বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি সম্মান জানালেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। গতকাল সন্ধ্যায় দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি এ সম্মান প্রদর্শন করেন। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম টাইমসনাউনিউজ ওই অনুষ্ঠানের আগাম খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়- বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী দিবস উপলক্ষে দিল্লির বাংলাদেশ মিশন সফর করছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। এটিই কোনো দেশের সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি সম্মান জানাতে সে দেশের হাইকমিশনে ভারতের কোনো প্রতিরক্ষামন্ত্রীর প্রথম সফর। বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তির বছরে এই বিশেষ সম্মান দেখান রাজনাথ সিং। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী। ভারতীয় বাহিনী যুদ্ধে অংশ নেয়ার ১৩ দিনের মাথায় পাকিস্তান পরাজিত হয়।
বাংলাদেশ মিশনের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে- ঘণ্টাব্যাপী চলা দিল্লিস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রী রাজনাথ সিং। এতে পাকিস্তানকে পরাজিত করতে ভারত ও বাংলাদেশি বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন তিনি। একইসঙ্গে দুই দেশের মধ্যকার বিদ্যমান প্রতিরক্ষা সহযোগিতা দিনে দিনে আরও জোরদার হবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। তার বক্তব্যের বিষয়েও টাইমসনাউনিউজের খবরে আগাম ধারণা দেয়া হয়। রাতে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের এক বার্তায় প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তব্যের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। জানানো হয়, অনুষ্ঠানে মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেন, ভারতের সামরিক বাহিনী ও সরকারের পক্ষ থেকে আমি বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের ৫০তম বার্ষিকীর শুভেচ্ছা জানাচ্ছি এবং শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে তাদের সফলতা কামনা করছি। বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের জন্য এ বছর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ বছরই বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে, ভারত ও বাংলাদেশের কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপনেরও ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে এবং এ বছরই পালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। এই গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দাঁড়িয়ে আমি ১৯৭১ সালের যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর অবদানকে সম্মান জানাচ্ছি। বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর চেতনার মূলে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। এই সুযোগে আমি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখা ভারতীয় বাহিনীর ত্যাগের প্রতিও শ্রদ্ধা জানাতে চাই। তারা বাংলাদেশি ভাই-বোনদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছে। ’৭১ সালে ভারত অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও মিলিয়ন মিলিয়ন বাংলাদেশি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। সেই যুদ্ধের চেতনায়ই আজকে বাংলাদেশের গর্বিত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠেছে। আজ বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা বাহিনীতে সবচেয়ে বেশি সেনা পাঠাচ্ছে, যা কোনো কোইনসিডেন্ট বা কাকতালীয় ঘটনা নয়। পেশাদারিত্ব ও অঙ্গীকারের কারণে সমগ্র বিশ্বে আজ বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী সম্মানিত। আমি আনন্দিত যে, দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে সহযোগিতার সম্পর্ক স্থিতিশীলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা আলোচনা, বৈঠক, যৌথ প্রশিক্ষণ, অনুশীলন এবং উচ্চ পর্যায়ের বিনিময়ের মতো নানা কার্যক্রম চলছে দুই দেশের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে। এ বছর বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর তিন প্রধানই ভারত সফর করেছেন। এর বিপরীতে ভারতের সেনাপ্রধান ও বিমান বাহিনী প্রধান বাংলাদেশ সফর করেছেন। বাংলাদেশের সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণও দিয়েছে ভারত।