বাংলাদেশে বছরে ২০ থেকে ২৫ টন স্বর্ণের চাহিদা আছে। অথচ দেশে বছরে আমদানি হয় মাত্র ৬৫ থেকে ৭০ কেজি সোনা। বাকি স্বর্ণের জোগান কোথা থেকে আসে, কীভাবে আসে? বিভিন্ন সময় খবর বের হয় স্বর্ণ চোরাচালানের, বিমানবন্দরে ধরা পড়ে চোরাই সোনার হাজার হাজার পিস বার। কিন্তু বন্ধ হয় না স্বর্ণের জোগান। কীভাবে, কাদের মাধ্যমে, কোথা থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে হাজার হাজার কেজি স্বর্ণ?
‘ভাই দুইটা নিবেন? দুইটা তো নেয়াই যায়, নিয়ে যান সমস্যা হবে না, ট্যাক্স দিয়ে দেব।’ গলার স্বর স্বাভাবিকের চেয়ে একটু নিচু করে অনেকটা হকার স্টাইলে বলছিলেন বাংলাদেশি এক প্রবাসী। সংযুক্ত আরব আমিরাতের শহর দুবাইয়ে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা, বিমানবন্দর, শপিং মলসহ বিভিন্ন জায়গায় বাংলাদেশে সোনার বার নিয়ে যেতে এভাবেই পর্যটকদের কাছে ‘ঘ্যান ঘ্যান’ করেন প্রবাসীদের একটি অংশ।
দুবাইয়ের ডেরা ও ডাউনটাউন এলাকায় প্রতিবেদককে অন্তত সাতজন ব্যক্তি স্বর্ণের বার বহন করে বাংলাদেশে আনার কথা বলেছেন। প্রতিটি বারের জন্য ২০ হাজার টাকা ট্যাক্স ও ১০ হাজার টাকা ‘পারিশ্রমিক’ দেয়ার কথাও বলেছেন তারা।
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি- বাজুস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে বছরে ২০ থেকে ২৫ টন সোনার চাহিদা আছে। অথচ বাংলাদেশে বছরে আমদানি হয় মাত্র ৬৫ থেকে ৭০ কেজি সোনা। এত সোনার জোগান আসে কোথা থেকে? জানতে চাইলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার দাবি করেন, ব্যবসায়ীরা পুরোনো স্বর্ণ রিফাইনিং করে চাহিদা মেটাচ্ছেন।
দুবাই বিমানবন্দরে বাংলাদেশি ফ্লাইটের চেক-ইন কাউন্টারের লাইনে দাঁড়ানো অবস্থায় একজন প্রবাসী যাত্রী প্রতিবেদককে বলেন, ‘ভাই, আমার কাছে ৩টা বার আছে, আপনি ১টা নিয়ে যান। ৩০ হাজার টাকা দেব।’ তিনি বলেন, ‘ভাই দুইটা বার নেয়া বৈধ। প্রত্যেক যাত্রী দুইটা নিতেই পারে। তারাও কিছু টাকা আয় করলো, আমরাও করলাম। কাস্টমসের ট্যাক্সের টাকাটাও আমি দিয়ে দেব। বিমানবন্দরে এসে আমাদের লোক বার নিয়ে যাবে। হিসাব সহজ।’
প্রবাসী এসব যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায় এভাবে দুবাই থেকে প্রতিদিন স্বর্ণ আসছে বাংলাদেশে। এসব স্বর্ণ যাত্রীর নিজস্ব মালামাল হিসেবে আনা হলেও দেশে পৌঁছানোর পর চলে যায় স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের হাতে। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি- বাজুস সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে বছরে ২০ থেকে ২৫ টন সোনার চাহিদা আছে। অথচ বাংলাদেশে বছরে আমদানি হয় মাত্র ৬৫ থেকে ৭০ কেজি সোনা। এত সোনার জোগান আসে কোথা থেকে? জানতে চাইলে বাজুসের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ কুমার দাবি করেন, ‘ব্যবসায়ীরা পুরোনো স্বর্ণ রিফাইনিং করে চাহিদা মেটাচ্ছেন!’
অনেক প্রবাসী ভিজিট বা টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশ থেকে চাকরির জন্য দুবাই আসেন। ভিসা না থাকায় তারা চাকরি পান না। চাকরি পেলেও টুরিস্ট ভিসা থাকায় অনেক কম টাকা বেতন পান। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এসব প্রবাসীদের টার্গেট করেন। তাদের অর্থের লোভ দেখিয়ে নিজেদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন। তবে অনুসন্ধানে জানা গেছে এসব সোনা আসছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইসহ আশপাশের দেশগুলোর বিভিন্ন শহর থেকে।
এত সোনা আসে কীভাবে
বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি- বাজুস থেকে জানা গেছে, বাংলাদেশে হাতেগোনা কয়েকটি জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান বৈধভাবে দুবাই থেকে স্বর্ণ আমদানি করে। অর্থাৎ পণ্য আমদানির নিয়ম মেনে এলসি খুলে তারা বিদেশ থেকে স্বর্ণ কেনেন। বাকি সিংহভাগ ব্যবসায়ী প্রবাসীদের কাছ থেকে লাগেজে করে আনা স্বর্ণের বারের ওপরই নির্ভর করেন।
একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে সর্বোচ্চ ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণের বার আনতে পারবেন। সাধারণত একটি স্বর্ণের বার ১০০ গ্রামের হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে দুটি বার আনা বৈধ। তবে এজন্য অবশ্য ওই ব্যক্তিকে বিমানবন্দরে নামার আগেই প্লেনে দেয়া নির্দিষ্ট ফরমে বার থাকার ঘোষণা (ডিক্লারেশন) দিতে হবে।
দুবাইয়ের স্বর্ণ বহনকারী কয়েকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা জানান, অনেক প্রবাসী ভিজিট বা টুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশ থেকে চাকরির জন্য দুবাই আসেন। ভিসা না থাকায় তারা চাকরি পান না। চাকরি পেলেও টুরিস্ট ভিসা থাকায় অনেক কম টাকা বেতন পান। স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা এসব প্রবাসীদের টার্গেট করেন। তাদের অর্থের লোভ দেখিয়ে নিজেদের এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেন। মৌখিকভাবে নিয়োগ পাওয়া এসব প্রবাসী দুবাইয়ে বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা ও টুরিস্ট স্পটে ঘুরে বেড়ান। বাংলাদেশি পর্যটকদের সঙ্গে দেখা হলেই ‘ভাই বার নেবেন’ বলে স্বর্ণ নেয়ার অফার দেন।
কতটুকু স্বর্ণ আনা বৈধ
বাংলাদেশের কাস্টমস হাউজের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একজন ব্যক্তি বিদেশ থেকে সর্বোচ্চ ২৩৪ গ্রাম পর্যন্ত স্বর্ণের বার আনতে পারবেন। সাধারণত একটি স্বর্ণের বার ১০০ গ্রামের হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে দুটি বার আনা বৈধ। তবে এজন্য অবশ্য ওই ব্যক্তিকে বিমানবন্দরে নামার আগেই প্লেনে দেয়া নির্দিষ্ট ফরমে বার থাকার ঘোষণা (ডিক্লারেশন) দিতে হবে।
বিমানবন্দরে নেমে কাস্টমস অফিসারের কাছে গিয়ে ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়। গোল্ডবারের ক্ষেত্রে প্রতি ১১.৬৭ গ্রাম বা ১ ভরির জন্য ২ হাজার করে প্রতি বারের জন্য ২০ হাজার টাকা ট্যাক্স পরিশোধ করতে হয়। দুটি বারের বেশি স্বর্ণ আনলে সেটি জব্দ করে বহনকারীকে আটক রশিদ (ডিটেনশন ম্যামো) দেয় কাস্টমস। জব্দকৃত স্বর্ণ বার পরবর্তীতে আমদানি ও রফতানি নিয়ন্ত্রক দফতরের ছাড়পত্র, শুল্ক-করাদি এবং অর্থদণ্ড পরিশোধ করে ফেরত পাওয়া যেতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে জরিমানা হিসেবে স্বর্ণের ট্যাক্সের সর্বোচ্চ ১০ গুণ পর্যন্ত আদায় করা হতে পারে (একটি বারের জন্য সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকার জরিমানা)।
তবে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে যদি মনে হয় চোরাচালানের উদ্দেশ্যে এই বারগুলো আনা হয়েছে, তবে বহনকারীকে আটক করে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় ফৌজদারি মামলা করবে। আসামিকে বিমানবন্দর থানার কাছে হস্তান্তর করে তদন্ত করবে।
স্বর্ণের বারে ট্যাক্সের বিষয় থাকলেও বিদেশ থেকে আনা অলংকারের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রাম পর্যন্ত কোনো ট্যাক্স দিতে হবে না। তবে একই ধরনের অলংকার সংখ্যায় ১২টির অধিক আনা যাবে না। এর বেশি আনলে অতিরিক্ত প্রতি গ্রামের জন্য প্রায় ১৫০০ টাকা ট্যাক্স পরিশোধ করতে হবে। আর বাণিজ্যিক পরিমাণ বলে মনে হলে কাস্টমস তা আটক করে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় জরিমানা আদায় করবে। চোরাচালান মনে হলে কাস্টমস ফৌজদারি মামলা করবে।
কোথাকার বার কোথায় যায়, বিকিকিনি করে কারা
বাংলাদেশে স্বর্ণ আসার প্রক্রিয়া জানতে ঢাকা পোস্ট কথা বলে দুবাই ও বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ী, ব্রোকার, ট্রাভেল এজেন্ট ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী একাধিক বাহিনীর সঙ্গে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশে আপন জুয়েলার্স, আমিন জুয়েলার্স, আল-আমিন জুয়েলার্স, শান্তা জুয়েলার্স, ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ডসহ হাতেগোনা কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অল্পকিছু স্বর্ণ বৈধভাবে আমদানি করে। বাকি সব স্বর্ণ আসে অবৈধ উপায়ে। কিছু স্বর্ণ রিফাইনিং করা হয়। বেশিরভাগ জুয়েলারি প্রতিষ্ঠানই প্রবাসীদের দিয়ে অবৈধভাবে স্বর্ণের বার আনায়। এতে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।
তবে যারা অবৈধভাবে দুটির বেশি বার আনেন তাদের কৌশলটা একটু আলাদা। এজন্য প্রবাসীদের পাশাপাশি বেছে নেয়া হয় বিমানবন্দরের ক্লিনার, ক্যাটারিংয়ের লোকজন, পাইলট, কেবিন-ক্রু এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ব্রোকাররা স্বর্ণের বড় চালানোগুলো এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে আলোচনা করে দেশে আনেন। তারা এজন্য হোয়াটস অ্যাপে অডিও ম্যাসেজে যোগাযোগ করেন।
জানা গেছে, বাংলাদেশে স্বর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষ থেকে মাত্র ৪-৫ জন ব্যক্তি দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকানগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে স্বর্ণ কেনে। এসব দোকানের অধিকাংশই দুবাইয়ের ডেরা এলাকার গোল্ড স্যুকে। গোল্ড স্যুকের স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা সরাসরি বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন না। তারা কয়েকজন বাংলাদেশি ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ডিলারদের অর্ডার অনুযায়ী স্বর্ণের বার প্রস্তুত রাখেন তারা। আর ডিলাররা বাংলাদেশের স্বর্ণের দোকানগুলোতে সাপ্লাই করেন।
স্বর্ণের বার প্রস্তুত করার পর তারা নিজেদের ব্রোকারকে দিয়ে বাহক খোঁজেন। বাহকদের সঙ্গে দরকষাকষি করে বাংলাদেশে স্বর্ণ পাঠান। বাহকদের অধিকাংশই প্রবাসী শ্রমিক। তাদেরকে স্বর্ণের বার এবং এর অফিসিয়াল ট্যাক্সের পাশাপাশি পারিশ্রমিক হিসেবে ২০ হাজার টাকা দেয়া হয়। অনেক প্রবাসী লোভে পড়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অতিরিক্ত বার আনতে চায়। তাদেরকে চাহিদা অনুযায়ী বার দেয়া হয়।
দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আসা বারগুলো প্রধানত ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করে। যেসব বাংলাদেশি স্বর্ণ বহন করে আনে দুবাই থেকেই তাদের ও তাদের একজন স্বজনের ফোন নম্বর, পাসপোর্টের কপি, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, এনআইডির ফটোকপি রেখে দেয়া হয়। প্রবাসীরা প্লেন থেকে নামার পর প্রথমে যায় কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাউন্টারে। সেখানে গিয়ে বারের ট্যাক্স দিয়ে রশিদ নেয়। বার বৈধ করার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশি ডিলারের প্রতিনিধি রশিদসহ স্বর্ণ ওই ব্যক্তির কাছ থেকে বুঝে নেন।
দুবাই থেকে অবৈধভাবে ১ ভরি স্বর্ণ আনলে একজন ব্যবসায়ীর লাভ থাকে প্রায় ১৩ হাজার টাকার মতো। এই ১৩ হাজারের মধ্যে ২ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হয় বিমানবন্দরে। লাভ থাকে ১১ হাজার টাকা। অর্থাৎ দুবাই থেকে কেউ যদি একটি স্বর্ণের বার আনে সেটিতে মোট ১০০ গ্রাম বা প্রায় ৮.৫৭ ভরির সমান স্বর্ণ আসে। এক্ষেত্রে কোনো ব্যবসায়ী একটি বার আনালে বাংলাদেশে তার মোট লাভ হয় ৯৪ হাজার টাকা
এই পদ্ধতিটা হলো অনেকটা ‘বৈধ চোরাচালান’! অর্থাৎ ব্যক্তি নিজের পণ্য দেখিয়ে নিয়ে আসে কিন্তু চলে যায় অন্যের কাছে। তবে যারা অবৈধভাবে দুটির বেশি বার আনেন তাদের কৌশলটা একটু আলাদা। এজন্য প্রবাসীদের পাশাপাশি বেছে নেয়া হয় বিমানবন্দরের ক্লিনার, ক্যাটারিংয়ের লোকজন, পাইলট, কেবিন-ক্রু এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। ব্রোকাররা স্বর্ণের বড় চালানোগুলো এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীর সঙ্গে আলোচনা করে দেশে আনেন। তারা এজন্য হোয়াটস অ্যাপে অডিও ম্যাসেজে যোগাযোগ করেন।
নিয়মিত স্বর্ণ আনা একজন প্রবাসী জানান, দুবাই থেকে যেসব প্রবাসী স্বর্ণ নিয়ে আসেন তাদের আগে থেকেই ঢাকায় এসে ফোন দেয়ার জন্য একজনের নাম্বার দেয়া হয়। ঢাকায় নামার পর প্রবাসীরা স্বর্ণগ্রহীতাকে ফোন দেন। স্বর্ণগ্রহীতারা বেশিরভাগ বিমানবন্দরের ভেতরের কর্মচারী। তারা বিমানবন্দরের পার্কিং লট, টয়লেট, নামাজের ঘরসহ বেশ কয়েকটি পয়েন্টে স্বর্ণ হাতবদল করেন। বিশেষ করে বিভিন্ন সংস্থার কর্মরত নিরাপত্তা প্রহরী, ট্রলিম্যান, বোর্ডিং ব্রিজের কর্মকর্তা ও ম্যাকানিকরা প্রবাসীদের কাছ থেকে স্বর্ণ সংগ্রহ করে থাকেন।
যাদের বিরুদ্ধে দুবাই থেকে চোরাচালানের অভিযোগ
অবৈধভাবে স্বর্ণ দেশে পাঠানো ব্যবসায়ীদের নামের তালিকা এসেছে। ব্রোকার, বাংলাদেশি স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে তাদের নাম উঠে এসেছে। ব্যবসায়ীদের মধ্যে একজনের নাম রনি। তিনি দুবাইয়ের ‘মানারাত গোল্ড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক। তালিকায় আছে এলিটা গোল্ডস নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নামও।
প্রতিটি ফ্লাইটে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রীর কাছে বার দেয় চোরাচালানকারীরা। সবাইকে কমপক্ষে দুটি করে বার দেয়া হয়। এদের মধ্যে ২-১ জনের তথ্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে তারাই দিয়ে দেয়। যাতে তাদের গ্রেফতার করতে পারে। অন্যান্য চালানগুলো খুব দ্রুত ও নিরাপদে বিমানবন্দর পার হয়ে যেতে পারে সেজন্য প্রায়ই এ প্রক্রিয়ায় বার বহনকারীদের দু-একজনকে ধরিয়ে দেয়া হয়
স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত অন্যান্যরা হলেন- চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার ব্যবসায়ী নজরুল, ফেনীর জিয়া উদ্দিন, চট্টগ্রামের রাউজানের রুবেল, নোয়াখালীর দীনেশ, ঢাকার রাজু, চট্টগ্রামের মিন্টু, ডেলমা গোল্ডসের মহিউদ্দিন, চট্টগ্রামের আমিন ও মোস্তফা। অভিযুক্তদের মধ্যে ডেলমার মহিউদ্দিন এবং মানারাতের রনি সবচেয়ে প্রভাবশালী। তারা নিজস্ব লোকজনের মাধ্যমে একসাথে একদিনে ৪০০ থেকে ৫০০ কেজি স্বর্ণ দেশে পাঠান বলে তথ্য আছে। এছাড়া হুন্ডি ও স্বর্ণ চোরাচালানের জন্য মো. ইসহাক, দানেশ ও শওকত নামে আরও তিনজন বড় ব্যবসায়ী রয়েছেন। বাদল নামে রাউজানের আরেক ব্যবসায়ী বাংলাদেশ থেকে নিয়মিত দুবাইয়ে আসা যাওয়া করে স্বর্ণ আনা-নেয়া এবং চোরাচালানের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশে স্বর্ণ গ্রহণের অভিযোগ যার বিরুদ্ধে
চোরাচালানের সোনাগুলো দুবাই থেকে পাঠানো হলেও সেগুলো সরাসরি স্বর্ণের দোকানদার গ্রহণ করেন না। এগুলো গ্রহণের জন্য বাংলাদেশে একজন ‘মাফিয়া’ রয়েছেন। আলাপকালে দুবাইয়ের বেশ কয়েকজন ব্যক্তি স্বর্ণের গ্রহীতা ও ডিস্ট্রিবিউটর হিসেবে তার নাম বলেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সংস্থার তদন্তে ওই ব্যক্তির নাম না থাকায় তার নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না।
একদিন একটি ফ্লাইট চলা অবস্থায় আমার কানে তথ্য আসে আমার ফ্লাইটে কিছু অবৈধ স্বর্ণ আছে। কে এই স্বর্ণ এনেছে সেই প্রমাণও চলে আসে আমার কাছে। কিন্তু সেসময় সব জেনেও আমি নিরুপায় ছিলাম। প্রায়ই ককপিটে থাকা অবস্থায় এমন তথ্য পাই, তবে কিছুই করার থাকে না
নাম প্রকাশ না করে এক ক্যাপ্টেন বলেন, অভিযুক্ত ব্যক্তি চট্টগ্রামের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা। তিনি ২০১৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচনের মনোনয়নপত্রও তুলেছিলেন। তবে মনোনয়ন পাননি।
দুবাইয়ের একাধিক স্বর্ণ ব্যবসায়ী বলেন, আওয়ামী লীগের ওই নেতার আপন ছোট ভাই দুবাইয়ে থাকেন। বাংলাদেশ থেকে চাহিদা দেয়া হলে দুবাই থেকে তার ভাই লোকজন দিয়ে স্বর্ণ পাঠান। সেই স্বর্ণ দুবাই থেকে বাংলাদেশে আসার পর সেগুলো কাস্টমস ও বেবিচক কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের কাছে পৌঁছে দেন চট্টগ্রামের ওই ব্যবসায়ী।
স্বর্ণ চোরাচালানের ‘সহযোগী’ বেবিচক কর্মকর্তারা
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে স্বর্ণ চোরাচালানের সঙ্গে বেবিচক কর্মকর্তাদের জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণও পাওয়া গেছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বেবিচকের বোর্ডিং ব্রিজ অপারেটর মো. হাফিজুর রহমান আকন্দ, সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী মো. রেজাউল করিম, সশস্ত্র নিরাপত্তা প্রহরী মো. আবু তালেব, ট্রাফিক হ্যান্ড আকরাম হোসেন, মেকানিক মো. জামাল উদ্দিন পাটোয়ারী, ট্রলিম্যান মো. রেজাউল করিম-১, ট্রলিম্যান মো. আসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে স্বর্ণ চোরাচালানে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
অধিকাংশ সময়ই বিমানবন্দরে সোনা পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, কাউকে শনাক্ত করা যায় না। আবার সোনাসহ কাউকে ধরা হলে সেগুলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়, আসামিকে দেয়া হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না
নাম প্রকাশ না করে শুল্ক গোয়েন্দার এক উপ-পরিচালক (ডিডি) বলেন, বেবিচক সূত্রে জানিয়েছে, তাদের সবার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে এবং বিভাগীয় তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
ক্রু-পাইলটদের সঙ্গে যোগাযোগ চোরাচালানকারীদের
স্বর্ণের বার বহনের জন্য বাহক খুঁজে বেড়ানো একজন ব্রোকার জানান, বাংলাদেশ থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও এমিরেটস এয়ারওয়েজ দুবাইয়ে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এসব এয়ারলাইন্সের ক্রু ও পাইলটরা কোন হোটেলে থাকে তা ব্রোকাররা জানে। মূল চুক্তিটি হয় বিমানের ক্রুদের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপে যোগাযোগের পর হোটেলে গিয়ে তাদের হাতে পারিশ্রমিকের টাকা অগ্রিম ধরিয়ে দেয়া হয়। এক্ষেত্রে ক্রুদের ভূমিকাটা অনেক ছোট, তবে গুরুত্বপূর্ণ। ক্রুরা স্বর্ণের চালানটি নিয়ে এয়ারক্রাফটের সিটের নিচে বা টয়লেটে বা অন্যান্য গোপন স্থানে রাখে। প্লেনটি ঢাকায় বা চট্টগ্রামে অবতরণের পর বিমানবন্দরের ক্লিনার বা গ্রাউন্ড হ্যান্ডেলিংয়ের কেউ স্বর্ণের বারগুলো সেখান থেকে নিয়ে যায়।
সোনাসহ যারা ধরা পড়ছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি আমরা একটি বড় সিন্ডিকেটকেও গ্রেফতার করেছি, অনেক পত্রিকায় নিউজও হয়েছেতবে অনেকসময় বিমানবন্দরে তল্লাশি বেশি হয়। কাস্টমস ও শুল্ক গোয়েন্দার কর্মকর্তারা ক্লিনারসহ ছোট ছোট কর্মকর্তাদের তল্লাশি করেন। এটি এড়ানোর জন্য তখন ক্রুরা স্বর্ণের চালান নিয়ে প্লেন থেকে বের হন। তারা চালান নিয়ে বিমানবন্দরের ডিউটি ফ্রি দোকান বা খাবারের দোকানগুলোতে রাখেন। সেখান থেকে স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের লোকজন এসব স্বর্ণের চালান বিমানবন্দর থেকে বের করে নিয়ে যান। এছাড়া ক্রুরা নিজেদের লাগেজে করে স্বর্ণ নিয়ে পার্কিং লটে গিয়ে বুঝিয়ে দেন বলেও জানিয়েছেন ওই ব্রোকার।
কোনো ব্যক্তি যদি স্বর্ণ বহনে রাজি হয় তাহলে সে পায় বারপ্রতি ১০ হাজার, আর তাকে বার নেয়ায় প্ররোচনাকারী (ব্রোকার) পায় ১০ হাজার টাকা। বহনকারী চাইলে এজেন্টের সঙ্গে দরকষাকষিও করতে পারে। ওল্ড দুবাইয়ের সবচেয়ে বড় গোল্ড স্যুক’এ গিয়ে ঢাকা পোস্ট বেশ কয়েকটি দোকান থেকে স্বর্ণের দাম সংগ্রহ করে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ২২ ক্যারেটের স্বর্ণ। এটি দুবাইয়ে প্রতি গ্রাম ২০৭ দিরহাম। দুবাইয়ে ২২ ক্যারেটের দাম ভরিপ্রতি ৫৬ হাজার ১২০ টাকা। (১ ভরি সমান ১১.৬৬ গ্রাম)।
বাংলাদেশে সবচেয়ে প্রচলিত ২২ ক্যারেটের সোনা। দুবাই থেকে ২২ ক্যারেটই সবচেয়ে বেশি আসে বাংলাদেশে। বাংলাদেশে ২২ ক্যারেটের স্বর্ণের দাম প্রতি ভরিতে ৬৯ হাজার ১০৯ টাকা। অর্থাৎ দুবাই থেকে অবৈধভাবে ১ ভরি স্বর্ণ আনলে একজন ব্যবসায়ীর লাভ থাকে প্রায় ১৩ হাজার টাকার মতো। এই ১৩ হাজারের মধ্যে ২ হাজার টাকা শুল্ক দিতে হয় বিমানবন্দরে। লাভ থাকে ১১ হাজার টাকা। অর্থাৎ দুবাই থেকে কেউ যদি একটি স্বর্ণের বার আনে সেটিতে মোট ১০০ গ্রাম বা প্রায় ৮.৫৭ ভরির সমান স্বর্ণ আসে। এক্ষেত্রে কোনো ব্যবসায়ী একটি বার আনালে বাংলাদেশে তার মোট লাভ হয় ৯৪ হাজার টাকা।
দুবাইয়ের একজন স্বর্ণ বহনকারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘ট্যাক্স দিয়ে বৈধভাবে দুইটি বার দেশে পাঠালেও প্রায় দুই লাখ টাকা লাভ থাকে। অধিকাংশ ব্যবসায়ী একজনকে দিয়ে একসঙ্গে অনেকগুলো বার আনায়। তাই তাদের লাভের অঙ্কটা আরও বাড়ে। এছাড়া বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা বারগুলো গলিয়ে অলংকার বানিয়ে বিক্রির সময় ভ্যাট-মজুরি, খাদ দিয়ে অতিরিক্ত লাভ করে। তাই প্রতিটি বাংলাদেশিকেই ফ্লাইটে যাওয়ার আগে স্বর্ণ নেবে কি না জিজ্ঞেস করা হয়।
দুবাইয়ে কথা হয় মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখানের ট্যাক্সিচালক এক যুবকের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার রুমমেট আগে বাংলাদেশি ২৩ হাজার টাকার চাকরি করতো। এখন সে মাসে ৩-৪ বার বাংলাদেশে যায়। প্রতিবার ২টা করে বার নিয়ে যায়। মাসে ৮০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা আয় করে। অনেক সময় ফ্লাইটে যাত্রী বেশি থাকে, বাংলাদেশের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ তেমন কোনো তল্লাশি করে না। আমার বন্ধু ৮-১০টি বার নিয়ে বাংলাদেশ চলে যায়। দুটি বারের ট্যাক্স দেয়, বাকিগুলো নিয়ে বিমানবন্দর থেকে বেরিয়ে পড়ে।’
দু-একজন যাত্রী ধরিয়ে দেন খোদ স্বর্ণ ব্যবসায়ীরাই
কয়েকজন ব্রোকার জানান, প্রতিটি ফ্লাইটে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রীর কাছে বার দেয় চোরাচালানকারীরা। সবাইকে কমপক্ষে দুটি করে বার দেয়া হয়। এদের মধ্যে ২-১ জনের তথ্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে তারাই দিয়ে দেয়। যাতে তাদের গ্রেফতার করতে পারে। অন্যান্য চালানগুলো যাতে খুব দ্রুত ও নিরাপদে বিমানবন্দর পার হয়ে যেতে পারে সেজন্য প্রায়ই এ প্রক্রিয়ায় বার বহনকারীদের দু-একজনকে ধরিয়ে দেয়া হয়।
একজন পাইলটের অভিজ্ঞতা
দুবাই রুটে ফ্লাইট পরিচালনাকারী বাংলাদেশি একটি এয়ারলাইন্সের ক্যাপ্টেন নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘আমি চোখের সামনে অনেক কেবিন-ক্রু’কে বাড়ি-গাড়িসহ অনেক সম্পদের মালিক হতে দেখেছি। একটি ফ্লাইটের বস থাকে একজন ক্যাপ্টেন, অর্থাৎ আমি। তবে আমরা ককপিটের ভেতরে থাকি। মাঝে মাঝে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ককপিট থেকে বের হই। একদিন একটি ফ্লাইট চলা অবস্থায় আমার কানে তথ্য আসে আমার ফ্লাইটে কিছু অবৈধ স্বর্ণ আছে। কে এই স্বর্ণ এনেছে সেই প্রমাণও চলে আসে আমার কাছে। কিন্তু সেসময় সব জেনেও আমি নিরুপায় ছিলাম। কারণ ফ্লাইটে ক্যাপ্টেনসহ প্রতিটি ক্রু’র মনোবল চাঙ্গা থাকতে হয়। সেসময় আমি কাউকে কিছু বললে ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারত। তাই কিছু বলিনি। প্রায়ই ককপিটে থাকা অবস্থায় এমন তথ্য পাই, তবে কিছু করার থাকে না।’
এয়ারপোর্ট এপিবিএন যা বলছে
গত কয়েক বছর ধরে বিমানবন্দরে স্বর্ণ চোরাচালানকারীদের ধরে শ্রীঘরে পাঠাচ্ছে বিমানবন্দর আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন- এপিবিএন। গত ১২ মাসে প্রায় ১০০ কেজি স্বর্ণ উদ্ধার করেছে তারা। এ বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন্স)মো. আলমগীর হোসেন বলেন, বাংলাদেশে অধিকাংশ স্বর্ণ আমিরাত-দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে আসে। মধ্যপ্রাচ্যসহ সব ফ্লাইটের যাত্রীদেরই এপিবিএন নজরদারি করে। কোন যাত্রীকে সন্দেহ হলেই তাকে তল্লাশি করা হয়।এপিবিএনের হাতে গ্রেফতার হওয়া অধিকাংশ ব্যক্তিই স্বর্ণের বাহক। বাড়তি আয়ের জন্য তারা স্বর্ণগুলো বহন করে।
শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য
২০১৪ সালের আগে বাংলাদেশের বিমানবন্দরগুলোতে তেমন সোনা ধরা পড়ত না। তবে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর প্রথমবারের মতো নিয়মিত অভিযান চালিয়ে একের পর এক চোরাচালানের সোনা উদ্ধার করেছে। এছাড়া সোনা চোরাচালানকারীকে জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের নিয়ে তদন্তও করে শুল্ক গোয়েন্দা। তবে এখনও সোনা চোরাচালানকারীদের গড ফাদারদের চিহ্নিত করতে পারেনি তারা।
নাম গোপন রাখার শর্তে শুল্ক গোয়েন্দা উপ-পরিচালক (ডিডি) সমমর্যাদার এক কর্মকর্তা বলেন, অধিকাংশ সময়ই বিমানবন্দরে সোনা পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়, কাউকে শনাক্ত করা যায় না। আবার সোনাসহ কাউকে ধরা হলে সেগুলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়, আসামিকে দেয়া হয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে। সেক্ষেত্রে আমাদের কিছু করার থাকে না। তবে যখন কোনো এয়ারক্রাফট থেকে সোনা উদ্ধার করা হয় তখন আমরা সেই এয়ারলাইন্স প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শো-কজ লেটার) দিই। তাদের নিয়ে তদন্ত করি।
বিমানবন্দর পুলিশ কী বলছে
বিমানবন্দর থানার ওসি বি এম ফরমান আলী বলেন, সোনাসহ যারা ধরা পড়ছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে, তদন্ত হচ্ছে। এছাড়া সম্প্রতি আমরা একটি বড় সিন্ডিকেটকেও গ্রেফতার করেছি, অনেক পত্রিকায় নিউজও হয়েছে।