বিদেশ ফেরত যাত্রীদের করোনা নেগেটিভ সনদ থাকা সাপেক্ষে ৩ দিনের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। পরবর্তীতে করোনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ আসলে তাদের ১১ দিন হোম কোয়ারেন্টিন পালন করতে হবে। যারা ভ্যাকসিনের দুটি ডোজই নিয়েছেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের পরিবর্তে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। গত বৃহস্পতিবার রাতে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়েছে।
প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সুবিধা সম্পর্কিত জটিলতা নিরসনে জুম প্লাটফর্মে এ জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনের সময় ১৪ দিন থেকে ৫ দিন করার প্রস্তাব করেছিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সুবিধার সংকট থাকায় এর মেয়াদ আরও কমিয়ে ৩ দিন করা হলো। তবে ভারত থেকে যারা স্থলবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করবেন তাদের অবশ্যই ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন পালন করতে হবে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনের সভাপতিত্বে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইমরান আহমদ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলম ছাড়াও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব এবং বিভিন্ন এজেন্সির প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ভারতে আটকে পড়া প্রবাসী বাংলাদেশীরা স্থল বন্দরের মাধ্যমে দেশে আসতে পারবেন বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় প্রশাসন তাদের ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করবে। বিদেশ ফেরত বাংলাদেশীদের মধ্যে যাদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ দেয়া আছে এবং কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট আছে তারা সরাসরি ১৪ দিন হোম কোয়ারেিন্টনে থাকতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করবে।
বিদেশ ফেরত বাংলাদেশীদের মধ্যে যাদের কোভিড ভ্যাকসিনের একটি ডোজ দেয়া আছে অথবা কোন ডোজ দেয়া হয়নি এবং কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট আছে তাদের ৩ দিনের জন্য বাধ্যতামূলক প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে প্রেরণ করা হবে। পরবর্তীতে কোভিড টেস্ট নেগেটিভ আসলে তাদের পরবর্তী ১১ দিন বাধ্যতামূলকভাবে হোম কোয়ারেন্টিন পালন করতে হবে। এক্ষেত্রেও স্থানীয় প্রশাসন তাদের হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করবে। আটকে পড়া কুয়েত এবং বাহরাইনে কর্মরত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রবাসী কর্মীদের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বিবেচনা করে ২৫ এপ্রিল হতে কুয়েত এবং বাহারাইন রুটে চলাচলকারী বাণিজ্যিক ফ্লাইলগুলোকে বিশেষ ফ্লাইটে রূপান্তরের মাধ্যমে যাত্রী পরিবহনের অনুমতি দেয়ার বিষয়েও সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সভায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, লকডাউন চলাকালে বিশেষ ফ্লাইটে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা ধারণার তুলনায় অধিক হওয়ায় বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন সুবিধা সংকুলান হচ্ছে না। যে সব যাত্রী হোটেল বুকিং দিয়ে আসছেন তারাও হোটেলে না গিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে যাচ্ছেন। ফলে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সকলকে ১৪ দিন রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এসব সীমাবদ্ধতা বিবেচনা করে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন ১৪ দিনের পরিবর্তে ৫ দিন করা হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, দেশে ক্রমবর্ধমান করোনা সংক্রমনের কারণে ১৪ ই এপ্রিল হতে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণার প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রাচ্যের চারটি দেশ সৌদি আরব, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান এবং সিঙ্গাপুর গমনেচ্ছু বেশ কয়েক হাজার বাংলাদেশি আটকে পড়েন। এসব কর্মীদের বিশেষ ফ্লাইটের মাধ্যমে প্রেরণের জন্য গত ১৪ এপ্রিল ও ১৫ এপ্রিল পররাষ্ট্র সচিবের সভাপতিত্বে দুটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তীতে ১৫ এপ্রিল পররাষ্ট্র মন্ত্রী সভাপতিত্বে মন্ত্রী পর্যায়ের একটি জরুরী আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশে কোয়ারেন্টিনের জন্য হোটেল বুকিং সাপেক্ষে ওইসব দেশ হতে যাত্রী বহন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু দেশে আগত যাত্রীদের অনেকের হোটেল বুকিং না থাকায় তাদের সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিন ১৪ দিনের জন্য প্রেরণ করা হচ্ছিল। যা আগত যাত্রীদের তুলনায় অপর্যাপ্ত।