আসছে পবিত্র রমজান মাস। চলতি মার্চের শেষ সপ্তাহে শুরু হচ্ছে রোজা। ইতোমধ্যেই সেহরি ও ইফতারের চূড়ান্ত সময়সূচি প্রকাশ করেছে ইসলামিক ফাউন্ডেশন। রোজায় চাহিদা থাকে বিভিন্ন ফলের। তবে এখন থেকেই সেই ফলের দাম বাড়তি। সামনে চাহিদা বাড়লে ফলের দাম আরও বাড়তে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরাও। এখন বাজারে এক পিস কলা বিক্রি হচ্ছে ৭-১০ টাকা, আর ছোট এক পিস আনারসের দাম ২০-২৫ টাকা। যা রমজানে আরও বাড়ার কথা বলছেন বিক্রেতারা। সেই সঙ্গে আমদানি করা ফল বিক্রি হচ্ছে অধিক দামে।
শুক্রবার (৩ মার্চ) কারওয়ান বাজার, হাতিরপুল বাজার, ফার্মগেট বাজার ঘুরে এসব দৃশ্য দেখা গেছে।
এসব বাজার ঘুরে জানা গেছে, বিদেশি ফলের দাম আকাশচুম্বী। বিক্রেতারা বলেছেন, আমদানি কম হওয়াতে দাম বেড়েছে। আপেল প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা থেকে শুরু করে আরও অধিক দামে বিক্রি হচ্ছে।
রমজানে ফল আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে, এলসি (ঋণপত্র) খোলা যাচ্ছে না, ফলের দাম দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে; অথচ রোজায় ফলের চাহিদা থাকে ব্যাপক। এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে গত ৮ ফেব্রুয়ারি সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছিলেন, ডলার সংকট কমলেই ফল আমদানিতে এলসি (ঋণপত্র) খোলার অনুমোদন দেওয়া হবে। দেশে বিভিন্ন ধরনের ফলের প্রচুর ফলন হচ্ছে। আর নিজেদের পণ্যেরও ভালো দাম পাওয়া দরকার। পরিস্থিতি ইমপ্রুভ (উন্নতি) করলে, সেটি (এলসি) খুলে দেওয়া হবে।
জানা গেছে, ডলার সংকটে পণ্য আমদানি করতে নানামুখী অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের। এলসি খুলতে পারলেও তা সীমিত। এতে ফল আমদানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। ফলের বাজারে অস্থিরতা চলছে।
এদিকে এখনই বাড়তে শুরু করেছে আনারস, কলা, বেল, পেপের দাম। রোজায় এসব দেশি ফলের প্রচুর চাহিদা থাকে। সারাদিন রোজা রাখার পর অনেকেই বেলের সরবতে তৃষ্ণা মেটাতে চায়। কিংবা শরীরের সুস্থতায় ইফতারে রাখতে চায় কলা, পেপে কিংবা আনারসের মতো রসালো ফল।
কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, ছোট আনারসের পিস কমপক্ষে ২০ টাকা। মাজারি ৩৫-৪০ টাকা। আর একটু বড় হলে ৬০ বা ৭০ টাকা। সেই সাথে কারওয়ান বাজারে এক ডজন চাম্পা কলা ৬০ টাকা, এক ডজন বাংলা কলা ৬০-৭০ টাকা, এক ডজন সবরি কলা ৯০-১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
কলা বিক্রেতা সবুর উদ্দিন বলেন, গত সপ্তাহে এক ডজন চাম্পা ৩৫-৪০ টাকা ছিল। সবরি ছিল ৭৫-৮০ টাকা। দাম বাড়তেছে, সামনে আরও বাড়বো।
কারওয়ান বাজারে ডাব বিক্রেতা হিরন মিয়া বলেন, ‘আজ একশ ডাব কেনা পরছে ৬ হাজার। গত শুক্রবার কিনেছি ৪২০০ টাকা। একই সাইজ। এক সপ্তাহে ১৮০০ টাকা বাড়তি দিছি। বেশি দামে না বেচলে বাড়ি যাওয়া লাগবো গা।’
কারওয়ান বাজারের চেয়ে আরও একটু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পথে ঘাটে বা অলি গলিতে। খামাড়বাড়ি মোড়ে আনারস বিক্রেতা মোহাম্মদ আলিকে ছোট আকারের আনারস প্রতি পিস ৩০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। কথা বলতে চাইলে তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারের দরের সঙ্গে এখানে মিলবে না। ওখানে কোনো গাড়ি ভাড়া লাগে না। কিনে পাশেই বিক্রি করে। আমাদের গাড়ি ভাড়া আছে, লেবার খরচ আছে। একটু লাভ করতে হয়। সব মিলিয়ে একটু বেশি পরে যায়।
পাশে থাকা আরেক দোকানদার বলেন, সামনের সপ্তাহে এই দামে বেচতে পারব কিনা সন্দেহ। প্রতিদিনই দাম একটু একটু বেশি।
মানিক মিয়া এভিনিউতে প্রতি পিস পাকা পেপে আকারভেদে ৬০ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে দেখা গেছে। পেপে ক্রেতা আশরাফ উদ্দিন বলেন, রাজধানীর একেক বাজারে একেক রকম দাম মনে হয়। কোনো সিস্টেম নেই। এখানে এক রকম, কারওয়ান বাজারে একটু কম পাবেন। পাশে আরেক বাজারে যান দেখবেন একটু বেশি। মানে যেখানে যেমন খুশি দাম নেয় এরা।
এদিকে বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এখনও বাজারে বড়ই পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজি হিসেবে। বেলের চাহিদা বেড়েছে আগের চেয়ে। হাতিরপুল বাজারের বিক্রতা বলেন, শীত শেষ। তাই ফলের চাহিদা বাড়ছে। বেল এখন প্রচুর বিক্রি হয়। যা ২০ দিন আগেও কম ছিল। দামও বাড়ছে যোগ করেন তিনি।
কারওয়ান বাজারের বেল বিক্রেতা শফি মিয়া বলেন, পাইকারি বাজারে বেল আসছে ভালো। আজ মাঝারি আকারের যে বেল কিনেছি ৪৫ টাকা দরে, ৫৫-৬০ টাকা খুচরা বিক্রি করেছি। সেই বেল গত সপ্তাহে আরও ১০ টাকা কমে কিনেছি। রোজায় বেলের প্রচুর চাহিদা থাকে। আরও অনেক দাম বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।
বিদেশি ফলের খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকার কারওয়ান বাজারে গত বছর লাল আপেল বিক্রি হতো ২১০ থেকে ২২০ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে তিনশ টাকার উপরে। সবুজ আপেলও তিনশ টাকার উপরে বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ১২০ থেকে ১৪০ টাকা কেজির কমলার দাম বেড়ে হয়েছে ২২০ টাকার বেশি। মাল্টার দাম এখন ২২০ থেকে ২৫০ টাকা হয়েছে। আসন্ন রমজানে ফলের অধিক দাম বাড়লে ক্রেতা সংকটে পরবে কিনা সেই শঙ্কাও রয়েছে বিক্রেতাদের মধ্যে। কেননা বিক্রেতারা মনে করছেন মানুষের আয়ের টানেও ভাটা পড়েছে।