দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে যা ঘটছে তা নজরে রাখছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। এছাড়া নির্বাচনের আগে ও পরে সহিংসতার ঘটনায় তিনি উদ্বিগ্ন বলেও জানানো হয়েছে।
স্থানীয় সময় সোমবার (৮ জানুয়ারি) জাতিসংঘের নিয়মিত ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন ও নির্বাচনকে ঘিরে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আন্তোনিও গুতেরেসের সহযোগী মুখপাত্র ফ্লোরেন্সিয়া সোটো নিনো এই মন্তব্য করেন।
ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক বাংলাদেশের সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং শেখ হাসিনা সেখানে বিজয় পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। যদিও এই নির্বাচন এমন এক পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে যেখানে হাজার হাজার মানুষ এবং বিরোধী নেতাকর্মীকে আগেই গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। জাতিসংঘ কি বিশ্বাস করে, এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে?
জবাবে মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সহযোগী মুখপাত্র ফ্লোরেন্সিয়া সোটো নিনো বলেন, বাংলাদেশে কী ঘটেছে সেটা আমরা দেখছি। সেখানে (বাংলাদেশে) কী ঘটছে তার দিকে নজর রাখছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। বিরোধীদলগুলোর নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি অবগত, এছাড়া ভিন্নমতের কণ্ঠরোধ এবং বিরোধীদলের নেতাদের গ্রেপ্তারের বিষয়েও জানেন তিনি। নির্বাচনের আগে এবং নির্বাচনের সময় সহিংসতার ঘটনার খবর নিয়েও তিনি স্পষ্টতই উদ্বিগ্ন।
তিনি আরও বলেন, সব পক্ষকে যেকোনো ধরনের সহিংসতা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব। মানবাধিকার এবং আইনের শাসনের প্রতি পূর্ণ সম্মান প্রদর্শনের বিষয়টিও নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। গণতন্ত্রকে সুসংহতকরণ এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য এটি অপরিহার্য।
এদিকে বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ছিল না বলেও জানিয়েছে দেশটি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক বিবৃতিতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্র, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের স্বাধীনতা এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র লক্ষ্য করেছে, ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী দলের হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীর গ্রেপ্তার এবং নির্বাচনের দিনের অনিয়মের প্রতিবেদন নিয়ে উদ্বিগ্ন। যুক্তরাষ্ট্র অন্যান্য পর্যবেক্ষকদের মতো মনে করে, এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না এবং আমরা দুঃখিত যে সব দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।
এছাড়া বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু মানদণ্ড মেনে নির্বাচন হয়নি বলে মন্তব্য করেছে যুক্তরাজ্য। নির্বাচনে সব দল অংশ না নেওয়ায় মানুষের ভোট দেওয়ার যথেষ্ট বিকল্প ছিল না বলেও অভিমত দেশটির।
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, গণতান্ত্রিক নির্বাচন নির্ভর করে গ্রহণযোগ্য, অবাধ ও সুষ্ঠু প্রতিদ্বন্দ্বিতার ওপর। মানবাধিকার, আইনের শাসন ও যথাযথ প্রক্রিয়ার প্রতি শ্রদ্ধা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অপরিহার্য উপাদান। নির্বাচনের সময় এসব মানদণ্ড যথাযথভাবে মানা হয়নি। এছাড়া নির্বাচনে সব দল অংশ নেয়নি বলে বাংলাদেশের মানুষের ভোট দেওয়ার যথেষ্ট বিকল্প ছিল না।
ভোটের আগে বিরোধী দলের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করার ঘটনায় যুক্তরাজ্যের উদ্বেগের কথা বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।