মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহামেদ সোলিহ বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবেন। তার জীবন বাংলাদেশকে স্বতন্ত্র একটি পরিচয় দান করেছে। সারা জীবন তিনি গণতন্ত্র ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছেন। তার ছয় দফা বাংলাদেশের স্বাধীনতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল। তার ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ কার্যত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা। তার এ ভাষণ ইউনেস্কোর ডকুমেন্ট হেরিটেজের অংশ হিসাবে লিপিবদ্ধ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ১০ দিনের আয়োজনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বুধবার বিকালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে তিনি এসব কথা বলেন। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতৃত্ব এবং জনগণের কঠোর পরিশ্রম দেশকে দ্রুত উন্নয়নের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
করোনা মহামারিকালে বাংলাদেশ মালদ্বীপকে যে সাহায্য করেছে, সে কথা তুলে ধরে প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম সোলিহ বলেন, মালদ্বীপ বাংলাদেশের জনগণের বন্ধুত্বের জন্য কৃতজ্ঞ। এ বন্ধুত্ব মহামারি সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমাদের সাহায্য করছে। বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই খাদ্য, পিপিই এবং স্বাস্থ্যসামগ্রী দিয়ে সাহায্য করার জন্য। সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকার বিমানবাহিনীর একটি হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল টিম পাঠিয়েছিল। মালদ্বীপ আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। এ সহযোগিতা দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের একটি নিদর্শন।
ইব্রাহিম সোলিহ বলেন, দুই দেশের সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার। মানবসম্পদ উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা পরস্পরের ওপর নির্ভর করি। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত হুমকি মোকাবিলায় আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে চাই। আমি নিশ্চিত, দুই দেশের বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও শক্তিশালী হবে। মালদ্বীপ সব সময় বাংলাদেশের জনগণের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়। মালদ্বীপে বিদেশি শ্রমিক পাঠানো দেশ হিসাবে বাংলাদেশ অন্যতম। আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে তাদের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর আয়োজনে যোগ দিতে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে বুধবার সকালে ঢাকায় আসনে। বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। এসময় উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম, আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন প্রমুখ।
সকালে ঢাকায় নেমেই সড়কপথে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যান মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট। সেখানে শহিদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। এরপর সকাল ১০টা ২৫ মিনিটে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। সেখানে তাকে স্বাগত জানান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট কন্যা শেখ রেহানা। হোটেলে ইন্টার কন্টিনেন্টালে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম মোহাম্মেদ সোলিহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন। এ সময় আলোচনায় চট্টগ্রাম ও মালদ্বীপের রাজধানী মালের মধ্যে সরাসরি জাহাজ চলাচলসহ দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক যোগাযোগ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেন ড. মোমেন। এছাড়া দুদেশের নাগরিকদের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধিসহ পর্যটন শিল্প বিকাশে উপকূলীয় নৌপথ চালু, দুদেশের মধ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি, দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ উন্নয়ন ও সুরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের অনুরোধ জানান তিনি। মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করবেন। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকের পর বঙ্গভবনে রাষ্ট্রীয় ভোজে যোগ দেবেন তিনি। সফর শেষে বৃহস্পতিবার রাতেই তিনি দেশে ফিরে যাবেন।