প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে স্থগিত হওয়া প্রাথমিকের বৃত্তির ফল বুধবার (১ মার্চ) রাতে প্রকাশ করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই)। এতে মোট প্রাপ্ত বৃত্তির সংখ্যার পরিবর্তন হয়নি। ফলে আগের তালিকায় নাম থাকা অনেকেই সংশোধিত তালিকা থেকে বাদ পড়বে। কারিগরি ত্রুটির কারণে যোগ্য যারা বাদ পড়েছিলেন নতুন করে তারা তালিকায় যুক্ত হয়েছেন। এতে নতুন করে অনেকের মুখে হাসি ফুটলেও, অনেকের মুখ মলিন হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর জানিয়েছে, সংশোধিত ফলাফলই চূড়ান্ত ফলাফল। এতে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে ফলাফল চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ নেই। কারণ বৃত্তির ফলাফলে চ্যালেঞ্জ করার কোনো বিধান নেই।
ফল প্রকাশের পর রাতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সিনিয়র সিস্টেম এনালিস্ট অনুজ কুমার রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, নতুন করে সংশোধিত ফলাফলে মোট সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে মেধা তালিকার কিছু পরিবর্তন হয়েছে। আগের তালিকায় নাম ছিল নতুন তালিকায় অনেকেই বাদ পড়েছেন। আবার সংশোধিত তালিকায় নতুন করে অনেকের নাম এসেছে। এটি সবাইকে মেনে নিতে হবে।
এই ফলাফলে কেউ সংক্ষুব্ধ হয়ে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ আছে কি-না জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ ফলাফলে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ থাকলেও বৃত্তির ফলাফলে সেই সুযোগ নেই। তবে প্রকৃত মেধাবী ও যোগ্যরাই স্থান পেয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।
কতজন শিক্ষার্থীর ফলাফল পরিবর্তন হয়েছে তা এই মুহূর্তে বলা সম্ভব নয় উল্লেখ করে এ কর্মকর্তা বলেন, পুরো ফলাফলটি ম্যানুয়াল করে বলা সম্ভব হবে।
ডিপিই থেকে জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণির বৃত্তি পরীক্ষায় দেশের ৫ লাখ ৩৬২ জন নিবন্ধন করলেও সেখান থেকে ৪ লাখ ৮২ হাজার ৯০৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে ৮২ হাজার ৩৮৩ জনকে ট্যালেন্টপুল ও সাধারণ কোটায় বৃত্তি দেওয়া হয়। এর মধ্যে ট্যালেন্টপুলে (মেধাবৃত্তি) ৩৩ হাজার ও ৪৯ হাজার ৩৮৩ জন শিক্ষার্থী সাধারণ বৃত্তি পেয়েছে।
গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো জাকির হোসেন এ ফলাফল ঘোষণার চার ঘণ্টা পরেই কারিগরি বিপর্যয় ঘটায় ফলাফল স্থগিত করা হয়। এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হলে তা তদন্ত করে দেখতে ৪ সদস্যের কমিটি করা হয়।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের এ ‘দায়িত্বহীন কর্মকাণ্ডের’ জন্য এখন হাজারো শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা তৈরি হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মী মনজরুল আলম পান্না তার ফেসবুকে লেখেন, বাদ পড়ার পর শিক্ষার্থীদের কাছে কি জবাব দেবে প্রাথমিক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তাদের খামখেয়ালির কারণে শিশুরা যে ট্রমার মধ্যে পড়বেন এ দায়ভার কে নেবে।
ছোট্ট একটি মন্ত্রণালয় প্রায় ৫ লাখ পরিবারকে যে ভয়ঙ্কর দুশ্চিন্তার ফেলেছেন, শতশত শিশু ট্রমার মধ্যে চলে গেছে, তার জবাব দেয়ার মতো কি এই দেশ-সরকার বা রাষ্ট্রে কেউ আছে? সবকিছু নিয়ে তামাশা করতেই হবে এতোটাই উদাসীন বলে আক্ষেপ করেন।
কার ফলাফল পরিবর্তন হয়ে যাবে সেটি নিয়ে অভিভাবক-শিক্ষার্থীরা দুশ্চিন্তার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন বলে অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।
এদিকে মঙ্গলবার ফলাফল প্রকাশের দেখা যায়, পরীক্ষায় অংশ না নিয়ে বৃত্তি পেয়েছেন পেয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। বগুড়ার গাবতলী উপজেলার পাঁচপাইকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য নিবন্ধন করেছিল এক শিক্ষার্থী। কিন্তু সে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি। কিন্তু তাকেও বৃত্তি (সাধারণ কোটা) পাওয়ার তালিকায় রাখা হয়েছে। এ রকম আরও ঘটনা ঘটেছে।
পুরো বিষয়টির জন্য দুঃখ প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক উত্তর কুমার দাশ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০০৯ সালে সর্বশেষ এ ধরনের বৃত্তির ফলাফল তৈরি হয়েছিল। দীর্ঘ ১২ বছর পর এবার প্রায় একই ধরনের বৃত্তির ফলাফল তৈরি হয়েছে। এবার বিষয়সহ বেশ কিছু জিনিস নতুন ছিল। কোডিং সংক্রান্ত সমস্যার কারণে এমনটি হয়েছে। তালিকা নাম আসার পর যারা বাদ পড়েছে তারা স্বাভাবিকভাবে কষ্ট পাবেন এটাই স্বাভাবিক। তাদের কাছে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা ফলাফলে এ ধরনের সমস্যা হয়েছিল। সরকারি কর্ম কমিশনের ফলাফলে একবার এমন সমস্যা হয়েছিল। এ ধরনের সমস্যা সাময়িক, ফলাফল তৈরিতে কোনেরা সমস্যা হয় না বলেও জানান তিনি। তার দাবি, এই প্রযুক্তিগত সমস্যা এর আগে কখনো হয়নি ডিপিইতে। এটা আমাদের একটা লার্নিং। ভবিষ্যতে এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে কাজ করবে কমিটি।
যেভাবে বৃত্তির ফল তৈরি হয়
ফলাফল তৈরি সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানান, বৃত্তি পরীক্ষা গ্রহণের পর জেলা শিক্ষা অফিসে শিক্ষার্থীদের উত্তরপত্রে কোড দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষকরা সেই খাতা মূল্যায়ন করেন। ফলে কার খাতা কোনটি তা বোঝা যায় না। কিন্তু মূল্যায়নের পর প্রাপ্ত নম্বর কোড অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীর রেজিস্ট্রেশন নম্বরে যোগ হয়। শেষের প্রক্রিয়াকে বলা হয় ডিকোডিং। এই কোডিং ও ডিকোডিং প্রক্রিয়ায় ভুল হয়েছে। ঝিনাইদহের শৈলকুপাসহ কয়েকটি উপজেলায় সব শিক্ষার্থীকে একই কোড নম্বর দেওয়া হয়েছে বলে ডিপিইর কম্পিউটার সেলে ধরা পড়েছে। এ কারণে সারা দেশের ফল পুনরায় যাচাই করার জন্য ফল স্থগিত করা হয়।