বিদেশি নাগরিকদের বেতন-ভাতায় বছরে প্রায় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে, যা দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দৈন্য ও দক্ষ মানবসম্পদের অভাবকেই ফুটিয়ে তুলছে। এজন্য মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে মনোযোগী হতে হবে।
‘এলডিসি হতে বাংলাদেশের উত্তোরণ ও প্রস্তুতি’ শীর্ষক ওয়েবিনারে বক্তাদের বক্তব্যে এসব তথ্য উঠে আসে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
‘বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট সামিট ২০২১’ শীর্ষক সপ্তাহব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্মেলনের তৃতীয় দিনে এ ওয়েবিনারের আয়োজন করা হয়। সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, আমাদের রফতানিমুখী পণ্যের বহুমুখীকরণ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হচ্ছে না। দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মসংস্থানের কোনো বিকল্প নেই, তবে আরও বেশি হারে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করতে হলে আমাদের অবশ্যই দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে তৎপর হতে হবে।
সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি নাগরিকদের বেতন-ভাতায় প্রায় পাঁচ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ হচ্ছে, যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার দৈন্য ও দক্ষ মানবসম্পদের অভাবকেই ফুটিয়ে তুলছে, এমতাবস্থায় আমাদেরকে অবশ্যই মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করার প্রতি মনোযোগী হতে হবে।
তিনি বলেন, চামড়া ও পাদুকাখাতে ভিয়েতনাম ও বাংলাদেশ ৯০-এর দশকে একইসঙ্গে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে ভিয়েতনাম প্রায় ১৬-১৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ফুটওয়্যার পণ্য রফতানি করে, বিপরীতে আমরা মাত্র এক বিলিয়ন ডলারের ফুটওয়্যার পণ্য রফতানি করছি এবং শুধুমাত্র যৌথ বিনিয়োগ ও নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমেই ভিয়েতনাম তা অর্জনে সক্ষম হয়েছে। চামড়া ও ফুটওয়্যার খাতের উন্নয়ন ও যৌথ বিনিয়োগ আকর্ষণে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক অগ্রগতির ধারাবাহিকতার পাশাপাশি বাণিজ্য ও বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়নে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। দেশের বেসরকারি খাতের ওপর সরকারের আস্থা ও বিশ্বাস দুটোই অত্যন্ত বেশি। বেসরকারি খাতের সহযোগিতায় স্বল্প সময়ে আমরা বিদ্যুৎ খাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সাধন করেছি। যার সুফল দেশের জনগণ ভোগ করছে।
বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, এলডিসি থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ পণ্য রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবে, যা কিনা আমাদের রফতানিকে ব্যাহত করতে পারে। এ অবস্থায় পণ্য উৎপাদনে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, মানবসম্পদের দক্ষতা উন্নয়ন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক কমপ্লায়েন্স নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ়করণ, স্থানীয় বাজারের সম্প্রসারণ এবং বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক নীতিমালার সংস্কার প্রভৃতি বিষয়ের ওপর আরও বেশি মনোযোগ দিতে হবে।
তৌফিকুর রহমান বলেন, এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সর্বোচ্চ রফতানিকারক দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশসমূহেই বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি রফতানি করে থাকে। এ অবস্থায় সবার সর্বাত্মক অংশগ্রহণে আমাদের এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।