মাহশা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ‘সরকারবিরোধী’ বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় আরও তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন ইরানের একটি আদালত। কঠোর ও একরোখাভাবে বিক্ষোভ দমন নিয়ে সৃষ্ট তীব্র আন্তর্জাতিক সমালোচনা উপেক্ষা করেই এ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হলো।
এবার মৃত্যুদণ্ড পাওয়া তিনজন হলেন- সালেহ মিরহাশেমি, মাজিদ কাজেমি ও সাইদ ইয়াগৌবি।
ইসফাহান নগরীতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে স্বেচ্ছাসেবী বাসিজ মিলিশিয়ার সদস্যদেরকে হত্যার অভিযোগে ওই তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। তবে এই মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে পারবেন।
এর আগে শনিবার (৭ জানুয়ারি) মোহাম্মদ মাহদি কারামি ও সৈয়দ মোহাম্মদ হোসেইনি নামের দুই বিক্ষোভকারীকে ফাঁসি দেয় ইরান।
তাদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সময় ইরানের আধাসামরিক বাহিনীর এক সদস্যকে হত্যা ও ‘আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার’ অভিযোগ আনে ইরানের বিচার বিভাগ। অভিযোগে তাদের দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
জানা যায়, ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড বাহিনী সংশ্লিষ্ট বাসিজ মিলিশিয়া বিক্ষোভ দমনে সবচেয়ে বেশি সক্রিয়া ভূমিকা রাখছে।
এর আগে গত ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিকেও মাত্র চার দিনের ব্যবধানে মোহসেন শেকারি ও মাজিদ রেজা রেহনাভার্দ নামে দুই বিক্ষোভকারীকে জনসম্মুখে ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল।
তাদর বিরুদ্ধেও আধাসামরিক বাহিনীর এক সদস্যকে আঘাত করা এবং নিরাপত্তা বাহিনীর দুই সদস্যকে হত্যার অভিযোগ ছিল।
এভাবে বিক্ষোভের মধ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করার অভিযোগ এনে আদালতের একের পর এক বিক্ষোভকারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়াকে ‘লজ্জাজনক বিচার’ বলে বর্ণনা করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন।
এমনকি, সোমবার (৯ জানুয়ারি) বিক্ষোভকারীদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বিক্ষোভ দমনের জন্য ইরানের নিন্দা করেন পোপ ফ্রান্সিস।
ইরানে জনসম্মুখে নারীদের বাধ্যতামূলক হিজাব পরাসহ কঠোর পর্দা পালনের নিয়ম রয়েছে। এ বিধিগুলো তদারকির জন্য দেশটিতে ‘নৈতিকতা বা নীতি পুলিশ‘ নিয়োগ করা ছিল ।
নীতি পুলিশের একটি দল, গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরান থেকে ২২ বছর বয়সী মাহশা আমিনিকে আটক করে। আমিনি তার পরিবারের সঙ্গে তেহরানে ঘুরতে গিয়েছিলেন।
আটকের পর পুলিশি হেফাজতে অসুস্থ হয়ে পড়লে মাহশাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৬ সেপ্টেম্বর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে তেহরানে ব্যাপক আন্দোলন শুরু হয়। পরে পুরো ইরানে সে আন্দোলন-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তা রূপ নেয় সরকারবিরোধী আন্দোলনে।
বিক্ষোভে এখন পর্যন্ত ৫১৬ বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস নিউজ এজেন্সি। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার গোষ্ঠী অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, গণবিক্ষোভ দমাতে ও সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ভয় ছড়াতেই এসব মৃত্যুদণ্ড দিচ্ছে রাইসি প্রশাসন।
তবে এসব সমালোচনার মধ্যেও সোমবার ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, রাষ্ট্রের অবস্থান নমনীয় করার কোনো পরিকল্পনা এখন পর্যন্ত নেই।
‘যারা জনসমাগম ঘটে এমন এলাকায় আগুন দিচ্ছেন, ইসলিামিক আইনে তারা সন্দেহাতীতভাবে দেশদ্রোহী। আর দেশদ্রোহের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।’