বৈশাখ শেষের দিকে, দরজায় কড়া নাড়ছে জ্যৈষ্ঠ। রাজধানীর বাজারে দেখা যাচ্ছে পাকা আম। ব্যবসায়ীদের অনেকে বলছেন, সাতক্ষীরার আম বাজারে এসেছে, এগুলো পরিপক্ব। আবার আরেক পক্ষ বলছে, আসেনি । ভারতীয় আমই বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে আবার ব্যবসায়ীদের একটি পক্ষের দাবি, সাতক্ষীরা থেকে আনা আম পরিপক্ব। তবে ক্রেতারা বলছেন, সাতক্ষীরার আমের কথা বলে যেসব আম বিক্রি করা হচ্ছে, সেগুলোতে স্বাদ-গন্ধ নেই, অপরিপক্ব।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন বাজারে যেসব আম রয়েছে, সেগুলোতে রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো স্বাস্থ্যসম্মত নয়। রাসায়নিক ব্যবহার করে পাকানো আম খেলে অ্যালার্জি, চুলকানি, হাত-পা ব্যথা ও বমির পাশাপাশি লিভারের সমস্যা হতে পারে।
সোমবার (৯মে) রাজধানীর গুলিস্তান ও মতিঝিল এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গোবিন্দভোগ ও গোপালভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে। তবে পল্টন এলাকায় বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ৩০০ টাকায়। এসব এলাকার দোকানগুলোতে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল কম। যারা আসছেন, তারা আম দেখে, দাম শুনে কিনতে আগ্রহী হচ্ছেন না। ব্যবসায় মন্দা।
গুলিস্তান ও মতিঝিল এলাকার খুচরা ব্যবসায়ী দাবি করছেন, তাদের আম পরিপক্ব। এতদিন তারা আমদানি করা আম বিক্রি করতেন। এখন বিক্রি করছেন সাতক্ষীরার আম। এ আম কোনো প্রকার রাসায়নিক ব্যবহার ছাড়াই পাকানো হয়েছে।
ছয় বছর ধরে গুলিস্তানের পাতাল মার্কেটের পাশেই ফল বিক্রি করেন আশরাফুজ্জামান। তিনি বলেন, আমরা বাদামতলী থেকে আম কিনে আনি। এগুলো সাতক্ষীরার আম। ওই জেলার আম বাজারে আসার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।
তবে তার পাশের দোকানদার আব্দুল আওয়াল ঠিক উল্টো কথা জানালেন। তিনি বলেন, এখনো বাংলাদেশের আম বাজারে আসেনি। ভারতীয় আমই বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে আসা আম পরিপক্ব ও স্বাদেও ঠিক আছে। রমজান মাসে ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি করছি ১৪০ টাকা কেজিতে। দেশি আম হলে ৪০ থেকে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হবে। দেশের আম এ সময়ে পরিপক্ব হয় না।
কারওয়ান বাজারে ফল ব্যবসায়ী পল্লব বলেন, আমার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরা। আমি এ বছর এখনো আমের ব্যবসা শুরু করিনি। কারণ এখনো আম পরিপক্ব হয়নি, আরও ১৫দিন পর থেকে আম আনতে শুরু করব।
আম কিনতে আসা নরসিংদীর বাসিন্দা আরিফ দোকানি আশরাফুজ্জামানের কাছে জানতে চান, আম ভালো ও পরিপক্ব কি না। জবাবে আশরাফ বলেন, একেবারে পাকা সাতক্ষীরার আম। আমের একটি অংশ কেটে দেওয়ার পর আরিফ খেয়ে বলেন, স্বাদ নেই। পানসে লাগে, আমি নেব না।
আম কিনতে আসা ক্রেতা মাওলানা নিছাফুজ্জামান বলেন, এগুলো নাকি সাতক্ষীরার হিমসাগর আম। কেজি ১৪০ টাকা কেজি। টেস্ট করে দেখলাম। স্বাদ পেলাম না। ভেতরে আঁটিও নরম। তাই কিনলাম না।
পল্টনের ফল ব্যবসায়ী ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম বলেন, রমজানে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা কেজি আম বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি করছি ২৫০ টাকা কেজিতে। বাজারে সাতক্ষীরার আম আসতে শুরু করেছে। তাই কমতে শুরু করেছে। সাতক্ষীরার পর রাজশাহী, চাঁপাইনবাগঞ্জের আম আসলে আরও কমে যাবে।
বাদামতলীর ব্যবসায়ী আনিস মোল্লাহ বলেন, আম একেবারে পরিপক্ব, কোনো ভেজাল নেই। রোববার ১১৫ থেকে ১২৫ টাকা দরে পাইকারি দরে আম বিক্রি করেছি। সাতক্ষীরা থেকে আসা আম আজ ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা.লেলিন চৌধুরী বলেন, আমের মধুমাস বলতে জ্যৈষ্ঠ মাসকে বুঝায়। এখনো আমের মৌসুম আসেনি। এরইমধ্যে দেখতে পাচ্ছি বাজারে নানা ধরনের পাকা আম বাজারে এসেছে। মূলত এগুলো অপরিপক্ব। আমগুলো রাসায়নিক দিয়ে পাকানো হচ্ছে। রাসায়নিকগুলোর মধ্যে রয়েছে কার্বাইড ও ইথোফেন। এ কার্বাইড তো খাওয়ার উপযোগী নয়। শিল্প-কারখানা ব্যবহার করা হয় কার্বাইড। এতে ফসফরাস ও আর্সেনিক নামের দুটি পদার্থ থাকে, যা বিষ সমতুল্য। এসব রাসায়নিক ব্যবহার করলে আমের রং পাকা হয়। ভেতরে শক্ত থাকে এবং কোনো স্বাদ থাকে না।
তিনি বলেন, আম আমাদের দেহের প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের অন্যতম উৎস। রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের পর আমরা যে আম খাই, তাতে পুষ্টি থাকে না। পাশাপাশি এই আম খাওয়ার পর অনেকের শরীরে এলার্জি জাতীয় সমস্যা হয়। তাতে অনেকের শরীর চুলকায়, হাত পা ব্যথা করে, বমি হয় কারো কারো ক্ষেত্রে শরীরে গুটি গুটিও হয়। অনেক ক্ষেত্রে পাতলা পায়খানাও হয়। পরিমাণে বেশি হলে লিভারের সমস্যা হয়। এটি আমাদের জন্য ক্ষতিকর। আশা করি যথাযথ কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর তথ্য অনুযায়ী, জ্যৈষ্ঠ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে গোবিন্দভোগ, গোপালভোগ, বোম্বাই ও বৈশাখীসহ বেশ কিছু জাতের আম সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পরিপক্ব হয়। এরপর আরও এক দেড় মাস পর রাজশাহী ও চাঁপাইবাবগঞ্জের আম্রপালি, হিমসাগর, ল্যাংড়া ও ফজলী আম বাজারে আসে।