তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ সরকারের করজালের বাইরে রয়েছে। ৪৩৫টি জর্দা কারখানা এবং ৪৮ গুল কারখানার মধ্যে মাত্র ২১৮টি কারখানা কর প্রদান করে। ৯১ শতাংশ উৎপাদনকারী যন্ত্রের সাহায্য ব্যতীত হাতে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদন করে। সম্প্রতি ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর সহায়তায় ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের কর জালের বাইরে থাকার কারণ।
এক্ষেত্রে করণীয় বিষয়ে জানতে ‘ফ্যাক্টরস ইনহ্যাবিটিং স্মোকলেস ট্যাবকো ট্যাক্স পেমেন্টস বাই স্মোকিং ম্যানুফ্যাকচারর্স অপারেটিং আউটসাইড দ্য ট্যাক্স নেট ইন বাংলাদেশ’ গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়। গবেষণার ফলাফল তুলে ধরতে সোমবার (৫ এপ্রিল) জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে ওয়েবিনার আয়োজন করে তামাকবিরোধী সংগঠন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা আহছানিয়া মিশন, উবিনীগ, ভয়েস এবং প্রজ্ঞা।
গবেষক দলের প্রধান ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান ড. নাসিরউদ্দিন আহমেদ গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন। গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ৮টি বিভাগের ২৯টি জেলায় করজালের বাইরে থাকা ৮৮ জন ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকারীর মধ্যে ৩৩ শতাংশের বৈধ ট্রেড লাইসেন্স নেই।
গবেষণার সার্বিক ফলাফলে দেখা গেছে, সাধারণত বাড়িতে বা ক্ষুদ্র পরিসরে কারখানায় এসব তামাকপণ্য উৎপাদিত হয়। এসব কারখানায় মোট মাসিক গ্রস টার্নওভারের পরিমাণ ২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। গবেষণায় অনানুষ্ঠানিক উপায়ে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য উৎপাদনকেই ট্যাক্স কমপ্লায়েন্সের অন্যতম বাধা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
এছাড়াও এনবিআর এর দক্ষ জনবলের সংকট, মাঠ পর্যায়ের অবকাঠামো এবং সনাতন সরঞ্জাম ও পদ্ধতি এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে। আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় ট্যাক্স রিটার্ন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি এবং শক্তিশালী ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং পদ্ধতি অভাবে এখাতে উৎপাদনকারীরা কর ফাঁকি দেয়ার সুযোগ পায়।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর সদস্য (মূসক নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা) জাকিয়া সুলতানা বলেন, ‘শুধু রাজস্ব নয়, জনস্বাস্থ্যের বিবেচনায় ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যবহার কমলে স্বাস্থ্যখাতে খরচ কমে যাবে।’ ওয়েবিনাওে আরও বক্তব্য দেন ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে), বাংলাদেশ এর লিড পলিসি অ্যাডভাইজার এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাষ্ট্রিজ কর্পোরেশন (বিসিআইসি) এর সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস (সিটিএফকে) এর রিসার্চ ডিরেক্টর মারিয়া জি. কারমোনা এবং সাউথ এশিয়া প্রোগ্রামস ডিরেক্টর বন্দনা শাহ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ তামাকবিরোধী সংগঠনসমূহের নেতারা বক্তব্য দেন।
গবেষণায় জনস্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং রাজস্ব আয় বৃদ্ধির জন্য ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যের কর পদ্ধতি সংস্কারের সুপারিশ করা হয়। পাশাপাশি ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্যগুলোর মধ্যে মূল্য পার্থক্য কমিয়ে সহজলভ্যতা হ্রাস করাস্বয়ংক্রিয় ট্যাক্স রিটার্ন পদ্ধতি প্রচলন, আধুনিক যন্ত্রপাতিসহ এনবিআর জনবলকে প্রশিক্ষণ প্রদান, ট্র্যাকিং ও ট্রেসিং পদ্ধতি হিসেবে এসব পণ্যে ব্যান্ডরোল ব্যবহার, অনিবন্ধিত কারখানাগুলোকে করজালের আওতায় নিয়ে আসতে স্থানীয় সরকার প্রশাসনকে ক্ষমতা প্রদান এবং তামাকপণ্য উৎপাদনকারীদের পুরস্কার প্রদান না করার সুপারিশ করা হয়।