করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় দেশে রেকর্ড পরিমাণ আমদানি হয়েছে। তবে সেই হারে রফতানি ও রেমিট্যান্স আয় বাড়েনি। ফলে বৈদেশিক বাণিজ্যের ঘাটতি ব্যাপক হারে বাড়ছে। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এক লাখ সাত হাজার ৭৫৮ কোটি টাকার বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবে ভারসাম্যের (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) ওপর করা হালনাগাদ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) ৩ হাজার ১৬৬ কোটি ডলারের বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫৩ দশমিক ৯৭ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের এ পাঁচ মাসে আমদানি হয়েছিল ২ হাজার ২৪ কোটি ডলারের পণ্য।
চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ইপিজেডসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য রফতানি করে এক হাজার ৮৬৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২২ দশমিক ৬৫ শতাংশ বেশি।
এ হিসাবে চলতি অর্থবছরের পাঁচ মাসে পণ্য বাণিজ্যে সার্বিক এক হাজার ২৫৩ কোটি ডলার বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়েছে বাংলাদেশ। দেশীয় মুদ্রায় ঘাটতির এ পরিমাণ এক লাখ সাত হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ৫৯ শতাংশ বেশি। অর্থাৎ, দ্বিগুণেরও বেশি। গত অর্থবছরে একই সময়ে বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৫০৪ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, সেবা খাতের ঘাটতি ১৪০ কোটি ১০ লাখ ডলার। বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাণ করা হয়। করোনাকালীন সময়ে মানুষ ভ্রমণ কম করেছে। চলতি অর্থবছরের প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ তেমন বাড়েনি। অর্থবছরের পাঁচ মাসে ১৫১ কোটি ১০ লাখ ডলারের এফডিআই পেয়েছে বাংলাদেশ। তার আগের অর্থবছরে যা ছিল ১৪৮ কোটি ১০ লাখ ডলার।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সরাসরি মোট যে বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকে নিট এফডিআই বলা হয়। আলোচিত সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগ আগের বছরের চেয়ে মাত্র ৫ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৬৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আগের অর্থবছরে যা ছিল ৬৩ কোটি ১০ লাখ ডলার।
করোনায় বৈশ্বিক অর্থনীতির নাজুক পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স) টান পড়েছে। চলতি হিসাবে ঘাটতি অর্থ হলো সরকারকে ঋণ নিয়ে চলতি লেনদেনের দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে।
কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্সে ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দিয়েছে। অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে ৬১৮ কোটি ডলার ঘাটতি রয়েছে।
দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (পোর্টফোলিও ইনভেস্টমেন্ট) ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে। অর্থবছরে প্রথম পাঁচ মাসে শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) যা এসেছিল তার চেয়ে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলার চলে গেছে। তার আগের অর্থবছর শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ আরও বেশি অর্থাৎ ১৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার নেগেটিভ (ঋণাত্মক) ছিল।