আরাকান আর্মির মুখপাত্র ইউ খাইং থু খা বলেছেন, তারা ইতোমধ্যে পশ্চিমের জান্তা বাহিনীর কমান্ড হেডকোয়ার্টার দখল করেছে এবং তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখাইন রাজ্যের পুরো এলাকা নিতে যুদ্ধ চালাচ্ছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন জানান, ‘সীমান্তের ওপার বর্তমানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মির দখলে, তাই আমরা সীমান্তে কঠোর সতর্কতা বজায় রেখেছি যাতে কোনো অবৈধ অনুপ্রবেশ না ঘটে।’
এদিকে, প্রায় আট মাস ধরে মিয়ানমারের জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত থাকা আরাকান আর্মি, সীমান্ত এলাকা মংডু, বুথিডং এবং পালেতাওয়া দখল করার দাবি করেছে।
মিয়ানমারের জান্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ
আরাকান আর্মি জানিয়েছে, তারা মিয়ানমারের পশ্চিম অঞ্চলের ব্যাটেলিয়ান সদর দফতর এবং সীমান্ত চৌকিগুলো দখল করেছে। তারা জান্তা বাহিনীর ৫ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাটালিয়নকে দখলে নেওয়ার পর সামরিক হামলা প্রতিহত করে পাল্টা হামলা চালিয়েছে। গত ৭ ডিসেম্বর, আরাকান আর্মি জানিয়েছে, তারা রাখাইন রাজ্যের ৩০টিরও বেশি জান্তা ক্যাম্প দখল করেছে।
এখন পর্যন্ত মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আরাকান আর্মির এই নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে, বিবিসি বার্মিজের খবরে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থুরিন তুনকে আটক করা হয়েছে।
নাফ নদীতে নিষেধাজ্ঞা এবং বাংলাদেশ সীমান্তে সতর্কতা
আরাকান আর্মি তাদের ওয়েবসাইটে ঘোষণা করেছে, মংডু শহর এবং আশপাশের এলাকায় হামলা অব্যাহত রেখেছে তারা। এই পরিস্থিতিতে, নিরাপত্তার জন্য নাফ নদীর মিয়ানমারের অংশে নৌ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। একই সাথে, বাংলাদেশ সীমান্তের নাফ নদী এলাকায় টহল বাড়ানো হয়েছে এবং সেখানে ছোট নৌকাগুলোর চলাচলে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।
বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে স্থানীয় সাংবাদিক আজিম নিহাদ জানান, ‘সীমান্তে আরাকান আর্মির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের খবর আসার পর, গত দুই দিন ধরে টেকনাফ ও কক্সবাজারসহ বাংলাদেশ সীমান্তের বিভিন্ন এলাকায় সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে।’
জেলা প্রশাসন মাইকিং করে জনসাধারণকে সতর্ক করছে এবং বিজিবি ও কোস্ট গার্ডকে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘আমরা সীমান্তে যাতায়াত বন্ধ রাখার জন্য সকল ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি এবং মানুষকে সচেতন করার জন্য মাইকিংও করা হচ্ছে।’
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের শঙ্কা
আরাকান আর্মির রাখাইন রাজ্যের পুরো অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কারণে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ এবং বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা মনে করছেন— যেহেতু এই অঞ্চলটি আরাকান আর্মির দখলে, রোহিঙ্গা ইস্যু আরো বেশি জটিল হয়ে উঠতে পারে।
মেজর (অব.) এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘এখন আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকা অঞ্চলের কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে রোহিঙ্গারা জান্তা বাহিনীর পক্ষ নিয়ে থাকায় এই সংকট আরো বাড়বে।’
বিশ্লেষকদের মতে— আরাকান আর্মির বিরুদ্ধে যুদ্ধে পরাজিত সশস্ত্র রোহিঙ্গা সংগঠনগুলোর বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের আশঙ্কা রয়েছে। তারা মনে করছেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে এই অস্থিরতা বাংলাদেশের মিয়ানমারের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্কেও প্রভাব ফেলতে পারে। এছাড়া বর্তমানে বাংলাদেশ এবং ভারতের সম্পর্কের টানাপড়েনের মধ্যে এই নতুন অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে। সূত্র: বিবিসি