‘আমি একান্তভাবে সিলেটের মানুষ। প্রাপ্তির একটি নিয়ম আছে। সিলেট সিটি করপোরেশনের গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। নিজের জন্মস্থানে এমন একটি সম্মাননা গৌরবের। এই যে আমাকে সম্মান জানাচ্ছেন, আমি সেই মাহাত্ম্যের কাছে মাথা নত করি। আমার ভুলত্রুটি সব মাফ করে দেবেন।’
গত ১৬ মার্চ (বুধবার) রাতে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী আলী আমজাদের ঘড়ি ঘরের সামনে সিলেট সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে আজীবন সুকীর্তির স্বীকৃতি স্বরূপ গুণীশ্রেষ্ঠ সম্মাননা পেয়ে এভাবেই কথাগুলো বলেছিলেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
এর ঠিক দেড় মাস পর রোববার (১ মে) বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে সিলেটের রায় নগরস্থ ডেপুটি বাড়িতে বাবা-মায়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন দেশের খ্যাতনামা এই রাজনীতিবিদ। গত শুক্রবার (২৯ এপ্রিল) দিবাগত রাত ১২টা ৫৬ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
বরেণ্য রাজনীতিবিদ আবুল মাল আবদুল মুহিতের মৃত্যুতে তাঁর জন্মস্থান সিলেটের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তাকে নানাভাবে স্মরণ করছেন সিলেটবাসী। আজীবন সিলেটের জন্য কাজ করে যাওয়া ভাষাসৈনিক মুহিতকে অশ্রুসিক্ত নয়নে শেষ বিদায় জানাতে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছিল সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। একই অবস্থা ছিল নগরীর সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানেও। প্রচণ্ড রোদ আর তাপদাহ উপেক্ষা করে প্রিয় নেতার জানাজায় উপস্থিত হতে দূর-দূরান্তের থেকে এসে শামিল হয়েছিল হাজারো মানুষ। সিলেটের মানুষের কাছে তিনি মুহিত সাব নামেই পরিচিত ছিলেন। তাইতো চোখের জলে সবাই বলে উঠল ‘বিদায় মুহিত সাব’।
জানাজায় অংশ নিতে আসা সুনামগঞ্জের দিরাই এলাকার বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি কোনো দলের রাজনীতি করি না। কিন্তু মুহিত সাহেবকে আমি অন্তর থেকে পছন্দ করি। তার শেষ বিদায়ে উপস্থিত হতে পেরেছি, এজন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।
জানাজায় উপস্থিত হয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, মুহিত সাহেব আমাকে খুব স্নেহ করতেন। তিনি একজন নির্লোভ ব্যক্তি ছিলেন। তার মতো সৎ ব্যক্তিতে হারিয়ে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। তিনি এই সিলেটের জন্য অনেক কাজ করে গেছেন তিনি। সিলেটবাসীকে সবসময়ই ভালোবেসে গেছেন। তাকে বিদায় দিতে সত্যি আমাদের কষ্ট হচ্ছে।
সিলেটের ডাক পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার নুর আহমদ বলেন, মুহিত সাবকে নিয়ে আমার জীবনে অনেক স্মৃতি আছে, তা কোনো দিনই ভুলার মতো নয়। তাকে আমি সত্যিই মিস করব।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সিলেটের ব্যুরো প্রধান মকসুদ আহমদ মকসুদ বলেন, তাকে হারিয়ে সত্যি আমরা এক মূল্যবান রত্ন হারিয়ে ফেললাম। তিনি আমাদের অন্তরে অনেক দিন থাকবেন।