বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেছেন, চারটি কোম্পানিকে এক কোটি করে মোট চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। ভোক্তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে আমরা এ অনুমতি দিয়েছি। আমাদের প্রতিদিন প্রায় চার কোটি ডিম প্রয়োজন হয়। সেই হিসেবে আমরা মাত্র একদিনের ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছি। বাজার স্থিতিশীল রাখতে প্রয়োজন হলে আমরা আরও বেশি ডিম আমদানির অনুমতি দেব।
সোমবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন সচিব।
তিনি বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত বাজার পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা দেশীয় উৎপাদিত ডিমকে অগ্রাধিকার দিতে চাই। তবে এই সুযোগ নিয়ে ডিমের অতিরিক্ত দাম নেওয়াটা যৌক্তিক নয়।
চার প্রতিষ্ঠানকে ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অনুমোদন পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– মেসার্স মীম এন্টারপ্রাইজ, প্রাইম এনার্জি ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড সাপ্লাইয়ার্স, টাইগার ট্রেডিং, অর্নব ট্রেডিং লিমিটেড।
সচিব বলেন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় গতমাসে ডিমের দাম ভোক্তা পর্যায়ে ১২ টাকা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু এই দামে বিক্রি হচ্ছে না। তাই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চারটি প্রতিষ্ঠানকে চার কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। এর মধ্যে একটি কোম্পানি ভারত থেকে আমদানি করবে বলে জানিয়েছে। বাকিরা সুবিধামতো সোর্স থেকে আমদানি করবে।
ডিম আমদানিতে কোনো শর্ত আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমদানিতে কোনো শর্ত নেই। তবে বিক্রির ক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করতে হবে। তবে বার্ড ফ্লু-মুক্ত দেশ থেকে ডিম আমদানি করতে হবে। এছাড়াও আমদানি করা ডিম বার্ড ফ্লু ভাইরাস কিংবা ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ামুক্ত মর্মে সনদ দাখিল করতে হবে।
ডিম আমদানিতে দেশীয় উৎপাদিত বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যেহেতু আমাদের দেশে প্রতিদিন চার কোটি ডিমের চাহিদা রয়েছে তাই এই ডিম আমদানিতে দেশীয় উৎপাদনের বাজারে কোনো প্রভাব পড়বে না। আমরা দেশীয় উৎপাদিত ডিমকে অগ্রাধিকার দিতে চাই। তবে এই সুযোগ নিয়ে তারা সিন্ডিকেট করে যদি দাম বাড়িয়ে দেয় তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে আমদানির বিকল্প থাকবে না।
আরো অনেক পণ্যের দাম নির্ধারণের পরও নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার আলু এবং পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এই নির্ধারণের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞ, কোল্ড স্টোরেজের মালিক এবং খুচরা পর্যায়ের ব্যবসায়ী ও তাদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এটা যৌক্তিক দাম বলে আমরা মনে করি। এক্ষেত্রে পণ্য সাপ্লাই চেইনের সব ধরনের লভ্যাংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে কি না তা মনিটরিং করতে সব জেলা প্রশাসক এবং উপজেলা পর্যায়ের নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও কৃষি বিপণন ও উপজেলা কৃষি এবং মৎস্য কর্মকর্তাদের নিয়ে ভোক্তা অধিকার অভিযান পরিচালনা করবে। মনিটরিং আরো জোরদার করতে ডিসিদের নিয়ে দু’একদিনের মধ্যে একটি ভার্চুয়াল বৈঠকও করা হবে।
ভোক্তা অধিকার খুচরা পর্যায়ে অভিযান করলেও পাইকারি পর্যায়ে কোনো অভিযান করা হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পণ্যের উৎস পর্যায়েও মনিটরিং করা হচ্ছে। সাধারণত কোল্ড স্টোরেজের মালিকরা কিন্তু সেখানে আলু রাখেন না। আলু রাখেন বড় ব্যবসায়ীরা। জেলা প্রশাসকদের বলা হয়েছে ওই ব্যবসায়ীদের নিয়ে বসে তাদের দায়িত্ববোধ সম্পর্কে সচেতন করা। তারপরও তারা যদি নির্ধারিত দামে বিক্রি না করলে কোল্ড স্টোরেজেও অভিযান চালানো হবে। ইতোমধ্যেই কোনো জেলায় শুরু হয়েছে। সোর্স পর্যায়ে মনিটরিং করলে দাম কমে আসবে।