অর্ধেক নয়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শতভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে কারখানা পরিচালনা করতে চায় তৈরি পোশাক খাতের সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রকোপ রোধে সরকার অফিস-আদালত, কল-কারখানায় ৫০ শতাংশ কর্মকর্তা-কর্মীচারীদের দিয়ে পরিচালনার নির্দেশনা দিয়েছে। এই নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে ৫০ শতাংশ নয়, শতভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে কারখানা পরিচালনার জন্য অনুমতি চেয়ে সম্প্রতি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দিয়েছে সংগঠন দুটি।
এ বিষয়ে বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট ড. রুবানা হক বলেন, করোনার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পোশাক খাত। এখন বেশি কিছু অর্ডার আসছে। এগুলো সময়মতো শিপমেন্ট করতে না পরালে একদিকে কারখানাগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে, অন্যদিকে বায়াররা বিকল্প জায়গা খুঁজবেন। বায়াররা হাত ছাড়া হয়ে যাবে। তাই আমরা করোনা রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শতভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দিয়ে কারখানা চালানোর জন্য সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে।
বিকেএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, শতভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে কারখানা পরিচালনার জন্য সরকারের কাছে আবেদন করেছি। গত বছর করোনার মধ্যেও আমরা সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনা করেছি। আমাদের তো কোনো সমস্যা হয়নি। এবারও হবে না বলে আশা করছি। সরকারের নির্দেশনা রফতানিমুখী শিল্পের জন্য প্রযোজ্য হবে না বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক।
বিজিএমইএর প্রেসিডেন্ট তার চিঠিতে বলেন, করোনার প্রথম ঢেউ সামলে পোশাক খাত ঘুরে দাঁড়ানো শুরু করেছে। এখাতে বায়ারদের অর্ডার আসছে ও শিপমেন্ট চলছে। এখন আবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। করোনারোধে সরকার অফিস আদালত, কল-কারখানায় ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে চালু রাখতে নির্দেশনা দিয়েছে। সরকার নির্দেশনা অনুসারে চললে কারখানাগুলো সময়মতো শিপমেন্ট করতে পারবে না। তাতে বিশাল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় কারখানাগুলো সরকার প্রণীত স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করেছিল বিধায় তৈরি পোশাক শিল্পে করোনার সংক্রমণ ছিল শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশেরও কম। করোনার সংক্রমণ কমলেও কারখানাগুলোয় স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে কাজ করা হচ্ছে। এখন আরও বেশি নিয়ম মেনে চলবো।
চিঠিতে আরও বলা হয়, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টি নিয়ে কঠোরভাবে মনিটরিং করা হচ্ছে। আরও কঠোর নজরদারির আওতায় আনা হবে। কারখানা খোলা ও বন্ধের সময় প্রবেশ ও বাহির পথে যেন শ্রমিক সমাবেশ না ঘটে, সেজন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানাগুলো পরিচালনার সর্বোচ্চ প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। চলমান করোনা মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে পশ্চিমা বিশ্বে তৈরি পোশাকের অর্ডার ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কমেছে। ক্রেতারা তাৎক্ষণিক শিপমেন্টের পাশাপাশি দাম কমানোর জন্য চাপ দিচ্ছেন। অন্যথায় অর্ডার বাতিলের হুমকি আছে। যা আমাদের জন্য মোটেও কাম্য নয়।
উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সোমবার ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এতে শিল্পকারখানা ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে পরিচালনার পাশাপাশি গর্ভবতী, অসুস্থ, ৫৫ বছরের বেশি বয়সী কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বাড়িতে রেখে কাজ করানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়। নির্দেশনাটি বাস্তবায়ন করতে ওই দিনই শ্রম মন্ত্রণালয় তার অধীন শ্রম অধিদফতর এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরকে (ডিআইএফই) নির্দেশনা দেওয়া হয়।