বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের শপথ গ্রহণ বাতিল ঘোষণা করেছেন সমিতির সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। আদালতের অন্য রায়ের ‘পুরোনো কাগজ’ দেখিয়ে প্রতারণা করে জায়েদ খান শপথ নিয়েছেন এমন দাবি করে তার শপথ বাতিল করেন ইলিয়াস কাঞ্চন। পাশাপাশি গত শুক্রবারের শিল্পী সমিতির প্রথম মিটিংও বাতিল ঘোষণা করেন শিল্পী সমিতির সভাপতি।
আনুষ্ঠানিকভাবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানকে শপথ পড়ানোর তিন দিন পর শপথ বাতিল করলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।
সোমবার সন্ধ্যায় এফডিসির বাগানে সংবাদ সম্মেলনে ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘৯ ফেব্রুয়ারির অন্য রায়ের কোর্টের একটি কাগজ দেখিয়ে শপথ নেন জায়েদ খান। নতুন কোনো কাগজ দেখাতে পারেননি৷ তড়িঘড়ি করে শুক্রবার শপথ নিয়েছেন। এভাবে শপথ গ্রহণের মাধ্যমে তিনি শিল্পী সমিতির সঙ্গে, সভাপতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। একইসঙ্গে মিডিয়ার সঙ্গেও ছলনা করেছেন। তাঁর শপথ আমি অবৈধ ঘোষণা করলাম।’
গত ২৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১৭৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন চিত্রনায়ক জায়েদ খান। নিপুণ আক্তার পান ১৬৩ ভোট। এরপর টাকা দিয়ে ভোট কেনাসহ একাধিক অভিযোগ আনেন নিপুণ। পরে জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে শিল্পী সমিতির আপিল বোর্ডে আবেদন করেন নিপুণ। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে করণীয় জানতে আবেদন করেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান।
বৈঠকে শেষে জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে সাধারণ সম্পাদক পদে নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করেন বোর্ডের প্রধান ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সোহানুর রহমান সোহান। এর পরদিন ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ পরিষদের বিজয়ীরা শপথ নেন।
নিপুণকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা এবং নিজের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন জায়েদ খান। রিটের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনী আপিল বোর্ডের জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন। সেই সঙ্গে জায়েদের প্রার্থিতা বাতিল করে নিপুণকে বিজয়ী ঘোষণার বৈধতা প্রশ্নে রুল জারি করা হয়। এছাড়া নিপুণের অভিযোগের বিষয়ে নির্বাচনী আপিল বোর্ডকে সিদ্ধান্ত নিতে সমাজসেবা অধিদফতরের চিঠির কার্যকারিতাও স্থগিত করা হয়।
গত ৭ ফেব্রুয়ারি জায়েদ খানের সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থিতা বাতিল করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনের আপিল বোর্ডের দেওয়া সিদ্ধান্ত স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এক সপ্তাহের জন্য স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি জায়েদের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন আদালত। এক সপ্তাহের মধ্যে রিটের বিবাদীসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
এই আদেশের বিরুদ্ধে গত ৯ ফেব্রুয়ারি লিভ টু আপিল করেন নিপুণ আক্তার। শুনানি শেষে চেম্বার বিচারপতি ওবায়দুল হাসান চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের পদের ওপর স্থিতাবস্থা জারি করেন এবং শুনানির জন্য আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ চেম্বার আদালতের আদেশ বহাল রাখেন এবং হাইকোর্টের জারি রুল নিষ্পত্তি করতে আদেশ দেন।
গত ২ মার্চ জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ। বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
রায়ের পর জায়েদ খান সাধারণ সম্পাদক হিসেবে শিল্পী সমিতিতে গিয়ে শপথ পড়েন।
গত রোববার শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খানের প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত।
শপথ নিতে গিয়ে জায়েদ খান প্রতারণা আশ্রয় নিয়েছেন এমন দাবি করে সোমবার ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘জায়েদ যে কাগজ দেখিয়েছেন সেটি গত ৯ ফেব্রুয়ারির রায়ের। এটা ধোঁকা। এটা ছলনা। এটা অপরাধ।’
ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, যেহেতু শপথ অবৈধ, তাই গত মিটিংয়ে জায়েদ খানের উপস্থিতিও অবৈধ। এ কারণে মিটিংয়ের কোরামও পূর্ণ না হওয়াতে শুক্রবারের মিটিংও বাতিল করা হলো।’