কারও ক্লাব সাঁতারু খুঁজে পাচ্ছে না, মাসুদ রানাকে ফোন দাও। কারও সাঁতারু শেষ মুহূর্তে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মাসুদ রানার কাছ থেকে সাঁতারু নাও। যে কোনও টুর্নামেন্টের আগে মাসুদ রানার কাছ থেকে চুক্তিভিত্তিক সাঁতারু নেন ক্লাবগুলো। যেন সব সময় সাঁতারু নিয়ে প্রস্তুত বগুড়ার সাঁতার কোচ মাসুদ রানা।
মিরপুর সুইমিং কমপ্লেক্সে পা রাখলেই দেখা যাবে মাসুদ রানা ও নীলুফার ইয়াসমিন দম্পতিকে। মাসুদ রানার হাতে স্টপ ওয়াচ। মুখ ভর্তি পান। হেসে হেসে কথা বলছেন। পুলের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত দৌড়ে বেড়াচ্ছেন সারাক্ষণ। কোন সাঁতারু কত টাইমিং করলো, কোন ক্লাব থেকে পদক জিতল সেগুলো জানতেই এই ছোটাছুটি। মিরপুরে চলছে ৩৭তম জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতার প্রতিযোগিতা। এবারের প্রতিযোগিতায় সব মিলিয়ে ১৫ জন সাঁতারু ঢাকায় এনেছেন মাসুদ রানা।
বগুড়ার সাত মাথা পার্ক পুকুরে এক দল সাঁতারু নিয়ে সারা বছর অনুশীলন করান মাসুদ রানা। বগুড়া শহরের সাতমাথা গোয়াল রোডে এক সময় জ্বালানী তেল বিক্রি করতেন। এখন অবশ্য সেই ব্যবসা ছেড়ে পুরো সময় সাঁতারু তৈরির পেছনে সময় দেন।
বয়সভিত্তিক সাঁতারে নিজের ও বিভিন্ন ক্লাবে এ পর্যন্ত ১০৪টি সোনা জিতেছেন মাসুদ রানার হাতে গড়া সাঁতারুরা। কিন্তু তিনি এসব সাঁতারুদের অনুশীলনের জন্য কোনও টাকাপয়সা নেন না। মিরপুর সুইমিং পুলের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি বলছিলেন, “একেবারে ফ্রি । মানে বগুড়ার ভাষায় বলে মাগনা। আমি সাঁতার শেখাতে কারও কাছ থেকে কোনও টাকা পয়সা নিই না। আমি মৃত্যু পর্যন্ত এটাই করে যাব। বড় টিমকে অনেক সোনার পদক দিয়েছি। এ পর্যন্ত ১০৪টি সোনা জিতেছে আমার ছেলে মেয়েরা। এর মধ্যে ২২টিতে রেকর্ড হয়েছে।”
সব মিলিয়ে প্রায় ১২ হাজার সাঁতারু তৈরি করেছেন মাসুদ রানা। তথ্যটি জানিয়ে গর্বের সঙ্গে বলেন, “আমার হাত দিয়ে এ পর্যন্ত বয়সভিত্তিক ও সিনিয়র জাতীয় সাঁতারে সব মিলিয়ে ১২,২৩৭ জনকে রেজিস্ট্রেশন করিয়েছি। সবাইকে ফ্রি শিখিয়েছি। কোনও ডোনেশন নিইনি। এমনকি জেলা ক্রীড়া সংস্থারও সহযোগিতা পাইনি।”
যেন নেশার মতো সাঁতার শেখান তিনি, “এটা একটা নেশার মতো হয়ে গেছে। অনেক সময় আমার চোখে ঘুম থাকে না। বাচ্চাদের কাছে ছুঁটে যায়। শীতের সময় ৩০ মিনিট আর ল্যান্ডিং আড়াই ঘন্টা করাই। বাকি সময়ে সকালে ৩ ঘন্টা ও বিকেলে ২ ঘন্টা অনুশীলন করাই।”
১৯৮৮ সাল থেকে সাঁতারের কোচিং করান তিনি। এর আগে সাঁতারু ছিলেন। তবে সাফল্য অনেক পরে এসেছে, “ ২০১৭ সাল থেকে আমার সাঁতারুরা সোনা জেতা শুরু করে। এ পর্যন্ত দুই বার সেরা সাঁতারুর পুরস্কার পেয়েছে আমার সাঁতারু।”
এসএ গেমসে সোনাজয়ী মাহফুজা খাতুন শিলার রেকর্ড ভেঙেছেন তার হাতেগড়া সাঁতারু মরিয়ম খাতুন। এছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌ বাহিনী, বাংলাদেশ বিমান ও আনসারে কর্মসংস্থান হয়েছে তার শিষ্যদের।
মাসুদ রানার এখন একটাই স্বপ্ন, “যদি আমার কোনও সাঁতারু এসএ গেমসে সোনা জিতত তাহলে আমার এত দিনের কষ্ট স্বার্থক হতো।”
মাসুদ রানাদের মতো তৃণমূলের কোচেরা আছেন বলেই এখনও মিরপুর সুইমিং পুলে মেতে ওঠে হাজারো কিশোর-কিশোরী। এদের হাত ধরেই হয়তো এসএ গেমসে আসবে সোনার পদক।