শুরু থেকেই ব্যাটারদের নৈপুণ্যে বড় সংগ্রহের ইঙ্গিত দিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ফিফটি তুলে নেন লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তবে শেষটা রাঙিয়েছেন মুশফিকুর রহিম ও তাওহীদ হৃদয়। তবে সব আলো কেড়ে নিয়েছেন মুশফিক। তার নবম সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৪৯ রান। একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ এটি।
প্রথম ওয়ানডের পর দ্বিতীয় ম্যাচে এসেও ব্যাট হাতে বিষ্ফোরক ইনিংস খেলেন মুশফিক। আইরিশ বোলারদের ডেলিভারিকে এদিনও সীমানাছাড়া করেছেন একের পর এক। শেষ দিকে মুশফিকের ৬০ বলের ঝোড়ো সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশ ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়েছে।
এর আগে সোমবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে প্রথমে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ দল। তবে শুরু থেকেই বেশ দেখেশুনেই খেলতে থাকেন তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস। রান আউটের কাটায় পড়ে নিজের ৩৪তম জন্মদিন রাঙাতে পারেননি তামিম। ব্যক্তিগত ২৩ রানে থাকা অবস্থায় এই ওপেনার প্যাভিলিয়নে ফেরেন। অবশ্য তার আগেই তামিম ছুঁয়েছেন নিজের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ১৫ হাজার রানের মাইলফলক।
তামিমের বিদায়ের পর দলের হাল ধরেন লিটন ও নাজমুল হোসেন শান্ত। লিটন তুলে নেন ওয়ানডেতে নিজের নবম অর্ধশতক। সাবলীল ব্যাটিংয়ে লিটন এবং শান্ত দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন বড় সংগ্রহের দিকে। অবশ্য লিটন দাস এদিন পেরিয়েছেন ওয়ানডেতে ব্যক্তিগত ২ হাজার রানের মাইলফলক। একইসঙ্গে অর্ধশতক করে লিটন সেঞ্চুরির আভাস দিচ্ছিলেন। তবে কার্টিস ক্যাম্পারের বলে সহজ ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরেন ৭০ রান করে।
লিটন ফিরে গেলেও অবিচল ছিলেন শান্ত। এ সময় বাঁ-হাতি এই ব্যাটার আইরিশ বোলারদের নিয়েছেন কঠিন পরীক্ষা। অবশ্য গেল ম্যাচের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক সাকিব আল হাসান এদিন বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। শুরু থেকে মারমুখী ভঙ্গিতে খেললেও সাকিব মাত্র ১৭ রান করে আউট হয়ে যান। তবে অন্যপ্রান্তে থাকা শান্ত তুলে নেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক।
এরপরও দেখেশুনে খেলতে থাকা টপ অর্ডার এই ব্যাটার ৭৩ রানে কাটা পড়েন। তার বিদায়ে বাংলাদেশের বড় রানের সংগ্রহে ছেদ পড়ে। শঙ্কা তৈরি হয় প্রথম ম্যাচের ন্যায় ভালো টার্গেট দাঁড় করাতে পারবে কিনা। তবে সেই চাপ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছেন তাওহীদ হৃদয় ও মুশফিক। এই দুই ব্যাটার মিলে বেশ জোরেশোরে না তুলতে থাকেন। দুই ব্যাটারই খেলতে থাকেন টি-টোয়েন্টি মেজাজে। তারা আইরিশ বোলারদের পিটিয়ে নাভিশ্বাস তুলেন। মাত্র ৩৩ বলে মুশফিক তুলে নেন ৪৪তম অর্ধশতক।
অন্য প্রান্তে মারমুখী ভাব নিয়ে খেলতে থাকা তাওহীদ অভিষেক ম্যাচের ন্যায় এই ম্যাচেও সফল। সেই ম্যাচে মাত্র ৮ রানের জন্য তিনি সেঞ্চুরি বঞ্চিত হন। তার সেই আক্ষেপে আরেকটু যোগ হলো এই ম্যাচে। কারণ অর্ধশতক থেকে ১ রান দূরে থাকা অবস্থায় হৃদয়কে থামিয়ে দেন আইরিশ পেসার মার্ক অ্যাডায়ার। ফলে তরুণ এই ব্যাটার ৩৪ বলে ৪৯ রান করে মাঠ ছাড়েন। আর তাতেই ভেঙে যায় তাওহীদের সঙ্গে মুশফিকের ১২৮ রানের জুটি। এর আগে চলমান ইনিংসের বড় জুটি ছিল লিটন-শান্ত’র ১০১ রান।
তবে মুশফিকের ব্যাটের ধার তখনও কমেনি। সেঞ্চুরির তৃষ্ণা নিয়ে তিনি সঙ্গী বানান নতুন ব্যাটার ইয়াসির আলীকে। তবে রাব্বি তার যোগ্য সঙ্গ দিতে ব্যর্থ। ৭ বলে ৭ রান করে তিনি ফেরেন গ্রাহাম হিউমের বলে। এদিকে রাব্বি ফিরলেও মুশফিক তুলে নেন ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি। ৬০ বলে ১০০ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার।
এর আগে সাকিব ছিলেন বাংলাদেশের হয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির মালিক, তবে সেই রেকর্ড আজ টপকে গেলেন মুশফিক। আইরিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট সংগ্রহ করেছেন গ্রাহাম হিউম। এছাড়া অ্যাডায়ার ও ক্যাম্পার একটি করে উইকেট নিয়েছেন।