চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিদেশি সহায়তা কমছে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা। বিদেশি অর্থায়ন কমার হিসাবে এ যাবৎকালে এটিই সবচেয়ে বেশি। অথচ ২০২০-২১ অর্থবছরে ভয়াবহ করোনা সংকটেও এডিপিতে এত পরিমাণে বৈদেশিক অর্থায়ন কমেনি। ফলে বৈদেশিক অর্থায়ন কাটছাঁটে রেকর্ড হতে যাচ্ছে। তবে বিদেশি অর্থায়ন ঠিক কতটা কমবে, তা চূড়ান্ত হবে একনেক সভায়। মার্চে একনেকের সভায় এটি চূড়ান্ত হতে পারে।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলনকক্ষে সংশোধিত এডিপি নিয়ে বর্ধিতসভা হয়। পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম এতে সভাপতিত্ব করেন। অংশ নেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব সত্যজিত কর্মকার প্রমুখ।
সভা সূত্রে জানা গেছে, বৈশ্বিক মন্দা ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে সবচেয়ে বেশি চাপে রয়েছে দেশের সামষ্টিক অর্থব্যবস্থা। ডলারের দাম বাড়া, টাকার মূল্যমান কমে যাওয়ায় এ চাপ সংকটে রূপ নিয়েছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিতে আমদানিব্যয়ও বেড়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় সব আমদানিপণ্যের দাম অনেক বেড়ে গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে সৃষ্ট সংকটের কারণে অনেক প্রকল্পের মালামাল বিদেশ থেকে আমদানি করা যাচ্ছে না।
নতুন করে এলসি খোলাও যাচ্ছে না। ফলে অনেক প্রকল্পের বিদেশি সরঞ্জাম আমদানি করাও সম্ভব হচ্ছে না। এসব কারণেই বড় আকারে বৈদেশিক ঋণ ব্যয় করা যাচ্ছে না। চলমান সংকট সবক্ষেত্রে প্রভাব ফেলেছে। যেমন- অনেক প্রকল্পের বিদেশি ঋণের সঙ্গে ম্যাচিং ফান্ড হিসাবে সরকারি তহবিলের অর্থ রয়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে অনেক ক্ষেত্রেই ম্যাচিং ফান্ডের অর্থ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে উন্নয়নসহযোগীরাও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অর্থছাড় করতে পারছে না।
ফলে চলতি অর্থবছরে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বৈদেশিক অর্থায়ন হচ্ছে ৭৪ হাজার ২০ কোটি টাকা। অথচ এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৯২ হাজার ২০ কোটি টাকা। বৈদেশিক অর্থের ১৮ হাজার কোটি টাকা খরচ হচ্ছে না- এমন তথ্য অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) অবগত করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
এর আগে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (এনইসি) সভায় নতুন এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেরেবাংলা নগরের পরিকল্পনা কমিশনের এনইসি সম্মেলনকক্ষে অনুষ্ঠিত এ সভায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীসহ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
চলতি বছর এক হাজার ৩৫০টি উন্নয়ন প্রকল্পে মূল এডিপির আকার ছিল দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। এডিপিতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে দেওয়া হবে এক লাখ ৫৩ হাজার ৬৬ কোটি ৯ লাখ টাকা। বিদেশি সহায়তা হিসেবে পাওয়া যাবে ৯৩ হাজার কোটি টাকা। তবে বৈদেশিক অর্থায়ন কমছে।
বর্ধিতসভায় অংশ নেওয়া একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, ‘বৈশ্বিক মন্দাসহ নানান কারণে সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক ঋণ কমবে। নানা কারণে প্রকল্পের টাকা খরচ করা যায়নি। তবে কত কমবে, তা এখনো চূড়ান্ত নয়। এটা চূড়ান্ত করার ক্ষমতা একমাত্র এনইসি সভার। সেখানে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা চূড়ান্ত হবে। প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে সংশোধিত এডিপি উত্থাপন করার জন্য আমরা বর্ধিতসভা করেছি।’
চলতি বছরে বরাদ্দের দিক থেকে শীর্ষে ছিল পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এ খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৭০ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা, যা এডিপির প্রায় ২৯ শতাংশ। এছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত ৩৯ হাজার ৪১২ কোটি টাকা, শিক্ষা খাত ২৯ হাজার ৮১ কোটি টাকা, গৃহায়ণ খাত ২৪ হাজার ৪৯৭ কোটি টাকা এবং স্বাস্থ্য খাত ১৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে। তবে বৈশ্বিক মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সংকটে অনেক প্রকল্পের টাকা খরচ করা যাচ্ছে না।