সংগঠনটি বলছে, সরকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চরমভাবে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। মাত্রাতিরিক্ত বায়ুদূষণের কারণে দেশে স্বাসকষ্টজনিত রোগীর সংখ্যা এবং এ রোগে মৃত্যু ভয়াবহ বৃদ্ধি পেয়েছে।
শনিবার (২৩ মার্চ) সংবাদ মাধ্যমে বাপার সভাপতি অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের পাঠানো এক বিবৃতিতে এসব কথা বলেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, সম্প্রতি বায়ুদূষণের দেশ হিসেবে শীর্ষে বাংলাদেশ, নগর হিসেবে দ্বিতীয় ঢাকা এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গত ১৯ মার্চ দেশের বিভিন্ন দৈনিক ও জাতীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের ‘বৈশ্বিক বায়ু মান প্রতিবেদন ২০২৩’-এ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি বাতাসের মান নিয়ে তৈরি করা এই লাইভ বা তাৎক্ষণিক আইকিউএয়ারের সূচক একটি নির্দিষ্ট শহরের বাতাস কতটা নির্মল বা দূষিত, সে সম্পর্কে মানুষকে তথ্য দেয় ও সতর্ক করে। বায়ুদূষণের অন্যতম উপাদান পিএম ২.৫ বা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার উপাদান ধরেই এই বায়ুর মান নির্ণয় করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে। ১৩৪টি দেশ ও অঞ্চলের প্রায় ৩০ হাজার নজরদারি স্টেশন থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে আইকিউএয়ার প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।
সেখানে দেখা গেছে, ২০২৩ সালে বাংলাদেশের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার (পিএম ২.৫) উপস্থিতি ছিল ৭৯ দশমিক ৯ মাইক্রোগ্রাম। এটি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বেঁধে দেওয়া মানদণ্ডের চেয়ে অন্তত ১৬ গুণ বেশি।
বায়ু দূষণের কারণগুলোর মধ্যে প্রাকৃতিক ও আবহাওয়া জনিত কারণ, নগর পরিকল্পনায় ঘাটতি, আইনের দুর্বলতা, আইন প্রয়োগের সীমাবদ্ধতা, ভৌগোলিক কারণ এবং জনসংখ্যার ঘনত্ব অন্যতম। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজ থেকে ৩০ শতাংশ, ইটভাটা ও শিল্প কারখানা থেকে ২৯ শতাংশ, যানবাহন থেকে ১৫ শতাংশ আন্তঃদেশীয় বায়ু দূষণ থেকে ৯.৫%, গৃহস্থালি ও বা রান্নার চুলার কাজের থেকে ৮.৫% এবং বর্জ্য পোড়ানো থেকে ৮% বায়ু দূষণ ঘটে। বায়ুদূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন একটি অন্যটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত। জীবাশ্ম জ্বালানির দহন ও শিল্পকারখানায় নির্গত ধোঁয়া প্রচুর পরিমাণে ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন ডাই-অক্সাইড, মিথেন, নাইট্রাস অক্সাইড, ক্লোরোফ্লোরো কার্বন ও ওজন নির্গত করে, যা গ্রিনহাউজ গ্যাস নামেও পরিচিত। এসব দূষকের মধ্যে ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেনকে শর্ট লাইভ ক্লাইমেট পল্যুশন বা স্বল্প আয়ুর জলবায়ু দূষক বলা হয়।
পর পর গত কয়েক বছর ধরে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যত কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় আমরা তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করছি। দেশের বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি।
বায়ু দূষণ রোধে বাপার সুপারিশ ও দাবিগুলো হচ্ছে— নির্মল বায়ু আইন-২০১৯ দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে; নির্মাণ কাজের সময় নির্মাণ স্থান ঘেরাও দিয়ে রাখতে হবে ও নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের সময় ঢেকে নিতে হবে; শুষ্ক মৌসুমে সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিস, ওয়াসা এবং পরিবেশ অধিদপ্তর এর সমন্বয়ে দূষিত শহরগুলোতে প্রতি দিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর পর পানি ছিটানোর ব্যবস্থা করতে হবে; অবৈধ ইটভাটা গুলো বন্ধ করে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং বিকল্প ইটের প্রচলন বাড়াতে হবে; ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ফিটনেস বিহীন গাড়ি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং পরিবেশ ক্যাডার সার্ভিস, পরিবেশ আদালত চালু ও কার্যকর করতে হবে।