তনবাদ অধ্যায় বাতিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। বিভিন্ন অধ্যায়ে বানান ভুল, ছবি নির্বাচন করা ও উপস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে। কয়েকটি অধ্যায়ে অসঙ্গতি বাদ দিতে বলা হয়েছে।
দেখা গেছে, ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির বইয়ের অনেক স্থানে বানান ভুল পাওয়া গেছে। সর্বনাম ব্যবহারে ভুল হয়েছে। ইংরেজি বইয়ের মধ্যে বাংলা অনুবাদ দেওয়া হয়েছে। এর কারণে ইংরেজি শেখা থেকে পিছিয়ে পড়তে পারে শিক্ষার্থীরা। যেসব বিষয় নিয়ে অসঙ্গতি, আলোচনা ও সমালোচনা রয়েছে সেগুলো পরিবর্তন করাসহ মোট ৩০টি সুপারিশ করেছে কমিটি। এসব সুপারিশের ভিত্তিতে গত ২৭ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের নিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী কর্মশালা করে ভুল সংশোধন করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিমকে আহ্বায়ক করে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপ-পরিচালক মো. আজিজ উদ্দিনকে সদস্যসচিব করে আট সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. ওয়াহেদুজ্জামান চাঁন, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) লুৎফর রহমান, কারিগরি মাদরাসা বিভাগের একজন উপসচিব, ইসলামি ফাউন্ডেশনের একজন পরিচালক ও মতিঝিল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল নাহার শাহীন।
কমিটির কর্মপরিকল্পনা হিসেবে বলা হয়, এ কমিটি পাঠ্যবইয়ে ভুল, বির্তক সবকিছু পর্যালোচনা করবে। এ বিষয়ে একটি ভার্চুয়াল প্ল্যাটর্ফম তৈরি করা হবে। দেশ-বিদেশ থেকে যে কেউ ভুল ও অসঙ্গতি দেখলে পাঠাতে পারবেন। সেগুলো কমিটির সদস্যরা যাচাই করবেন। পাশাপাাশি অভিযোগ ওঠা পাঠ্যবইগুলো নতুনভাবে রিভিউ করা হবে। যেসব ভুল চিহ্নিত করা হবে সেগুলো সংশোধন করতে পরামর্শমূলক একটি প্রতিবেদন পরবর্তী ৩০ কর্মদিবসের মধ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে।
বিষেশজ্ঞ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আব্দুল হালিম সোমবার জাগো নিউজকে বলেন, মাধ্যমিকের ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলন, ষষ্ঠ শ্রেণির বিজ্ঞান অনুসন্ধান এবং অনুশীলনসহ মোট চারটি বই আমাদের মূল্যায়ন করতে বলা হয়। এ চারটি বই নিয়ে গণমাধ্যামে প্রকাশিত সংবাদ, সুধীজনের পর্যবেক্ষণ ও আপত্তি থাকলে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করে ভুল থাকলে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন আকারে জমা দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, আমাদের অতিতের শিক্ষাক্রমের চাইতে কিছুটি পজিটিভ পরিবর্তন করা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পড়ার সঙ্গে সেগুলো মূল্যায়ন করা শিখবে। উপস্থাপন করা শিখতে পারবে। তবে কিছু অধ্যায় আগের মতে রাখা হয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থীর অ্যাকটিভিটিস রাখা হয়নি সেগুলো নিহ্নিত করে সংশোধন করতে সুপারিশ করা হয়েছে। ষষ্ঠ-সপ্তম শ্রেণির বিজ্ঞান বইয়ে ভালো উপস্থাপন করা হলেও অনুশীলন বইটিকে মূল রেখে অন্যটিকে রেফারেন্স হিসেবে রাখতে বলা হয়েছে। এর বাইরেও বির্বতনবাদ অধ্যায় বাদ দেওয়াসহ নানা ধরনের ভুল চিহ্নিত করে সেগুলো সংশোধন করতে প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে। এসব বই সংশোধনে মোট ৩০টি সুপারিশ করা হয়েছে।