চলচ্চিত্র বাংলা ও অসমীয়া সংস্কৃতির যোগসূত্র গড়বে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবটি এর একটি মাইলফলক।
বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আসামের গুয়াহাটিতে হোটেল ভিভান্ত মিলনায়তনে ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী স্মরণে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব’ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন তিনি।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে ও বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনের ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে সপ্তাহব্যাপী এ উৎসব উদ্বোধনে অতিথি হিসেবে যোগ দেন আসামের পরিবেশ, বন ও মৎস্যবিষয়ক মন্ত্রী পরিমল শুক্লাবৈদ্য। আসামের মুখ্যমন্ত্রীর সহধর্মিণী রিংকি শর্মা ভুঁইয়া বিশেষ আলোচকের বক্তব্য দেন।
প্রধান অতিথির বক্তৃতায় হাছান মাহমুদ আসামবাসীর উদ্দেশে বলেন, প্রতিবেশী বন্ধুরাষ্ট্রের আসাম আর বাংলাদেশের মানুষের ভাষা, সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের অনেক মিল রয়েছে। আমাদের পোশাকেরও মিল রয়েছে। আমরা একই পাখির কলতান শুনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকারের যৌথ উদ্যোগে নিশ্চয়ই দুই দেশের মানুষের বন্ধুত্ব আরও নিবিড় হবে, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলেও আমাদের যোগাযোগ আরও বাড়বে।
মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স সাত বছর। একাত্তরের অনেক স্মৃতি আমাকে আবেগতাড়িত করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগ্রামে ভারতের আন্তরিক সহযোগিতা, ভারতের সেনাবাহিনীর ভূমিকা আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস জুগিয়েছে। ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রক্তের অক্ষরে লেখা, যা কখনো ভুলব না।
অনুষ্ঠানে আসামের পরিবেশমন্ত্রী পরিমল শুক্লাবৈদ্য বলেন, পৃথিবীর মধ্যে একটি বিখ্যাত নাম শেখ মুজিবুর রহমান, যার নেতৃত্বে বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্র স্বাধীনতা পেয়েছে। তিনি বলেন, আমি ভারতের নাগরিক হলেও বাংলাদেশের সঙ্গে আমার ঠাকুরমার সম্পর্ক। আমার পূর্বপুরুষেরা একজন বিশ্বনন্দিত সংগ্রামী নেতা পেয়েছিলেন, যার নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা ভারতীয় নাগরিক হতে পারি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নামটা আমাদের মনের মধ্যে গেঁথে আছে।
সমাজগবেষক রিংকি শর্মা ভুঁইয়া বলেন, গুয়াহাটিতে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব আয়োজন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ, যেহেতু প্রতিবেশী বাংলাদেশ এবার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী পালন করছে।
আসামে দূতাবাস ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন
এদিন দুপুরে গুয়াহাটির আসাম ডাউন টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করেন তথ্যমন্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর এন এন দত্ত ও ভাইস চ্যান্সেলর নারায়ণ চন্দ্র তালুকদার মন্ত্রীকে স্বাগত জানান।
এ সময় তথ্যমন্ত্রী বলেন, আসাম ডাউন টাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার প্রতিষ্ঠা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আজ গর্বিত এবং এর মাধ্যমে ভারত ও বাংলাদেশের খ্যাতনামা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষা বিনিময় কর্মসূচির ক্ষেত্র উন্মোচিত হবে।
এর আগে গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনেও বঙ্গবন্ধু কর্নার উদ্বোধন করেন মন্ত্রী। আসামের প্রখ্যাত দুই ভাস্কর তুইচিন্দ্রাই জয়ন্ত ও জিতুমণি বৈশ্যের তৈরি বঙ্গবন্ধুর দুটি ভাস্কর্য এই কর্নারে স্থাপিত হয়েছে। পাশাপাশি তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ সেখানে সহকারী হাইকমিশন পরিচালিত ঐতিহ্যবাহী জামদানি বিপণিবিতান ‘অনামিকা’ উদ্বোধন করেন।
বাংলাদেশের সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম, সাইমুম সারওয়ার; তথ্য ও সম্প্রচারসচিব মো. মকবুল হোসেন; দিল্লিতে নিযুক্ত প্রেস মিনিস্টার শাবান মাহমুদ; গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনার শাহ মোহাম্মদ তানভীর মনসুর এসব অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। সফরসঙ্গী চিত্রতারকা ফেরদৌস, অপু বিশ্বাস ও সংগীতশিল্পী ফকির শাহাবুদ্দিন এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
২৩ ও ২৪ ফেব্রুয়ারি যথাক্রমে আগরতলা ও গুয়াহাটিতে শুরু হওয়া বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে ‘হাসিনা: আ ডটারস টেল’, ‘দেবী’, ‘পুত্র’, ‘সত্তা’, ‘গেরিলা’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘পোস্টমাস্টার’, ‘৭১’, ‘রাত জাগা ফুল’সহ ৩৬টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে