বিএনপির আন্দোলনের হুমকিকে গুরুত্ব না দিয়ে হালকাভাবেই নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির আন্দোলনের হুমকি দিয়ে আসায় এটা এখন হাস্যকর বিষয়ে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন সরকার ও আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা। তবে আন্দোলন দাঁড় করতে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি সন্ত্রাসের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে বলেও তারা আশঙ্কা করেছেন। আর সে ধরনের চেষ্টা হলে তা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী দিয়ে কঠোরভাবে প্রতিহত করতে সরকার প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন তারা।
গত কিছুদিন ধরেই বিএনপি এবং দলটির নেতৃত্বাধীন জোটের নেতারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ডাক দেবে বলে ঘোষণা দিয়ে আসছেন। বিএনপি নেতারা বলছেন নির্দলীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তাস্তর এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে আন্দোলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। ঈদের পরেই তারা এই আন্দোলনের কথা বলেছেন। যদিও তারা এখনও আন্দোলনের দিনক্ষণ এবং কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করেনি।
এদিকে বিএনপি ও তাদের জোট নেতাদের আন্দোলনের হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার। আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন বিএনপি দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলনের কথা বলছে কিন্তু এখন পর্যন্ত সরকারের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের আন্দোলন দাঁড় করাতে পারেনি। সরকার বিরোধী আন্দোলনে জনগণের যে সমর্থন প্রয়োজন বিএনপি সেটা পাবে না। আবার জনসমর্থন না পেলেও বিএনপি-জামায়াত অতীতের মতো দেশে জ্বলাও-পোড়াওসহ অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি চেষ্টা করতে পারে এমন আশঙ্কাও করছে সরকার ও আওযামী লীগ।
বিএনপির এই আন্দোলনের হুমকিকে হাস্যকর বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গত ৫ মে নোয়াখালীতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বিএনপি গত ১৩ বছরে ২৬ বার আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এখন বিএনপির আন্দোলনের কথা শুনলে মানুষ হাসে। গত ১৩ বছরে বিএনপি ২৬ বার আন্দোলনের ডাক দিয়ে পারলো না, পারবে কোন বছর? তাদের আন্দোলনে প্রশ্ন সবার, এই বছর না ওই বছর, আন্দোলন হবে কোন বছর?
আওয়ামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা জানান, বিএনপি দীর্ঘদিন চেষ্টা করেও মাঠে আন্দোলন দাঁড় করাতে পারেনি। তাদের প্রতি জনগণের কোনো সমর্থন নেই। তবে এ অবস্থায় তারা এখন আন্দোলনের নামে জ্বালাও, পোড়াও, সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতে পারে। অতীতেও ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫ সালে তারা বোমাবাজিসহ এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে এবং এতে অনেক মানুষের প্রাণ ঝরেছে। সরকার তাদের এ ধরনের যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সতর্ক রয়েছে বলে ওই নীতিনির্ধারকরা জানান।
আবারও রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হতে পারে জানিয়ে সরকারের কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক গত বৃহস্পতিবার (৫ মে) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, আবার রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হবে বলে মনে হচ্ছে। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে উত্তাপ্তের কথা যেটা বলেছি, তারা (বিএনপি) আন্দোলনের হুমকি দিচ্ছে। তারা ধর্মঘট করবে, বাংলাদেশকে অচল করে দেবে। আমরা মনে করি, যাই হোক দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড থেমে থাকবে না।
তবে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার প্রস্তুত বলে আওযামী লীগ ও সরকারের নীতিনির্ধারকরা জানান। তারা বলেন, সরকার অনেক শক্তিশালী অবস্থানে আছে। অতীতের মতো ওই ধরনের কোনো ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করলে সরকারের আইন-শৃঙ্খলণা রক্ষাবাহিনী কঠোর অবস্থান নেবে। যে কোনো সন্ত্রাসী তৎপরতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা দমনে আগে থেকেই কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগও রাজপথে থাকবে। রাজনৈতিকভাবে যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি প্রতিহত করতে স্বয়ংক্রীয় থাকবে দলের নেতাকর্মীরা।
এ বিষয়ে নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বাংলানিউজকে বলেন, বিএনপির দুর্নীতিবাজ নেতৃত্ব দলটির নেতাকর্মীদের কাছেই গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। জনগণ তাদের কথা শুনবে কেন? জনগণের কাছে বিএনপির কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই, তাই তাদের আন্দোলনের হুমকি নিয়েও জনগণের কোনো ভাবনা নেই। আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছি। অতীতে খালেদা জিয়া আন্দোলনের নামে ৯৩ দিন দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান করে পরে নাকে খত দিয়ে বাসায় গেছেন। অতীতের মতো জ্বালাও-পোড়াও, মানুষ হত্যার কোনো সুযোগ নেই। সরকার অত্যন্ত শক্তিশালী, দেশবিরোধী কোনো তৎপরতা চালাতে দেওয়া হবে না। এই ধরনের চিন্তা-ভাবনা করলেই তাদের বিপদ আছে।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, আমরা আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে দল গোছানোর কাজ করছি। বিএনপি-জামায়াতের অপরাজনীতি, ভয়, ভীতি, হুমকিতে আমরা ভীত নই। আন্দোলনের নামে অতীতে তারা বোমাবাজি করেছে, মানুষ পুড়িয়ে মেরেছে। তাদের এ কাজগুলো মানুষ ঘৃণা করে। যতই তারা আন্দোলনের হুমকি দেবে, ততই তারা জনগণ থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হবে। জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। তারা যদি আবারও ষড়যন্ত্র করে জ্বালাও, পোড়াও, মানুষ হত্যা, দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে সরকার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী ভালোভাবেই বোঝে কী করতে হবে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও মানুষের পাশে থাকবে। অতীতেও ছিল, আগামীতেও থাকবে, এটা আওয়ামী লীগের অঙ্গীকার।