আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকায় গণসমাবেশের মাধ্যমে মাঠ দখলের টার্গেট নিয়েছে বিএনপি। তারা এদিন সর্বোচ্চ গণজমায়েত ঘটানোর পরিকল্পনা নিয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলের নেতারা এই মহাসমাবেশ ঘিরে গত এক মাস ধরে নানা ধরনের হুমকি-হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছেন।
নেতারা বলছেন, সব বাধা উপেক্ষা করে ১০ ডিসেম্বর সবচেয়ে বড় মহাসমাবেশ হবে। অচল করে দেওয়া হবে রাজধানী। পক্ষান্তরে এই সমাবেশ ঘিরে ‘বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি’ মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। পাল্টা শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখার ঘোষণা এসেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। বিএনপিকে মোকাবিলায় সর্বোচ্চ কৌশল নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বিএনপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো অরাজকতা পরিস্থিতি সৃষ্টি না হয়, সেদিকে কড়া নজর রাখবে সরকার।
ক্ষমতাসীনরা বলছেন, বিজয়ের মাসে শোনা যাবে ‘জনতার সমুদ্রগর্জন’। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি একাধিক সমাবেশ-অনুষ্ঠানে বলেছেন, এখন ছাড় দিচ্ছি, ডিসেম্বরে ছাড়ব না। বিএনপিকে আর আগুন নিয়ে খেলতে দেওয়া হবে না। জনগণ তাদের প্রতিহত করবে। মুক্তিযুদ্ধের মাসে রাজপথ বিএনপির থাকবে না, থাকবে আওয়ামী লীগের। এই রাজপথ মুক্তিযুদ্ধের রাজপথ, বিজয়ের মাসের রাজপথ, বিজয়ের চেতনার রাজপথ।
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার গুলশানে দলের চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ঢাকায় বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ ‘বানচাল’ করতে ক্ষমতাসীনরা ‘বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে’। সামগ্রিকভাবে এমন একটা আবহাওয়া তৈরি করছে ঢাকার বিভাগীয় সমাবেশকে কেন্দ্র করে, যেন মনে হচ্ছে যে, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় একটা যুদ্ধ হবে। আমরা খুব স্পষ্ট করে বলেছি, এখনো বলছি, আবারও বলছি, ঢাকার সমাবেশটা হচ্ছে আমাদের একটা বিভাগীয় সমাবেশ। আমরা যে ১০ বিভাগকে কেন্দ্র করে বিভাগীয় শহরে সমাবেশের কর্মসূচি দিয়ে ছিলাম, সেই সমাবেশগুলোর শেষ সমাবেশটা হচ্ছে ঢাকায়। ঢাকার এই সমাবেশ থেকে পরবর্তী কর্মসূচি, পরবর্তী দাবি-দাওয়াগুলো নিয়ে আরও বৃহত্তর আন্দোলন নিয়ে আমরা সামনে আসব। এটা তো চূড়ান্ত সমাবেশ নয়, চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি নয়। এটা হচ্ছে আমাদের স্বাভাবিক বিভাগীয় গণতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।
সরকারকে উদ্দেশ্য করে ফখরুল বলেন, তারা হুমকি দিচ্ছেন বিএনপির পরিণতি ‘হেফাজতের মতো হবে’—ঐ একটা জিনিসই উনারা পারেন, অভ্যস্ত আর কি। সেই অবস্থা এখন আর নেই। আমি খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, হেফাজতের সময়ে তারা যেটা করেছেন, এখন জনগণের সঙ্গে সেটা তারা করতে পারবেন না।
মোকাবিলায় প্রস্তুত ক্ষমতাসীনরা:
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ১০ ডিসেম্বর ঘিরে বিএনপির যে কোনো বিশৃঙ্খলা-সন্ত্রাস মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছে। সারা দেশের সর্বস্তরের নেতাকর্মীকে সতর্ক অবস্থানে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ঢাকার আশপাশের জেলাগুলোর নেতাকর্মী ও সংসদ সদস্যদের বাড়তি কিছু দায়িত্বও দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কেন্দ্র থেকে বলা হয়েছে, ঢাকার প্রবেশমুখে নেতাকর্মীরা যেন বিশেষ সতর্ক থাকে। মূলত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দিয়েই ঐদিন সব নিয়ন্ত্রণ করার সিদ্ধান্ত রয়েছে সরকারের।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিষ্কার করে জানিয়ে দিয়েছেন, গণতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করলে কোনো বাধা দেওয়া হবে না। আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড করার চেষ্টা করা হলে ছাড় দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর ঢাকার অন্যতম প্রধান প্রবেশমুখ সাভারে দলটি সমাবেশ কর্মসূচি দিয়েছে। সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানা শাখার নেতাকর্মীরা মির্জা গোলাম হাফিজ কলেজ মাঠে সমাবেশ করবে। কলেজটি নবীনগর ও বাইপাইলের মাঝামাঝি। সেখান থেকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক কাছেই। কাঁচপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের কাছে একই দিনে সমাবেশের প্রস্তুতি নিয়েছেন। কেন্দ্র থেকে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেয়নি। এছাড়া রাজধানীর পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগ জমায়েত করবে, যাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা সেদিন বের হতে না পারেন। জেলা শহরগুলোতে আওয়ামী লীগ জমায়েত ও মিছিলের কর্মসূচি পালন করবে। গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে জেলার নেতাদের সঙ্গে বসেছেন। সেখানে তিনি সজাগ থাকার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার জন্য বলেছেন। এদিকে, বিএনপির কর্মসূচির আগে আগামী ৮ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের ৩০তম সম্মেলন হওয়ার কথা রয়েছে। তবে বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থায় কোনো সংঘাতে না জড়ানোর বিষয়েও সতর্ক করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে।
১০ ডিসেম্বর ঘিরে সতর্ক পুলিশ:
১০ ডিসেম্বর ঘিরে পুলিশ ও র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। তৎপরতা বাড়াচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সূত্রে জানা গেছে, ১০ ডিসেম্বর সামনে রেখে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ডিএমপির সব পর্যায়ের পুলিশ সদস্যদের ছুটি না নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিএনপির থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। বিশেষ করে আন্দোলন করতে গিয়ে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনায় ইতিমধ্যে যেসব নেতাকর্মী মামলার আসামি হয়েছেন তাদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। দ্রুত তাদের আইনের আওতায় আনা হতে পারে। সব মিলিয়ে ঐদিন সহিংসতা ঠেকাতে কঠোর অবস্থানে থাকবে পুলিশ।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করাই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ। কেউ যদি সাধারণ মানুষের ওপর হামলা করে, জানমালের ক্ষতি করে, বোমাবাজি করে, তাহলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।