দেশের একমাত্র চতুর্দেশীয় স্থলবন্দর বাংলাবান্ধায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। এ বন্দরে এই অর্থ বছরে মোট রাজস্ব আদায় হয়েছে ৬৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। যার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৫৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
কাস্টমস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৫৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য মাত্রা নির্ধারণ করে দেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে আদায় হয়েছে ৬৪ কোটি ৭ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫ কোটি ৭৪ লাখ টাকা বেশি আদায় হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আদায় হয়েছিল ৬৪ কোটি ০৭ লাখ টাকা।
বন্দর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মহামারি করোনায় বৈশ্বিক মন্দা, ডলার সংকট, এলসি জটিলতা, বন্দর অভ্যন্তরে প্রয়োজন অনুযায়ী অবকাঠামো গড়ে না ওঠা ও বিভিন্ন সময় ভারত থেকে উল্লেখযোগ্য হারে পণ্য আমদানি কমে গেলেও বন্দরটিতে রাজস্ব আদায় বেড়েছে। বছর জুড়ে ডলার সংকট, এলসি জটিলতা ও পণ্য আমদানিতে ধীরগতি সমস্যা না থাকলে এ বন্দরে দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় হতো।
বাংলাবান্ধা বন্দরের তথ্যমতে, ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর মধ্যে ঐতিহাসিক মৈত্রী চুক্তির মাধ্যমে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের সম্ভাবনার বীজ রোপিত হয়। ১৯৯৭ সালে ১ সেপ্টেম্বর নেপাল এবং ২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে শুরু হয় ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম। ২০১৬ সালে এই বন্দরে ইমিগ্রেশন চালু হয়। ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি ভুটান থেকে পাথর আমদানির মধ্য দিয়ে শুরু হয় স্থলবন্দরের সঙ্গে চতুর্দেশীয় ব্যবসা কার্যক্রম। বিপুল পরিমাণ রাজস্বও আয় হচ্ছে এই বন্দরের মাধ্যমে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ভারত থেকে পাথর, মেশিনারিজ, প্লাস্টিক, ভুট্টা, অয়েল কেক (খৈল), আদা, গম, চাল, ফল ইত্যাদি আমদানি হয়। নেপাল ও ভুটান থেকে বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত পণ্য আমদানি করা হচ্ছে। একইভাবে দেশ থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য, আলু, ব্যাটারি, কোমল পানীয়, গার্মেন্ট সামগ্রী, ক্যাপ, হ্যাঙ্গার, সাবান, বিস্কুট, চানাচুর, জুস, কাচ, পার্টস, কটনব্যাগ, ওষুধ ও মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন দ্রব্য রপ্তানি হচ্ছে।
বাংলাবান্ধা সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহাঙ্গীর আলম জানান, মহামারি করোনাকাল থেকেই উচ্চ শুল্ক হারের পণ্য আমদানি কমে গেছে। তাছাড়া এ স্থলবন্দর থেকে রাজধানী ঢাকার দূরত্ব বেশি হওয়ায় খরচ বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে পণ্যের দাম বেশি পড়ে। এসব সমস্যা নিরসন হলে বন্দরটিতে লক্ষ্যমাত্রার থেকে দ্বিগুণ রাজস্ব আদায় সম্ভব।
বাংলাবান্ধা আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি আব্দুল লতিফ তারিন জানান, করোনার মধ্যেও বাংলাবান্ধা বন্দরে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে দ্বিগুণ রাজস্ব আয় হয়েছে। করোনার পর বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে মন্দা, ডলার সংকটসহ সৃষ্ট কিছু সমস্যা তৈরি হলেও বন্দরটিতে ভালো রাজস্ব আদায় হয়েছে। বন্দরের অবকাঠামোসহ সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য মহাপরিকল্পনা প্রয়োজন। সেটি পূরণ হলে সম্ভাবনাময়ী এ বন্দর দিয়ে শতশত কোটি টাকার রাজস্ব আদায় সম্ভব।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর ব্যবস্থাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানগত দিক থেকে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা একটি চারদেশীয় গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাবান্ধা বন্দরে অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে। ফলে বন্দরটিতে আমদানি-রপ্তানিতে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে। প্রতিদিন তিনশোর বেশি পণ্যবাহী ট্রাক সংশ্লিষ্ট দেশগুলোতে যাতায়াত করছে। এ বন্দরে প্রধান আমদানি হচ্ছে পাথর। ভুটান ও ভারত থেকে এই পাথর আমদানি করা হয়। পাথর ছাড়াও গম, ভুট্টা, গমের ভুসি, প্লাস্টিক, আদা, অয়েল কেক (খৈল), চাল, প্রসাধনী কাজে ব্যবহৃত রমেটেরিয়ালস আমদানি-রপ্তানি হচ্ছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের শুল্ক স্টেশনের সহকারী কমিশনার জেএম আলী আহসান সাংবাদিকদের জানান, শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম, দক্ষতা ও বন্দর সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সহযোগিতার কারণে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে রাজস্ব আদায় সম্ভব হয়েছে। ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণেই এ স্থলবন্দরটি অপার সম্ভাবনাময়। ভবিষ্যতে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু হলে দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর হিসেবে এখান থেকে জাতীয় রাজস্ব আয়ে যোগ হবে নতুনমাত্রা।