মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আইসোলেশনের নতুন নিয়ম চালু করেছে। এখন থেকে করোনায় আক্রান্ত হলে আর ১০ দিন আইসোলেশনে থাকতে হবে না। আক্রান্ত ব্যক্তিকে মাত্র পাঁচদিন আলাদা থাকতে হবে। এ নিয়ম চালু করার কারণ দেশটিতে আবারও সংক্রমণ বাড়ছে। মাত্র এক সপ্তাহ আগেও দেশটিতে দৈনিক সংক্রমণ ছিল গড়ে আড়াই লাখের মতো। এর পরের সাত দিনের পরিস্থিতি আরও ভয়ানক। দেশটিতে গড় দৈনিক সংক্রমণ ৪ লাখ ছাড়িয়েছে। ফলে হাসপাতাল উপচে পড়ছে রোগীর ভিড়, শয্যা পাওয়া যাচ্ছে না অনেক হাসপাতালেই।
এরই মধ্যে করোনার অতি-সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রন ইউরোপের বিভিন্ন দেশে মূল সংক্রামক স্ট্রেন হয়ে উঠেছে। কিন্তু আমেরিকায় ডেল্টা ও ওমিক্রন, দুই স্ট্রেনেই সংক্রমণ বাড়ছে। যাকে বলা হচ্ছে, ‘ডেলমিক্রন’। এর অর্থ কোনও এলাকায় একই সঙ্গে ডেল্টা ও ওমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধি। দেশের শীর্ষস্থানীয় এপিডিমিয়োলজিস্ট অ্যান্টনি ফাউচি-ও চিন্তা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, দু’টি স্ট্রেনেরই ক্ষমতা বৃদ্ধি ভয়ের। কারণ ওমিক্রনে বাড়াবাড়ি না-হলেও ডেল্টা সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছেই। টেক্সাসসহ আমেরিকার একাধিক প্রদেশে ন্যাশন্যাল গার্ডকে নামানো হয়েছে বিপর্যয় মোকাবিলায়। চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ ও অন্যান্য সমস্যায় সাহায্য করছে তারা।
সংক্রমণ মারাত্মক বেড়ে যাওয়ায় লাখ লাখ মানুষ ঘরবন্দি। প্রশাসনের কাজকর্মেও ব্যাঘাত ঘটছে। ব্যবসা-বাণিজ্যও ক্ষতির মুখে। এ অবস্থায় সংক্রমণ চিহ্নিত করা ও করোনা-মুক্ত কিনা জানতে, ঘনঘন পরীক্ষা করাতে বলা হচ্ছে লোকজনকে। একই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও। বিশেষ করে বহু লোকের শরীরে ওমিক্রন সংক্রমণের পরে কোনও উপসর্গ নেই। ফলে পরীক্ষা না-করালে রোগ ধরার উপায় থাকছে না। কিন্তু উপসর্গহীন ব্যক্তি আরও বহু লোকের মধ্যে কোভিড ছড়িয়ে দিচ্ছে। ওমিক্রনকে ধরতে তাই দেশের সব বাসিন্দাকেই করোনা পরীক্ষা করাতে বলা হচ্ছে। যাদের উপসর্গ নেই, তাদেরও বলা হয়েছে।
মানুষের ঘরবন্দি দশায় দেশের অর্থনীতি নিয়ে চিন্তায় জো বাইডেনের সরকার। তাই গত সপ্তাহে আমেরিকার স্বাস্থ্য দফতর আইসোলেশনে থাকার সময়সীমা কমিয়ে ৫ দিন করে নির্দেশিকা জারি করেছে। আগে দেশটিতে ১০ দিন আলাদা থাকার নিয়ম ছিল। ইউএস সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি) প্রধান রোশেল ওয়ালেনস্কি আবার জানিয়েছেন, কোয়ারেন্টাইন থেকে বের হওয়ার আগে পিসিআর টেস্ট করানোরও দরকার নেই। তার যুক্তি, সংক্রমণের ১২ সপ্তাহ পরেও পজিটিভ আসতে পারে রিপোর্ট। তাই ৫ দিন আলাদা থাকলেই হবে।
এদিকে আমেরিকার স্বাস্থ্য বিশারদরা বলছেন অন্য কথা । নির্দিষ্ট দিন বিচ্ছিন্নবাসের বদলে বন্দিদশা থেকে বের হওয়ার আগে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ কি না, তা নিশ্চিত করার পরামর্শ দিয়েছেন তারা। ফাউচি বিষয়টি ব্যাখ্যা করে জানিয়েছেন, ৫ দিন পরে কোনোভাবে যদি শরীরে ভাইরাস থেকে যায়, বিশেষ করে যদি ডেল্টা সংক্রমণ হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে কোয়রান্টাইনের পরে সংক্রমিতের সংস্পর্শে আসা সবার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তাই পরীক্ষার ফল নেগেটিভ কি না, তা দেখে নিতে হবে।