শিকাগোর সেন্ট জেভিয়ার ইউনিভার্সিটির একজন অধ্যাপকের মতে, বাংলাদেশের স্থিতিশীল গণতন্ত্র এবং শক্তিশালী নারী নেতৃত্ব দেশটিকে প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তান থেকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশিরা অর্থনৈতিকভাবে ইতিহাসে আগের চেয়ে অনেক ভালো অবস্থানে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্ট জেভিয়ার ইউনিভার্সিটির দ্য গ্রাহাম স্কুল অব ম্যানেজমেন্টের অধ্যাপক এবং প্রতিষ্ঠাতা ডিন ফয়সাল রহমান মার্কিন দৈনিক শিকাগো ট্রিবিউনে গত ১৮ এপ্রিল প্রকাশিত এক মতামত কলামে বলেছেন, একটি স্থিতিশীল গণতন্ত্রের পাশাপাশি শক্তিশালী নারী নেতৃত্ব বাংলাদেশকে এ পর্যায়ে আসতে সাহায্য করেছে। তিনি বলেন, নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ এবং শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের উচ্চ হার বাংলাদেশকে মাথাপিছু আয় ও প্রবৃদ্ধির হারে ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।
অধ্যাপক ফয়সাল বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ এবং সিঙ্গাপুরের লি কুয়ান ইউয়ের ছাঁচে একজন শক্তিশালী প্রশাসনিক নেতা হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। বাংলাদেশ এখন একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে রয়েছে- যা প্রমাণ করে যে, কিসিঞ্জার বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এবং স্থায়িত্ব সম্পর্কে যে ধারণা দিয়েছিলেন, তা ভুল ছিল।
প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশ পরবর্তী এশিয়ান অর্থনৈতিক ‘বাঘ’ হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, যখন বাংলাদেশের জন্ম হয়, তখন এটি একটি ভয়ানক অবস্থায় ছিল। দেশটি বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ও প্রতিটি অর্থনৈতিক সূচকে ছিল দরিদ্রতম। যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক অবকাঠামো একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। দেশটির কোনো শিল্প ভিত্তি এবং কোনো উদ্যোক্তা শ্রেণিও ছিল না। বর্ষা মৌসুমে দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা নিয়মিতভাবে পানিতে তলিয়ে যেত।
‘পরিস্থিতি আরও খারাপ করার জন্য পিছু হটতে থাকা পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণের দুই থেকে তিন দিন আগে দেশের শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে হত্যা করে। তারা বাংলাদেশিদের চেতনাকে ধ্বংস করতে পারেনি। যেমনটি আজ ইউক্রেনের বীর জনগণের দ্বারা প্রদর্শিত হচ্ছে। বাংলাদেশিরা ভারতের সহায়তায় শুধু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেনি, পরবর্তীতে তার নতুন গণতন্ত্রকে বারবার ধ্বংস করার প্রচেষ্টাও ব্যর্থ করেছে।’
ফয়সাল রহমান বলেন, আজকের বাংলাদেশ পোশাকের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ। যে দেশটি তার জন্মের সময় একটিও পোশাক রপ্তানি করেনি এবং ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজের জন্য এটি ছোট কৃতিত্ব নয়। দেশটি এখন মার্কিন তুলার বৃহত্তম ক্রেতাদের মধ্যে একটি। নতুন একটি তথ্যপ্রযুক্তি পরিষেবা খাত ও ওষুধ শিল্পসহ বৈচিত্র্যময় অর্থনীতির জন্য চীন ও দক্ষিণ কোরিয়ার মতো অর্থনৈতিক জায়ান্টদের বিনিয়োগের জন্য একটি পছন্দের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে দেশটি।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ দেখিয়েছে যে, কীভাবে বেসরকারি সংস্থাগুলো উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সরকারি প্রচেষ্টার পরিপূরক হতে পারে। বাংলাদেশে ফজলে হাসান আবেদের প্রতিষ্ঠিত বৃহত্তম বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক এখন এশিয়া ও আফ্রিকায় তার শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, যুব ও নারীর ক্ষমতায়ন কর্মসূচির মাধ্যমে ১০০ মিলিয়নের বেশি মানুষকে সেবা দিচ্ছে। মাথাপিছু আয় এবং প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ হলো- নারী শিক্ষায় বিনিয়োগ এবং শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণের উচ্চ হার।
‘এছাড়া অন্যান্য ক্ষেত্রও রয়েছে যেখানে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে ভালো করছে। বর্তমানে বিশ্বের অশান্ত অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি অবদানকারী। মিয়ানমারের সামরিক সরকার কর্তৃক জোরপূর্বক বিতাড়িত হওয়া ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ আশ্রয় দিয়েছে। অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশ কোভিড-১৯ অত্যন্ত ভালোভাবে মোকাবিলা করেছে।’