জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল কর্মপরিকল্পনার আওতায় রাজশাহীতে গণশুনানি করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিআরটিএ কার্যালয়ে এ গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। গণশুনানিতে পুলিশের সার্জেন্ট ও বিআরটিএর কর্মকর্তাদের হয়রানির কথা বলতে গিয়ে কেঁদেছেন এক চালক।
লাইসেন্স নিয়ে কষ্টের কথা বলতে গিয়ে গণশুনানিতে কেঁদে ফেলেন নাটোরের বাসচালক আবদুল মমিন। তিনি জানান, তার লাইসেন্সের বয়স ১০ বছরের বেশি। এখন তার ভারী যানের লাইসেন্স প্রয়োজন। ঘুরতে ঘুরতে তার লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। চার মাস তার চাকরিও নেই। এখন নতুন করে হালকা যানের লাইসেন্স নিতে হবে। তা ছাড়া ভারী গাড়ি চালানো যাবে না। এই অবস্থায় বিআরটিএর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলা যায় না। বলে যে বেরিয়ে যান।
চালক মমিনের এ কথায় সমর্থন দিয়ে অন্য চালকেরা হাততালি দেন। এরপর বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার তাকে এক দিনের মধ্যেই লাইসেন্স দেওয়ার নির্দেশনা দেন কর্মকর্তাদের।
গণশুনানিতে কয়েকজন চালক জানান, তারা ২০১৯ সালে লাইসেন্স করতে দিয়েছেন। কিন্তু এখনো লাইসেন্স পাননি। দু-তিন মাস পরপর বিআরটিএ কার্যালয়ে আসেন। তখন হাতে লেখা লাইসেন্সের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়। দীর্ঘ সময় ধরে তারা এ ভোগান্তির মধ্যে আছেন।
এ সময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান এ সমস্যার কারণ জানতে চান কর্মকর্তাদের কাছে।
বিআরটিএর রাজশাহী সার্কেলের কর্মকর্তারা জানান, লাইসেন্স কার্ড প্রস্তুতের দায়িত্বে থাকা আগের প্রতিষ্ঠান টাইগার আইটির কারণে রাজশাহীর প্রায় ৩৫০ জন চালক এমন দুর্ভোগের মধ্যে আছেন।
এ সময় বিআরটিএ চেয়ারম্যান বলেন, টাইগার আইটি কালো তালিকাভুক্ত হয়ে পড়ায় আর কাজ পায়নি। সারা দেশের কিছু ড্রাইভিং লাইসেন্সের কাজ তারা শেষ করে যায়নি। কোনো ডেটাবেজও দিয়ে যায়নি। ফলে চালকদের লাইসেন্স দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে এবার তিনি উদ্যোগ নেবেন। আগের জমা দেওয়া টাকাতেই চালকদের নতুন করে লাইসেন্স দেওয়া হবে।
বিআরটিএর চেয়ারম্যান এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তাৎক্ষণিকভাবে কিছু সমস্যা সমাধানের নির্দেশ দেন। শুনানিতে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সাবিহা সুলতানা, বিআরটিএর রাজশাহী সার্কেলের উপপরিচালক এসএম কামরুল হাসান ও সহকারী পরিচালক মোশাররফ হোসেনও উপস্থিত ছিলেন। তারাও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেন।
এরপর রাজশাহী জেলা পুলিশের ট্রাফিক পরিদর্শককে ডেকে পাঠান বিআরটিএ চেয়ারম্যান। ট্রাফিক পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন এসে ই-ড্রাইভিং লাইসেন্সের বৈধতা সম্পর্কে জানেন বলে জানান। বিআরটিএ চেয়ারম্যান তাকে এই লাইসেন্সের বিষয়ে সব ট্রাফিক সার্জেন্টকে জানানোর নির্দেশনা দেন।
গণশুনানিতে রাজশাহী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক, রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী, রাজশাহী ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, রাজশাহী ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফরিদ আলী প্রমুখ বক্তব্য দেন।
রাজশাহী বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক বলেন, নাটোরের একচালক নিজের কষ্টের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। বিষয়টি বিআরটিএ চেয়ারম্যান দেখেছেন।
এ নিয়ে বিআরটিএ চেয়ারম্যান নুর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, ই-ড্রাইভিং লাইসেন্স চালুর পরপরই তারা পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) চিঠি দিয়েছেন। সারা দেশে পুলিশের ইউনিটে চিঠি দিয়েছেন, যেন মামলা না দেওয়া হয়। এই কার্ডে কিউআর কোড আছে। সার্জেন্ট তা যাচাই করতে পারেন। এরপরও মামলা দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।