পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ৯ রানের জয়ে। ফারজানা হক পিংকির লড়াকু ব্যাটিংয়ের পর ফাহিমা খাতুনের আগুনঝরা বোলিংয়ে বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম জয় পেল বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি করেও দলকে জেতাতে পারেননি পাক ওপেনার সিদরা আমিন।
২৩৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে দুই পাক ওপেনার নাহিদা খান ও আমিনের ৯১ রানের জুটির পরও বাংলাদেশ যে ম্যাচে ফিরে আসবে তা ছিল কল্পনার বাইরে। ৪২তম ওভারে অলরাউন্ডার ওমাইমা সোহেলকে আউট করে হারতে বসা বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরান ফাহিমা। পরেই ওভারেই রুমানা আহমেদ তুলে নেন নিদা দারকে।
এর পরের ওভারে এসেই মূলত খেলা বাংলাদেশের দিকে ঘুরিয়ে দেন ফাহিমা। দুটি উইকেটের সঙ্গে আদায় করে রানআউটও। ৪৪ ওভার শেষে ১৮৮ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে পাকিস্তান। তবু বাংলাদেশের জন্য দুশ্চিন্তা হয়ে উইকেটে টিকে ছিলেন সেঞ্চুরিয়ান আমিন। ৪৮তম ওভারে তিনি রান আউটের ফাঁদে পড়ে ফিরে গেলে জয়ের সুবাস পেতে শুরু করে বাংলাদেশ।
এর আগে হ্যামিলটনে টসে হেরে আগে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। খেলতে নেমে দ্রুত ফিরে যান গত দুই ম্যাচে দারুণ শুরু করা শামিমা সুলতানা। আউট হওয়ার আগে ৩০ বলে করেছেন ১৭ রান। ৩৭ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
তার বিদায় থামাতে পারেনি আরেক ওপেনার শারমিন আক্তারের রান তোলার গতি। দশম ওভারেই পঞ্চাশ পার করে বাংলাদেশের দলীয় সংগ্রহ। আগ্রাসী ব্যাটিং করতে থাকা শারমিনকে যোগ্য সঙ্গ দেন ওয়ান ডাউনে নামা ফারজানা হক পিংকি। তবে ক্রিজে বেশিক্ষণ স্থায়ী হননি শারমিন। ৫৫ বলে ৪৪ রান করে ওমাইমা সোহেলের বোল্ড হয়ে ফিরে যান এই ওপেনিং ব্যাটার।
গত ম্যাচেই বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রথম অর্ধশতক এনে দেওয়া পিংকি এদিনও ছিলেন অনবদ্য। দ্বিতীয় উইকেটে শারমিনের সঙ্গে ৪২ রানের জুটি গড়ার পর তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক জ্যোতির সঙ্গে যোগ করেছেন ৯৬ রান। এদিকে অধিনায়ক জ্যোতিও খেলেছেন অধিনায়কোচিত এক ইনিংস। সাতিমা সানার বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ার আগে ৬৪ বল থেকে করছেন ৪৬ রান। ১৭৫ রানে তৃতীয় উইকেটের পতন ঘটে টাইগ্রেসদের।
অধিনায়ক ফিরে যাওয়ার পর রুমানা আহমেদ ও রিতু মণিকে নিয়ে শেষ চেষ্টা করেছিলেন পিংকি। তবে বলার মত কিছু করতে পারেননি কেউই। ৪৪ তম ওভারে ২০০ পার করে বাঘিনীদের দলীয় সংগ্রহ।
এই ম্যাচে আবারও চোখে পড়েছে রুমানা-রিতুদের ডেথ ব্যাটিংয়ের দুর্বলতা। শেষ ৬ ওভারে ৪ উইকেট হারানোয় বাংলাদেশ ডেথ ওভারে বাড়াতে পারেনি রান তোলার গতি। অবশেষে নির্ধারিত ৫০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৩৪ রান করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। পাকিস্তানি বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন নাশরা সান্ধু। ৩ টাইগ্রেস ব্যাটারকে সাঝঘরে ফেরত পাঠিয়েছেন তিনি।
টাইগ্রেসদের দেওয়া ২৩৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই দেখে শুনে ব্যাট করতে থাকেন এই দুই ওপেনার। ১৩ ওভারে পঞ্চাশ পার করে পাকিস্তানের দলীয় সংগ্রহ। ২৪তম ওভারে এসে প্রথম সাফল্যের দেখা পায় বাংলাদেশ। ৪৩ রান করা নাহিদাকে বোল্ড করে বাংলাদেশ সমর্থকদের আনন্দে ভাসান রুমানা আহমেদ।
ওয়ান ডাউনে ব্যাট করতে নামেন অধিনায়ক বিসমাহ মারুফ। জয়ের লক্ষ্যে ঠান্ডা মাথায় ব্যাট করতে থাকেন তিনি। এদিকে অপর প্রান্তে দারুণ খেলতে থাকা আমিন তুলে নেন চলতি বিশ্বকাপে নিজের প্রথম ফিফটি। ২৮তম ওভারের প্রথম বলে ফাহিমা খাতুনের বলে সিঙ্গেল নিয়ে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি।
শুরু থেকেই নিয়ন্ত্রিত বোলিং করে রান বলের ভারসাম্য বজায় রেখেছিলেন টাইগ্রেস বোলাররা। তবে ছেলেদের ক্রিকেটের মত এখানেও দুশ্চিন্তার নাম ক্যাচ মিস। ৩১তম ওভারে সেট ব্যাটার সিদরা আমিনের সহজ ক্যাচ ফেলেন পিংকি। এছাড়াও একাধিকবার রান আউটের সুযোগ মিস করে বাংলাদেশ।
অবশেষে ৩৮তম ওভারে বিসমাহকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে ফের স্বস্তি ফেরান অভিজ্ঞ পেসার জাহানারা আলম। অধিনায়কের বিদায়ে ক্রিজে আসেন অলরাউন্ডার ওমাইমা সোহেল। ৩৯তম ওভারে দু’টি হাফ চান্স আসলেও সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি বাংলাদেশ।
বাংলাদেশকে ম্যাচে ফেরানোর কৃতিত্বটা ফাহিমাকে দিতেই হবে। ৮ ওভার হাত ঘুরিয়ে ৩৮ রান দিয়ে দ্রুততম সময়ে ৩ উইকেট শিকার করেছেন ডানহাতি এই লেগ ব্রেক বোলার। অনবদ্য বোলিংয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কারও গেছে তার ঝুলিতে। ২ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সেরা বোলার রুমানা। একটি করে উইকেট শিকার করেছেন অভিজ্ঞ সালমা ও জাহানারা।