করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে চলমান বিধিনিষেধ আরও ৭ দিন বাড়ানোর চিন্তা করছে সরকার। তবে জীবিকার কথা বিবেচনা করে সীমিত পরিসরে সরকারি-বেসরকারি অফিস ও গণপরিবহণ চালুর অনুমতি দেওয়া হতে পারে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে আজ (মঙ্গলবার) অনলাইনে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ওই বৈঠকের মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন প্রধানমন্ত্রী। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘মঙ্গলবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে দেশের করোনা পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। ওই বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীসহ সরকারের সিনিয়র মন্ত্রীরা উপস্থিত থাকবেন। বিধিনিষেধ বাড়ানোর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশ ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডারের (অংশীজন) মতামত পর্যালোচনা করে বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি পাওয়া সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনা করে সবার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে বিভিন্ন প্রস্তাব পাওয়া যাবে, সেগুলো বিবেচনা করে কীভাবে করলে এ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারি, সেটি আমাদের মূল লক্ষ্য। আমাদের কাজকর্মগুলো, যেগুলো একেবারেই অপরিহার্য, সেগুলো চালানো। সেটি কী করলে ভালো হবে, সেজন্য আরেকটু সময় আমাদের লাগবে।’
জানা গেছে, কোভিড-১৯ পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত বিষয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা আজ বেলা ১১টায় মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ১২ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, ১৬ জন সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, পুলিশ মহাপরিদর্শক, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, আইইডিসিআর পরিচালকসহ সংশ্লিষ্টরা অংশ নেবেন। সোমবার সংশ্লিষ্টদের কাছে এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বিধিনিষেধ বাড়ানোর ইঙ্গিত দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা যুগান্তরকে বলেন, ‘স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতামত এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুপারিশ আমলে নিয়েই ৫ আগস্টের পর কীভাবে বিধিনিষেধ দেওয়া যায়, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মঙ্গলবারের সভা থেকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা সুপারিশ আকারে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।’
কী কী বিষয়ে শিথিলতা আসতে পারে-এমন প্রশ্নের জবাবে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি অফিস সীমিত পরিসরে খুলে দেওয়া হতে পারে। আর গণপরিবহণ সীমিত পরিসরে চালু করা হতে পারে। রপ্তানিমুখী শিল্প-কলকারখানা চালু রাখা হবে।’
করোনার সংক্রমণ কমাতে সব ধরনের অফিস বন্ধ রেখে গত ১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর করে সরকার। এরপর কুরবানির ঈদের আগে গত ১৫ জুলাই থেকে আট দিনের জন্য সব বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়। গত ২৩ জুলাই থেকে ফের ১৪ দিনের কঠোর বিধিনিষেধ চলছে। শেষ ধাপের বিধিনিষেধের মধ্যে সব ধরনের শিল্প-কলকারখানা বন্ধ রাখা হলেও রোববার থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প-কারখানাগুলো খুলে দেওয়া হয়েছে। হঠাৎ করে শিল্পকারখানা খোলার ঘোষণার পর গণপরিবহণ বন্ধের মধ্যেই চরম ভোগান্তি নিয়ে শনিবার সকাল থেকে কর্মস্থলের উদ্দেশে রওয়ানা দেন পোশাক শ্রমিকরা। পরে শ্রমিকদের যাতায়াতের সুবিধায় কিছু সময়ের জন্য লঞ্চ ও বাস চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। বিধিনিষেধের মধ্যে শিল্পকারখানা খুলে দেওয়ায় করোনার সংক্রমণ বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর চলমান কঠোর বিধিনিষেধ আরও ১০ দিন বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও বিধিনিষেধ বাড়ানোর পক্ষে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বৃদ্ধির জন্য তার মন্ত্রণালয় দায়ী নয় মন্তব্য করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব হলো স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া, যেটা আমরা হাসপাতালে দিচ্ছি। আমাদের দায়িত্ব টিকা দেওয়া, আমরা টিকা দেওয়ার চেষ্টা করছি। কেউ অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে এলে আমাদের দায়িত্ব তাকে সেবা দেওয়া, চিকিৎসা দেওয়া। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। এটাও বলি, হাসপাতালে কতগুলো বেড আছে, কতগুলো খালি আছে, কতটুকু ভর্তি আছে। তা নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনের মাধ্যমে জানানো হয়।’ সোমবার বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিধিনিষেধে কাঙ্ক্ষিত সাড়া না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ এই মন্ত্রী আরও বলেন, ‘কীভাবে সংক্রমণ বৃদ্ধি পায় তা সবাই জানে। আপনারা ফেরিতে দেখেন কীভাবে লোক আসে, মাস্ক পরে না এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে না, যার ফলে সংক্রমণটা বাড়ে। কিন্তু ওখানে তো আমাদের কেউ নেই। ডাক্তার-নার্সরা তো আর ফেরি কন্ট্রোল করে না, আমাদের ইন্ডাস্ট্রি কন্ট্রোল করে না। সেটা কন্ট্রোল করার দায়িত্ব অন্য বিভাগের রয়েছে। আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করে চলেছি এবং যতটুকু সম্ভব পালন করে যাব। যেখানে পালিত হচ্ছে না সে বিষয়ে আপনারা (গণমাধ্যম) তাদের প্রশ্ন করুন।’
এর আগে ৩০ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশীদ আলম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘আমরা আরও ১০ দিন বিধিনিষেধ বাড়ানোর সুপারিশ করেছি। যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, আমরা কীভাবে এ সংক্রমণ সামাল দেব? রোগীদের কোথায় জায়গা দেব? সংক্রমণ যদি এভাবে বাড়তে থাকে তাহলে কি পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব? অবস্থা খুবই খারাপ হবে এতে কোনো সন্দেহ নেই। এসব বিবেচনাতেই আমরা বিধিনিষেধ বাড়ানোর সুপারিশ করেছি।